বিট্রিস বারবার জর্জকে বোঝাবার চেষ্টা করেছেন, চিঠির কথা একেবারে মিথ্যা। তাতে জর্জ আরও ক্ষেপে আগুন হয়েছে। এরপরই নিরুপায় হয়ে মিসেস বেকার আমার কাছে ছুটে এসেছেন।
আমি খুবই দুঃখিত হলাম ঘটনাটা শুনে। মিসেস বেকারকে পরামর্শ দিলাম পুলিসের কাছে। যেতে। পুলিস ছাড়া এসব নোংরা চিঠি লেখা বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
–ও বাবা। পুলিসের কাছে যেতে পারব না স্যর। কোনদিন যাইনি আমরা কেউই। বললেন মিসেস বেকার।
পরে তিনি আবার বললেন, খুবই খারাপ ব্যাপার হচ্ছে স্যর এসব। ব্ল বোরের মিঃ আর মিসেস বিডলও এরকম চিঠি পেয়েছেন। খুবই সুখী মানুষ ছিলেন তারা। কিন্তু ওই চিঠি পাবার পর ভদ্রলোক কেমন যেন হয়ে গেছেন।
আমি এই সুযোগে জানতে চাইলাম, এসব ভয়ানক নোংরা চিঠি কে লিখছে এ বিষয়ে তার কোন ধারণা আছে কিনা।
-ধারণা বেশ ভালরকমেই আছে স্যর। বললেন, মিসেস বেকার, মিসেস ক্লিটের কাজ, আমরা সবাই তাই জানি।
সন্দেহ ভাজন মিসেস ক্লিটের পরিচয়ও তার কাছ থেকে জানা গেল। মহিলা একজন মালীর স্ত্রী। কারখানায় যাওয়ার রাস্তাতেই তার বাড়ি।
কি কারণে মিসেস ক্লিটকে সন্দেহ করা হচ্ছে সে সম্পর্কে অবশ্য কিছুই জানা গেল না মিসেস বেকারের কাছ থেকে।
তিনি শুধু বললেন, এসব করার মতোই লোক তিনি।
যাইহোক, শেষ পর্যন্ত আর একবার পুলিসের কাছে যাবার পরামর্শ দিয়ে মিসেস বেকারকে বিদায় করলাম। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে খুবই ভাবনা দেখা দিল আমার। ক্লিট নামের স্ত্রীলোকটির বিষয়ে খবরাখবর নিতে হবে স্থির করলাম। গ্রামের সবাই যখন তাকে দায়ী ভাবছে, কথাটা কতটা সঠিক একবার অনুসন্ধান করা দরকার।
ডাঃ গ্রিফিথ ওই মিসেস ক্লিটকে অবশ্যই চিনতে পারবেন। ঠিক করলাম তার কাছেই জানতে চাইব। তেমন মনে করলে ব্যাপারটা পুলিসের গোচরে আনতে হবে।
আমি যখন ডাঃ গ্রিফিথের সার্জারিতে ঢুকলাম তখন তিনি শেষ রোগীটিকে দেখছেন।
কাজ শেষ হয়ে গেলে আমি তাকে মিসেস বেকারের সঙ্গে আমার কথাবার্তার বিষয় সংক্ষেপে জানালাম। মিসেস ক্লিট সম্পর্কে গ্রামের সকলের ধারণার কথাও বললাম।
-ব্যাপারটা এত সহজ নয় মিঃ বারটন। ক্লিট নামের স্ত্রী লোকটি ওসব চিঠি চাপাটির পেছনে আছে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
আমাকে হতাশ করে বললেন গ্রিফিথ।
পরে তিনি জানালেন, মিসেস ক্লিট হলেন স্থানীয় ডাইনী। আজকালকার যুগেও কোন বিশেষ লোক বা বিশেষ পরিবার সম্পর্কে নানা কারণেই মানুষের মনে একটা অন্ধ কুসংস্কার গেঁথে যায়। লোকেরা এমন বিশেষ মানুষ বা পরিবারকে এড়িয়ে চলবারই চেষ্টা করে, তারা ভাবে এদের কোনভাবে অসন্তুষ্ট করলে নিজেদের ক্ষতি হবে।
মিসেস ক্লিট এক অদ্ভুত প্রকৃতির স্ত্রীলোক। গ্রামে কারোর কোন অমঙ্গল বা ক্ষতি হলে তিনি আগ বাড়িয়ে জাহির করেন, কবে তার গাছ থেকে আপেল ছিঁড়েছিল কিংবা তার বেড়ালের লেজ ধরে টেনেছিল, সেজন্যই এমনটি ঘটল। এমনি সব কারণেই সকলে তাকে খানিকটা বিদ্বেষের চোখে দেখে।
আর এসব চিঠির পেছনেও সে আছে, এমনটাও এই কারণ থেকেই সকলে ভাবছে। তবে ব্যাপারটা আমার মোটেও ভাল লাগছে না। মনে হচ্ছে এই চিঠির ঘটনা থেকে শিগগিরই কোন ক্ষতি হতে চলেছে।
.
বাড়ি ফিরে দেখলাম মেগান বারান্দায় বসে আছে। আমাকে দেখে বললো, হ্যাল্লো, আমি কি আজ মধ্যাহ্নভোজে আসতে পারি?
–নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, আমি বললাম।
আমি ওকে বসতে বলে ভেতরে গিয়ে পারট্রিজকে তিন জনের মতো খাবার তৈরি করতে বলে এলাম।
–সব ঠিক আছে তো? যদি কিছু তৈরি করতে অসুবিধা হয়, আমিও হাত লাগাতে পারি।
–কোন দরকার হবে না। তুমি শান্ত হয়ে বোস, আইরিশ স্টু বানানো হচ্ছে।
–আপনি খুব ভাল।
একটু থেমে পরক্ষণেই আবার বলল, আপনিও কি সকলের মতোই ভাবেন আমি অদ্ভুত রকমের একটা মেয়ে?
-কেন তা ভাবব কেন?
কারণ আমি যে তাই। তবে আমি বোকা নই। ওরা জানে না আমার ভেতরটাও ওদেরই মতো আর আমি ওদের মন থেকে ঘেন্না করি।
–ঘেন্না কর? কিন্তু কেন?
–আমার জায়গায় থাকলে আপনিও তাই করতেন। আপনি ঘেন্না না করে পারতেন না। মেগানের ভেতরের বঞ্চিত বিষণ্ণ সভা ধীরে ধীরে আমার কাছে প্রকাশিত হয়ে আমার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে লাগল।
বিষণ্ণ দৃষ্টি মেলে আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
–জানেন, আমাকে কেউ চায় না। আমি তা বেশ ভালই বুঝতে পারি। মা আমাকে মোটেই পছন্দ করে না। কেন তাও আমি জানি। আমাকে দেখে মার মনে পড়ে যায় বাবার কথা। আমি শুনেছি বাবা মার প্রতি খুব নিষ্ঠুর ব্যবহার করতেন। মুখে তিনি ওসব বলতে পারেন না, কিন্তু আমাকে এভাবে ভুগতে হয়। আমি বুঝতে পারি, মা কেবল চান তার বাচ্চাদের আর সৎ বাবাকে নিয়ে থাকতে।
–তুমি কোথাও গিয়ে নিজের মতো থাকলেই তো পার। বললাম আমি।
–তাহলে তো আমাকে রোজগারের জন্য কোন কাজ করতে হয়। কিন্তু কি করব?
–কেন, শর্টহ্যাণ্ড, টাইপ এমনি কিছু শিখে নিতে তো পার।
–ওসব আমার ভাল লাগে না। কিন্তু—
কিন্তু কি–
দুটি জলে ভরা চোখ তুলে আমার দিকে তাকাল মেগান। ধীরে ধীরে বলল, আমি কেন সরে যাব? ওরা কেন আমাকে চাইবে না? আমি ওদের সঙ্গেই থাকব আর ওদের দুঃখ দিয়ে যাব।
একটু পরেই যোয়ানা ফিরল। গায়ের স্কার্ফ খুলে আমার পাশে বসতে বসতে বলল, গরমে একেবারে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আজ বেশ কয়েক মাইল হাঁটলাম। কি ব্যাপার, মেগানের মুখ অমন থমথমে কেন?