আমি মেগানকে বললাম, তুমি ভেতরে যাও, ওপরের বাথরুমে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নাও।
মেগান অতিবাধ্য বালিকার মতো উঠে ভেতরে চলে গেল।
-মেগান আজ আমাদের সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজে আসছে। বললাম আমি।
-তাই নাকি, খুব ভাল কথা। তাহলে আমিও ভেতরে যাই–হাতমুখ ধুয়ে আসি।
আমি একা বারান্দায় বসে বেচারী মেগানের কথাই ভাবতে লাগলাম।
.
০৪.
ভাইকার ডেন ক্যালথ্রপ আর মিসেস ক্যালথুপের কথা এতক্ষণ কিছু বলা হয়নি। অথচ তারা উভয়েই বিশিষ্ট ব্যক্তি।
ডেন ক্যালথ্রপ মানুষ হিসেবে চমৎকার, সারাক্ষণ বইয়ের মধ্যেই প্রায় ডুবে থাকেন। গির্জার প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে তার অগাধ জ্ঞান।
অন্যদিকে মিসেস ক্যালথ্রপও দৃঢ় চরিত্রের এক অসাধারণ মহিলা। তিনি সাধারণত অন্যের ব্যাপারে নাক গলান না। কিন্তু সব ব্যাপার জেনে নেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তার। গ্রামের সকলেই তাকে কেমন যেন ভয় পায়।
মেগান যেদিন আমাদের এখানে মধ্যাহ্নভোজে আসে তার পরদিন মিসেস ক্যালগ্রুপের সঙ্গে হাই স্ট্রিটে আমার দেখা হয়।
–ওহ মিঃ বারটেন, আপনাকে একটা ব্যাপার জিজ্ঞাসা করবার ছিল। বেনামী-চিঠির কি এক গল্প চালু করেছেন শুনলাম।
আমি বাধা দিয়ে বললাম, আমি চালু করিনি কিছু, আগে থেকেই ব্যাপারটা ছিল।
-আগে থেকেই ছিল বলছেন? কিন্তু এখানে এসব করবার মতো কেউ আছে বলে তো জানি না।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ চুপ করে গেলেন তিনি। তারপর আকাশেৰ দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে কি দেখতে দেখতে বললেন, হাস্যকর সব চিঠি–একেবারেই অবাস্তব।
আমি ইতস্তত করে বললাম, আপনিও কি–ইয়ে–মানে–এরকম চিঠি পেয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, তিনটে চিঠি পেয়েছি। হাস্যকর সব কথা লেখা ছিল–ক্যালের আর স্কুলের শিক্ষিকাকে নিয়ে কিন্তু আমি ভাল রকমই জানি ক্যালেরে ওরকম কাজ করা কোন কালেই সম্ভব নয়। তবে ওরা যা লিখছে–এসব যে গ্রামে কিছু হচ্ছে না তা নয়
-তার মানে আপনি বলছেন ওরা সত্য কথাগুলো জানে?
-হ্যাঁ। এখানে যে ব্যাভিচার বা লজ্জাজনক কিছু ঘটনা তা তো নয়। অনেক ব্যাপারই গোপনে ঘটে চলেছে। আপনার চিঠিতে কি লিখেছিল?
–লেখা ছিল আমি আর যোয়ানা ভাই বোন নই।
–কিন্তু ও তো আপনার বোন
–হ্যাঁ, যোয়ানা আমার বোন।
–তবে অন্য কিছু থাকা অসম্ভব নয়।
ঠিক এই সময়ে চোখে পড়ল এমি গ্রিফিত ইন্টারন্যাশনাল স্টোর্সে ঢুকছেন।
মিসেস ক্যালথ্রপও তাকে দেখলেন, অনুকম্পাসূচক মন্তব্য করলেন বেচারি। পরক্ষণে আমার দিকে ফিরে বললেন, কিন্তু এসব ব্যাপার মোটেই ভাল না। একেবারে অন্ধ ঘৃণা…জেনে রাখবেন এ হলো দারুণ ঘৃণার ব্যাপার।
মিসেস ক্যালথ্রপ সেদিন যে ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তার প্রমাণ পেতে একদিনও দেরি হল না আমাদের।
বেদনাদায়ক ঘটনাটার কথা পারট্রিজই প্রথমে আমাদের জানাল।
সকালে চায়ের ট্রে টেবিলে রাখতে রাখতে ও বলল, ভয়ঙ্কর একটা ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকেলে বেচারি মিসেস সিমিংটন মারা গেছেন?
মারা গেছেন? কি বলছ? যোয়ানা শঙ্কিত কণ্ঠে জানতে চাইল।
–হ্যাঁ। মারা গেছেন। তবে আত্মহত্যা করেছেন। কথাটা সত্যিই, মিস।
–ওহ। যোয়ানা স্তম্ভিত হয়ে গেল, মিসেস সিমিংটন আত্মহত্যা করেছেন, এতো ভাবাই যায় না।
সেই বিচ্ছিরি চিঠি, পারট্রিজ বলল, কিন্তু যতই জঘন্য হোক এসব, এর জন্য একজন মানুষ কেন আত্মহত্যা করবে? সত্যি কিছু না থাকলে এমন হয় না মিস।
বেশ কিছুদিন আগে ওয়েন গ্রিফিথের বলা কথাটা আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন, শিগগিরই এসব নিয়ে খারাপ কিছু ঘটতে পারে। দেখছি তাই সত্যি হল।
–মেগান মেয়েটার এখন কি হবে? ওর জন্য বড় চিন্তা হচ্ছে–একমাত্র অবলম্বন ছিল মা। যোয়ানা বলল।
অন্য বাচ্চাদের তাদের গভর্নেসই সামলে রাখতে পারবে। কিন্তু মেগানের পক্ষে মানিয়ে চলা এখন খুবই কষ্টকর হবে। বললাম আমি।
প্রাতরাশের পরে আমরা দু ভাইবোন মিলে মিঃ সিমিংটনের বাড়ি গেলাম। সেখানে ডাঃ গ্রিফিথের সঙ্গেও দেখা হল। মিঃ সিমিংটন একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন দেখলাম। মিস হল্যাণ্ড যথাসাধ্য করে বাচ্চাগুলোকে সামলাচ্ছেন।
জানা গেল, গতকাল বিকেলের ডাকে চিঠিটা এসেছিল। অভিযোগ ছিল, তাদের দ্বিতীয় ছেলেটি নাকি সিমিংটনের নয়।
এই চিঠি পেয়েই একেবারে ভেঙ্গে পড়েন মিসেস সিমিংটন। তিনি একটা কাগজে লিখে রেখে গেছেন, এভাবে আর চালাতে পারছি না।
–এসব বিষ মাখানো চিঠি–এবারে ঠিক লক্ষভেদ করেছে। বলল যোয়ানা।
গ্রিফিথ বললেন, উনি অবশ্য কিছুদিন থেকে ভুগছিলেন। আমিই চিকিৎসা করছিলাম। এটা অসম্ভব নয়, এমন একটা চিঠি পাবার পর মানসিক আঘাতটা সামলাতে পারেননি। নিজেকে শেষ করে দেবার পথই বেছে নেন। হয়তো ভেবেছিলেন, স্বামী তার কথা বিশ্বাস নাও করতে পারেন। যে কোন মহিলার পক্ষেই এই ধরনের অভিযোগ খুবই লজ্জার।
ডাঃ গ্রিফিথ বিদায় নিলে আমি আর যোয়ানা মিঃ সিমিংটনের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি জবুথবু হয়ে একটা চেয়ারে বসে ছিলেন। এলসি হল্যাণ্ড প্রায় জোর করে এক কাপ চা তার হাতে ধরিয়ে দিল।
-সকাল থেকে কিছু মুখে দেননি। এভাবে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। এই চাটুকু খেয়ে নিন।
–আপনি খুবই দয়ালু মিস হল্যান্ড। আপনি যা করছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
বললেন মিঃ সিমিংটন।
ওসব কথা থাক। আমি আমার কর্তব্য করছি মাত্র। বাচ্চাদের জন্য ভাববেন না, আমি ওদের দেখে রাখছি। চাকর বাকরদের ব্যাপারটাও দেখছি। আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। নিজেকে শক্ত করে তুলুন।