আরও কিছু কথাবার্তার পর আমরা শুভরাত্রি জানিয়ে উঠে পড়লাম।
.
দুদিন পরে শনিবারের বিকেলে আমরা সিমিংটনদের বাড়িতে ব্রিজখেলার আসরে যোগ দিলাম।
সেখানে খেয়োলাড় হিসেবে পেয়েছিলাম আমরা দুজন, সিমিংটন দম্পতি, মিস গ্রিফিথ, মিঃ পাই, মিস বার্টন আর কর্নেল অ্যাপলটন।
কর্নেলের সঙ্গে সেদিনই পরিচিত হলাম। তিনি থাকেন সাতমাইল দূরের কুম্বত্রকার নামে এক গ্রামে। ভদ্রলোক ব্রিজ খেলতে খুবই ভালবাসেন। বয়স ষাটের কাছাকাছি। যোয়ানাকে দেখে তিনি এতই মুগ্ধ হন যে খেলার ফাঁকে ফাঁকেই ওর দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিলেন। আমার সুদর্শনা বোন যে তার মন হরণ করেছে, তাতে কোন সন্দেহ ছিল না।
সিমিংটনদের নার্সারী গভর্নেস সেই এলসি হল্যাণ্ডকে সেদিন কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেলাম। তবে তার রূপের সম্মোহন আগের মত প্রভাবিত করতে পারেনি। তার রূপ আর সুগঠিত দেহের অপচয় খুবই অসহনীয় ঠেকছিল।
মেয়েটির কথাই যে নিরুত্তাপ আর সাদামাটা তাই নয়, দাঁত প্রায় সমাধি প্রস্তরের মতো আর হাসলে মাড়ি বেরিয়ে পড়ে। এসব দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি।
আমরা যখন খেলতে বসেছি, তার কিছু পরেই বাচ্চাদের নিয়ে লঙব্যারেজে বেড়াতে চলে গেল। মিসেস সিমিংটনকে বলে গেল–অ্যাগনেসকে বলে গেছি, পাঁচটায় চা দিতে।
আমাদের সম্মানেই খেলার আয়োজন হয়েছিল। তাই আমি আর যোয়ানা বসেছিলাম, মিসেস সিমিংটন মিঃ পাইয়ের বিপক্ষে।
ঠিক পাঁচটাতেই ডাইনিংরুমে একটা বড় টেবিলে আমাদের চা পরিবেশন করা হয়েছিল। আমাদের চা পানের ফাঁকেই হাসিখুশি দুটি বাচ্চা লাফাতে লাফাতে ঘরে ঢুকল। সিমিংটন দম্পতি বেশ আনন্দ ও গর্বের সঙ্গে বাচ্চাদের পরিচয় দিলেন।
একটু পরেই মেগান এসে ঘরে ঢুকল। ও আমাদের সঙ্গে নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে করমর্দন করল। তাকে দেখে মিসেস সিমিংটন বলে উঠলেন, এই তো মেগান এসে গেছে। তোর চা বাচ্চারা আর মিস হল্যাণ্ড নিয়ে নিয়েছে।
-ঠিক আছে, আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি।
মেগান ঘর ছেড়ে চলে গেল। আজও চোখে পড়ল, সেদিনের মতোই অপরিচ্ছন্ন পোশাক মেগানের গায়ে।
ঠিক সেই মুহূর্তে কি জানি কেন মিসেস সিমিংটনের দিকে তাকিয়ে আমার মন বিতৃষ্ণায় ভরে উঠল। মহিলাকে আমার খুবই নির্দয় আর স্বার্থপর বলে মনে হল।
বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে বসে যোয়ানা একসময় বলল, মেয়েটার জন্য আমার খুবই দুঃখ হয়। বড় অবহেলিত।
-তুই লক্ষ্য করেছিস তাহলে?
-হ্যাঁ। ওর মা ওকে পছন্দ করে না, বোঝা গেল। ওকে যে পরিবার থেকে আলাদা ভাবা হচ্ছে, এই ব্যাপারটা মেগানের বুঝতে না পারার কথা নয়। খুবই সবেদনশীল মেয়ে। মেয়েটা ভেতরে ভেতরে খুবই অসুখী–বাইরের হৈচৈ দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে।
–ঠিকই বলেছিস, আমারও তাই মনে হয়। বললাম আমি।
পাহাড়ী পথে গাড়ি ছুটে চলেছে। যোয়ানা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলল, একটা ব্যাপার আমার খুব ভাল লাগল দেখে। জীবনীশক্তি ফিরে আসার লক্ষণ তোর মধ্যে ফুটে উঠেছে।
–বুঝতে পারছি না কি বলতে চাইছিস। বললাম আমি।
-নার্সিংহোমে থাকার সময় এক সুন্দরী নার্স তোর সেবা করত। তুই তার দিকে একবারও তাকিয়ে দেখিসনি। কিন্তু আজ দেখলাম, যতবার গভর্নেস মেয়েটির দিকে তাকিয়েছিস, ততবারই তার মুখে পুরুষসুলভ খুশির ভাব ফুটে উঠছিল। মেয়েটা দেখতে ভাল, সন্দেহ নেই। তবে তার মধ্যে যৌন আবেদন বলে কিছু নেই। খুবই অদ্ভুত।
–তুই নিজের কথা ভাব, যোয়ানা। বললাম আমি।
–কেন আমি আবার কি করলাম?
করিসনি। তবে যা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে, পলের কথা ভুলে গিয়ে তোকে ডাঃ ওয়েন গ্রিফিথের দিকেই হাত বাড়াতে হবে। কর্নেল ভদ্রলোকের বয়সটা নেহাই বেশি, নইলে যেভাবে ক্ষুধার্ত ব্লাড হাউণ্ডের মতো তোর দিকে তাকাচ্ছিলেন
তাই করছিলেন বুঝি, হেসে উঠল যোয়ানা, এমিও তার দিকে বন্দুক তাগ করতে চাইবে আমার ধারণা।
ভুলে গেলে চলবে না যোয়ানা, আমরা এখানে এসেছি নিরিবিলিতে অবকাশ যাপন করতে। আমাদের তা বজায় রাখতে হবে।
.
নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ভোগ করার ভাগ্য নিয়ে আমরা যে লিমন্টকে আসিনি দিনে দিনে তা স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল।
সপ্তাহ খানেক পরে আমাদের ছাড়িয়ে দেওয়া কাজের মেয়েটি, বিট্রিসের মা মিসেস বেকার এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে।
তাকে আমার চেনার কথা নয়। পারট্রিজই তাকে নিয়ে এল আমার কাছে।
ভদ্রমহিলা বেশি বিনয় প্রকাশ করতে গিয়ে তার বক্তব্য এমন গুলিয়ে ফেলছিলেন যে তার সারোদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল আমার পক্ষে।
যোয়ানা কি কাজে বাইরে গিয়েছিল। তাই আমাকেই সামাল দিতে হচ্ছিল ব্যাপারটা।
যাই হোক, শেষ পর্যন্ত মোদ্দা কথাটা বোঝা গেল, মিসেস বেকার আমার পরামর্শ নিতে এসেছেন। তার ধারণা, আমরা লণ্ডনের শিক্ষিত ভদ্রমানুষ, তার মেয়ের ব্যাপারটা কি করা উচিত আমিই ভাল বলতে পারব।
সেই বেনামী চিঠি পাবার পর মেয়েকে তিনিই কাজটা ছাড়ার কথা বলেছিলেন তাই করেছিল সে। এখন আর এক মুশকিলে পড়েছে ব্রিট্রিস।
খামারে কাজ করে, জর্জ নামে একটি ছেলের সঙ্গে বিট্রিসের ভাব আছে। সেই ছেলেটিও ইতিমধ্যে একটি চিঠি পেয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে বিট্রিস নাকি কোন এক ফ্রেড লেডবেটারের ছেলে টমের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে।
চিঠি পাবার পর জর্জ ক্ষেপে আগুন হয়ে গেছে। সে বলেছে বিট্রিস অন্য ছেলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা সে সহ্য করবে না।