–সত্যিই তাই। বললাম আমি।
-যতই বলি না কেন নোংরা ছেলেমানুষি, কোন এক সময় যে কোন একটা ঠিক সত্যি হয়ে উঠতে পারে।
অশিক্ষিত সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত মানুষের মন এসবের প্রতিক্রিয়া সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে না। এরফলে নানা ধরনের বিপদ ঘটে যাওয়াও অসম্ভব নয়।
–আমার চিঠিটা যে লিখেছে, তাকে অশিক্ষিত বলেই তো ভাবছি।
–তাই হবে হয়তো।
এরপর ডাঃ ওয়েন গ্রিফিথ বিদায় নিলেন।
.
০২.
ব্যাপারটাকে আমি তাড়াতাড়ি ভুলে যাবারই চেষ্টা করতে লাগলাম। কেন না এরকম একটা বাজে ব্যাপারের কোন গুরুত্ব থাকতে পারে বলে আমার মনে হল না। হয়তো কোন ছিটগ্রস্ত স্ত্রীলোকের বিকারজনক কাজ।
কিন্তু আমার মোহভঙ্গ হল পরের সপ্তাহেই।
সেদিন পারট্রিজ গম্ভীর মুখে এসে আমাকে জানাল প্রতিদিনের কাজের মেয়েটি, বিট্রিজ আজ কাজে আসবে না।
–ওর হয়তো শরীর খারাপ হতে পারে। বললাম আমি।
–শরীর ঠিক আছে স্যর, ও খুবই ভেঙ্গে পড়েছে।
এরপরই মারাত্মক কথাটা শোনাল পারট্রিজ, আমাকে জড়িয়ে খুব খারাপ ইঙ্গিত করে একটা চিঠি তাকে লেখা হয়েছে।
শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম। মেয়েটাকে আমি ভাল করে এখনো পর্যন্ত লক্ষই করিনি। শহরে হঠাৎ দেখলে চিনতেই পারব না। তাছাড়া আমি একজন লাঠিতে ভর দিয়ে চলা অসুস্থ মানুষ।
–এসব কি আজেবাজে কথা। খুবই বিরক্তির সঙ্গে বললাম আমি।
–বিট্রিসের মাকে আমি বলেছি সবই স্যর। এ বাড়িতে আমি যতক্ষণ আছি, এরকম কিছু ঘটবে না। তবে অন্য কোথাও কিছু হয়ে থাকলে আমি বলতে পারব না।
আমি জানি স্যর, বিট্রিসের এক বন্ধু আছে, সে গ্যারাজে কাজ করে। সেও এই রকম খারাপ একটা চিঠি পেয়েছে।
কেমন গোলমাল মনে হচ্ছে আমার স্যর, আমি বলি মেয়েটাকে ছাড়িয়ে দেওয়াই ভাল। কিছু একটা আছে এর মধ্যে, আগুন ছাড়া ধোঁয়া হয় না।
.
সেদিন সকালে বেশ তেজী রোদ ছিল। বাতাসে কেমন বসন্তের আমেজ মাখানো। রাস্তায় একটু হাঁটবো বলে দুটো লাঠি হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
কিছু কাজও অবশ্য ছিল। সিমিংটনদের অফিসে যাব, কিছু শেয়ার হস্তান্তরের কাগজে সই করতে হবে। রুটিওয়ালা শক্ত রুটি দিয়েছিল, তাকেও কথাটা বলতে হবে। তাছাড়া ব্যাঙ্কেও যেতে হবে একবার।
যাতে দেরি না হয় মধ্যাহ্ন ভোজে যোয়ানা আমাকে পাহাড়ের কাছ থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আসবে। তার সঙ্গে সেরকম কথা থাকল।
লিমন্টকের হাই স্ট্রীট এমন জায়গা যেখানে গেলে সকলের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়। খবরাখবর আদান-প্রদান হয়। আমিও আশা করলাম পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।
শহরের পথে কিছুটা এগিয়েছি, এমন সময় পেছন থেকে সাইকেলের ঘন্টা বাজিয়ে সামনে হাজির হল মেগান হান্টার। ও হল উকিল সিমিংটনের সৎ মেয়ে, মিসেস সিমিংটনের প্রথম বিয়ের সন্তান।
এখানে আসার পরে শুনেছি, ক্যাপ্টেন হান্টার মিসেস সিমিংটনের প্রতি খুবই খারাপ ব্যবহার করতেন। বিয়ের পর দুবছরও মহিলা তার সঙ্গে থাকতে পারেন নি। বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। অনেক পরে তিনি এখানকার এক অবিবাহিত ভদ্রলোককে বিয়ে করেন। তিনিই রিচার্ড সিমিংটন।
এই বিয়েতে তাদের দুটি ছেলে হয়। তারা বাপমায়ের খুবই আদরের। মিসেস সিমিংটনকে সুন্দরী বলা চলে। তবে কেমন ফ্যাকাসে চেহারা। মেগানের সঙ্গে তার চেহারার মিল নেই একদম। ও বেশ লম্বা, মাথায় একরাশ বাদামী চুল, পাতলা সুশ্রী মুখ। সব সময় হাসিখুশি।
মেগানের বয়স প্রায় কুড়ি। কিন্তু দেখলে মনে হয় ষোল বছরের স্কুলের মেয়ে।
-ল্যাসার্সের খামারে গিয়েছিলাম হাঁসের ডিম যদি পাওয়া যায়। সাইকেল থেকে নেমে আমার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল মেগান, দেখলাম আপনি একা চলেছেন
একটু থেমে মুখ ভরা হাসি নিয়ে তাকিয়ে মেগান ফের বলল, আপনার বোন খুব সুন্দর, একদম আপনার মতো নয়।
-ভাইবোনেরা সব সময় একইরকম দেখতে হয় না। আমি বললাম।
–ঠিকই বলেছেন, আমিও ব্রায়ান বা কলিনের মতো নই। কেমন অদ্ভুত, তাই না?
আমি নিঃশব্দে হাসলাম। খানিকটা পাশাপাশি হেঁটে যাবার পর মেগান বলল, আপনি প্লেনে ওড়েন, তাই না।
-হ্যাঁ।
–তা করতে গিয়েই আহত হন?
–হ্যাঁ, প্লেন ভেঙ্গে পড়েছিল।
–হায় ভগবান। আমার ট্রেনে উঠতেই ভয় করে।
–সারাদিন তুমি কি কর মেগান? আমি জানতে চাইলাম।
-এখন আর কি করব, এক বছর আগে স্কুল ছেড়েছি। এখানে তেমন মেয়েও নেই যে তাদের সঙ্গে মিশব। এমনি ঘোরাঘুরি করেই কেটে যায় দিন। কথা বলতে বলতে আমরা হাই স্ট্রিটে এসে পড়েছিলাম। হঠাৎ মেগান তীক্ষ্ণ স্বরে চিৎকার করে উঠল, সর্বনাশ, মিস গ্রিফিথ এদিকে আসছেন।
-কেন, ওকে তুমি পছন্দ কর না?
–একদম না। দেখা হলেই ওর সেই বিচ্ছিরি গার্ল গাইডে যোগ দেবার কথা বলেন। ওই ব্যাপারটা আমার একদম অপছন্দ।
মেগানের কথা শেষ হতে না হতেই ডাক্তারের বোন মিস এমি গ্রিফিথ এসে পড়লেন।
মহিলার চেহারায় কিছুটা পুরুষালী ভাব থাকলেও সৌন্দর্যময়। কণ্ঠস্বর মিষ্টি ও জোরালো।
মেগান তার সঙ্গে দু-একটা মন রাখা কথা বলে সাইকেলটা রাস্তার ধারে রেখে ইন্টারন্যাশনাল স্টোর্সে ঢুকে পড়ল।
-অদ্ভুত কুঁড়ে মেয়ে, বললেন মিস গ্রিফিথ, কেবল ঘুরে ঘুরে কাটাবে। ওর মা মিসেস সিমিংটন, কিছু শেখানোর জন্য বলে বলে হার মেনেছেন। মেয়েটা ওর বাবার মতোই হয়েছে।
আমি মুখে মৃদু হাসি নিয়ে কথা শোনার ফাঁকে তাকে লক্ষ্য করছিলাম। সব কথা কানেও যাচ্ছিল না।