-কিন্তু অ্যাগনেসকে খুন করার তো কোন প্রয়োজন ছিল না। যোয়ানা বলল।
–প্রয়োজন ছিল না ঠিকই। কিন্তু তার অপরাধী মন তাকে সন্দিগ্ধ করে তুলেছিল, অ্যাগনেসের ব্যাপারে। তাই তাকে খুন করে সম্ভাব্য পথের কাঁটা সরাতে চেয়েছিলেন। খুনীর অপরাধী মনোভাব এরকম বিকৃত হওয়া অসম্ভব নয়।
অ্যাগনেস পারট্রিজকে ফোন করছে এই ব্যাপারটা মিঃ সিমিংটন দেখতে পেয়েছিলেন আমি নিশ্চিত, তিনি শুনতে পেয়েছিলেন, অ্যাগনেস বলছে, মিসেস সিমিংটনের মৃত্যুর পর থেকে তার খুব চিন্তা হচ্ছে, সে কিছু বুঝতে পারছে না কি করবে।
মিঃ সিমিংটন ওই শুনেই ধরে নিয়েছিলেন অ্যাগনেস কিছু দেখেছে বা শুনেছে। এর পর তিনি আর ঝুঁকি নিতে চাননি।
–সবাই জানে ওই দিন সারা বিকেল তিনি অফিসেই ছিলেন। বললাম আমি।
ব্যাপারটা আসলে অন্যরকম। আমার বিশ্বাস, অফিসে যাওয়ার আগেই তিনি মেয়েটিকে খুন করেন।
মিস হল্যাণ্ড সম্ভবত রান্নাঘরে বা ডাইনিংরুমে ছিলেন। মিঃ সিমিংটন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আভাস দিতে সদর দরজা খুলে আবার শব্দ করে বন্ধ করে দেন। তারপর ছোট্ট পোশাকের ঘরে গিয়ে আত্মগোপন করে থাকেন।
এরপর অ্যাগনেস যখন বাড়িতে ছিল তিনি বেরিয়ে এসে সদর দরজায় ঘন্টা বাজান, আবার পোশাকের ঘরে লুকিয়ে পড়েন।
অ্যাগনেস কেউ এসেছে বুঝে সদর দরজা খুলতে এলো। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পোশাকের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে পেছন থেকে ওর মাথায় আঘাত করেন। তারপর অচেতন দেহটা বয়ে নিয়ে সিঁড়ির তলায় দেয়াল আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখেন।
সেদিন সামান্য দেরিতে অফিসে পৌঁছলেও তাকে সন্দেহ করার কোন সুযোগ ছিল না। কেননা কেউই এব্যাপারে কোন পুরুষকে সন্দেহ করেনি।
–জঘন্য এক ভদ্রবেশি শয়তান। বললেন মিসেস ডেন ক্যালথ্রপ।
–তাহলে এমি গ্রিফিথকে নিয়ে টানা-হাচড়া কেন? সুপারিন্টেন্টে ন্যাসের কাছে শুনলাম, পুলিস ডাঃ গ্রিফিথের ডিসপেনসারি থেকে হারানো নোড়া আর সেই শিকটাও পেয়েছে। ওগুলো নাকি রাখা ছিল সিমিংটনের অফিসের দলিলের একটা বাক্সের মধ্যে। বলল যোয়ানা।
–পাগল না হলে ওসব জিনিস এভাবে কেউ রেখে দেয়? বললাম আমি।
–কিন্তু ওই নোড়া দিয়ে সিমিংটন অ্যাগনেসকে মারেনি। বলল যোয়ানা, ওখানে একটা ডার্বিঘড়ি ছিল, তাতে চুল আর রক্ত লেগেছিল। এমি যেদিন গ্রেপ্তার হয়, সেই দিনই তিনি সেটা চুরি করেন। আর ওই ছেঁড়া বইয়ের পাতাগুলোও, সেদিনই তার বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু কথা হল, পুলিস যে এমিকে গ্রেপ্তার করল, তারা কি সত্যিই তাকে ওই চিঠিটা লিখতে দেখেছিল?
-এমি ওই চিঠি সত্যিই লিখেছিলেন। বললেন মিস মারপল।
হঠাৎ ওরকম চিঠি লিখতে গেলেন কেন?
-হঠাৎ কেন হবে, এমি বহুদিন থেকেই সিমিংটনের প্রেমে ডুবে ছিলেন।
–হায় কপাল। বললেন মিসেস ডেন ক্যালথ্রপ।
-দুজনের মধ্যে সম্পর্ক খুবই নিবিড় ছিল। বললেন মিস মারপল, মিসেস সিমিংটন মারা যাবার পর তাই এমি খুবই আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু যখন লোকমুখে এলসি হল্যাণ্ডকে নিয়ে সম্ভাবনাটার কথা ছড়িয়ে পড়ল, স্বাভাবিক ভাবেই এমির মন ভেঙ্গে পড়ল। সেই হতাশা থেকেই তিনি এলসিকে সরাবর জন্য একটা বেনামী চিঠি লেখার পরিকল্পনা নেন। যাতে ভয় পেয়ে এলসি এখান থেকে সরে পড়ে। নতুন আর একটা চিঠিকেও আগেকার বেনামী চিঠি লেখকের কীর্তি বলেই লোকে ধরে নেবে-নিশ্চয় এরকম ভেবে নিয়েছিলেন তিনি। তবুও যথেষ্ট সতর্ক হয়েই কাজটা করেছিলেন তিনি।
-তারপর? যোয়ানা জানতে চাইল।
-আমি নিশ্চিত যে, বললেন মিস মারপল, এলসি চিঠিটা যখন মিঃ সিমিংটনকে দেখিয়েছিলেন, তিনি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন চিঠিটা কে লিখতে পারে। নিজেকে নিরাপদ করার একটা প্রশস্ত সুযোগও তিনি এই সঙ্গে পেয়ে গেলেন।
সিমিংটন জানতেন, পুলিস বেনামী চিঠির লেখককে ধরবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তাই তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেটা পুলিসের কাছে নিয়ে যান। তারা তাকে জানালেন, এমিকে ওই চিঠি লিখতে তারা দেখেছেন। এভাবেই দুয়ে দুয়ে চার হয়ে গেল। সিমিংটন তার ঘটনার এক চমৎকার পরিসমাপ্তি টানার সুযোগ নিলেন।
এমি যেদিন গ্রেপ্তার হন, সেদিন তিনি পরিবারের সকলকে নিয়ে গ্রিফিথের ওখানে চা খেতে গেলেন। ওই সময়েই নিশ্চয় তিনি সঙ্গে করে ছেঁড়া পৃষ্ঠাগুলো নিয়ে এসেছিলেন আর সুযোগ বুঝে সিঁড়ির তলার দেয়াল-আমলারিতে গুঁজে রাখলেন।
তার এই আচরণই অ্যাগনেসের মৃতদেহ রাখার ঘটনাটা মনে করিয়ে দেয়। এই কাজটা তার পক্ষে এমন কিছু কঠিনও ছিল না।
সম্পূর্ণ ঘটনাটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে। কিন্তু একটা ব্যাপারে মিস মারপলের প্রতি আমার কিছু ক্ষোভ জমে ছিল। সেকথাটা এবার উত্থাপন না করে পারলাম না।
-সবই বুঝলাম, মিস মারপল, আপনার একটা ব্যাপার আমার কাছে দুর্বোধ্য হয়ে আছে। বেচারী মেগানকে আপনি এসবের মধ্যে টেনে এনেছেন দেখে আমি সত্যিই ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম।
মিস মারপল আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন। চশমার আড়ালে তার চোখের কঠিন দৃষ্টি আমার চোখ এড়াল না।
–ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমাকে কিছু একটা করতেই হত, মিঃ বার্টন। সিমিংটন লোকটা এমনই ধূর্ত যে তার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণই ছিল না। তাই সরাসরি তার মোকাবেলা করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। আর এ কাজের জন্য এমন একজনের সাহায্যের দরকার ছিল, যার সাহস ও বুদ্ধি দুইই আছে। তাই মেগানকেই এ কাজের জন্য উপযুক্ত মনে হয়েছিল আমার।