এলসি হল্যাণ্ডকে দেখে বেশ ভাল লাগল। খুবই বাস্তবমুখী আর দয়ালু।
মেগানকে পাওয়া গেল ওপরের বসার ঘরে। চোখমুখ দেখে বোঝা গেল, খুব কেঁদেছে। ওকে বললাম, আমরা তোমাকে নিতে এসেছি, আমাদের ওখানে কয়েকদিন থেকে আসবে চল।
মেগান খুশিই হল। ও তার কয়েকটা পোশাক আর টুকিটাকি জিনিস একটা সুটকেসে গুছিয়ে নিল।
যোয়ানা মিঃ সিমিংটন ও মিস হল্যাণ্ডকে কথাটা জানিয়েছিল। তারাও কেউ কোন আপত্তি করলেন না মেগানকে আমাদের বাড়িতে নিতে চাইছি বলে।
এরপর সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মেগানকে নিয়ে আমরা গাড়িতে উঠলাম।
.
০৫.
করোনারের তদন্তের অনুষ্ঠান হলো তিনদিন পরে।
মিসেস সিমিংটনের মৃত্যুর সময় সম্পর্কে জানানো হলো বিকেল তিনটে থেকে চারটের মধ্যে।
ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে একাকী ছিলেন। মিঃ সিমিংটন অফিসেই ছিলেন, পরিচারিকা তার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল বলে বাইরে গিয়েছিল।
এলসি হল্যাণ্ড বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছিল।
আর মেগান যেমন করে থাকে, সাইকেল নিয়ে বাইরে গিয়েছিল।
চিঠিটা এসেছিল সেদিন বিকেলের ডাকেই। মিসেস সিমিংটনই নিশ্চিত চিঠিটা বাক্স থেকে বের করেছিলেন। সেটা পড়ার পরই তার মানসিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল। তিনি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
ঘাস আর বোলতার চাকের জন্য বাগানে সায়ানাইড রাখা ছিল। তাই তিনি জলে মিশিয়ে পান করে ফেলেন। তার আগে তিনি একটা কাগজে তাঁর অন্তিম বক্তব্য লিখে রেখে যান-এভাবে আর চলতে পারছি না।
করোনার ভদ্রলোক, খুবই ভদ্র আর বিবেচক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি জানালেন, যারা এই ধরনের জঘন্য বেনামী চিঠি লিখে থাকে তাদের নৈতিক চেতনা বলে কিছু থাকে না, তাদের সব কথাই কদর্য মিথ্যায় পূর্ণ।
নৈতিক বিচারে এরা হত্যার অপরাধে অপরাধী। সকলেরই তাদের নিন্দা করা উচিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পুলিশ অবিলম্বেই অপরাধীকে গ্রেপ্তার করার ও যথাযথ শান্তির ব্যবস্থা করবে। আইন অনুসারে, এই সব সামাজিক অপরাধীদের চরম শাস্তি হওয়া দরকার।
জরিরাও করোনারের বক্তব্য সমর্থন করে তাদের রায় জানালেন–সাময়িক ভাবে মানসিক বিভ্রান্তির পরিণতিতেই আত্মহত্যার-ঘটনা ঘটেছে।
তদন্তের পরদিন সকালে এমি গ্রিফিথ এলেন আমাদের বাড়িতে। আমি একাই ছিলাম। যোয়ানা আর মেগান বাইরে গিয়েছিল।
-সুপ্রভাত মিঃ বার্টন। এমি গ্রিফিথ বললেন, শুনলাম, মেগান হান্টার আপনাদের এখানে এসে আছে?
বললাম, হ্যাঁ, তাকে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছি।
-খুবই ভাল কাজ করেছেন। আমি বলতে এসেছিলাম, ও ইচ্ছে করলে আমাদের কাছেও এসে থাকতে পারে। ওকে আমি কাজকর্মের মধ্যে আটকে রাখতে পারব।
–আপনার অনেক দয়া। ও আমাদের সঙ্গে বেশ ভালই আছে।
কথায় কথায় মিস এলসি তার নিজের বিষয় গার্ল গাইডের প্রসঙ্গে চলে এলেন। মেগান মেয়েটা চূড়ান্ত অলস হয়ে পড়ছে। এতদিনে ওর পক্ষে কোন কাজ নিয়ে থাকা উচিত ছিল। গাইডের কাজও মেয়েদের পক্ষে অনেক ভাল।
আমি হ্যাঁ হু করে কোন রকমে সায়কেটে যেতে লাগলাম।
একসময় মিস এমি গ্রিফিথ বললেন, মিসেস সিমিংটন সম্পর্কে ভাল ধারণা আমার কোন কালেই ছিলনা। আর আসল সত্যটা নিয়ে আমার একবারও সন্দেহ হয়নি।
–আসল সত্য মানে? আমি তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলে উঠলাম।
–তদন্তের সময় যেসব কথা জানা গেল অর্থাৎ মিঃ সিমিংটন যা বললেন।
–কিন্তু তিনি তো বারবারই বলেছেন বেনামী চিঠির কোন কথাই সত্য নয়।
–তা অবশ্য বলেছিলেন। স্ত্রীর হয়ে সব ভদ্রলোককেই ওরকম বলতে হয়। মিঃ সিমিংটনকে আমি অনেক দিন ধরেই চিনি। অহঙ্কারী আর খুবই চাপা মানুষ। তার পক্ষে ঈর্ষাপরায়ণ হওয়া অসম্ভব নয়।
–তাহলে তো পরিষ্কারই বোঝা যাচ্ছে মিসেস সিমিংটন কেন চিঠির বিষয় স্বামীকে জানাতে ভয় পেয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, ঈর্ষাপরায়ণ মানুষ হওয়ায়, মিঃ সিমিংটন তার কোন কথা মেনে নেবে না।
মিস গ্রিফিথ মনে হলো আমার কথা শুনে চটে গেলেন। তিনি বললেন, তাহলে কি আপনি মনে করেন, একটা মিথ্যা অভিযোগের জন্য তিনি সায়ানাইড গিলে মরে গেলেন?
করোনারও তো তাই বললেন। চরম মানসিক আঘাতের ফলেই
-বাজে কথা রাখুন। কোন নির্দোষ মহিলা এরকম মিথ্যা ভরা বেনামী চিঠি পেলে গ্রাহ্যের মধ্যেই আনতো না। আমি হলে তো হেসেই উড়িয়ে দিতাম।
এবারে আমি হেসে বললাম, বুঝতে পেরেছি, আপনিও তাহলে একখানা বেনামী চিঠি পেয়েছিলেন?
এক মিনিট চুপ করে রইলেন এমি গ্রিফিথ। পরে ইতস্তত করে বললেন, ইয়ে–হ্যাঁ, পেয়েছি। কোন উম্মাদেরই কাণ্ড হবে। দু-চার লাইন পড়ার পরেই বাজে কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দিই।
–আপনার পুলিসকে ব্যাপারটা জানানো উচিত ছিল।
আমাদের কথাবার্তা খুবই একঘেয়ে হয়ে পড়েছিল। তাই ইচ্ছে করেই মেগানের প্রসঙ্গ তুললাম।
–ভালকথা, মেগানের নিজের খরচপত্র মেটানোর ব্যাপারে কি ব্যবস্থা আছে, আপনার কোন ধারণা আছে?
-বাইরের কারো সাহায্য ওর না হলেও চলবে। যতদূর জানি, ওর ঠাকুমা, মিঃ হান্টারের মা, মেগানকে কিছু মাসোহারা দিয়ে গেছেন। তাছাড়া মিঃ সিমিংটনও নিশ্চয় হাতখরচা বাবদ কিছু ব্যবস্থা করে থাকবেন। তবে ও যেরকম বেয়াড়া, ওর জীবনটা কাজে লাগাতে পারবে বলে সন্দেহ হয়।
আরও দু-চার কথা বলে মিস এমি গ্রিফিথ বিদায় নিলেন। মহিলার ওই পল্লবগ্রাহী স্বভাব আর মেগান সম্পর্কে হতাশার মনোভাব আমার খুবই খারাপ লাগল।