বেশ একটা উত্তেজনার ভাব তার চোখে মুখে। সিমিংটনের দিকে তাকাল। অবাক হয়ে দেখলাম তার চোখ জ্বলছে, মুখের কোথাও শিশুসুলভ ভাব নেই। কিংবা ভয় বা সংশয়ের লেশ।
সিমিংটনকে মেগান কোন সম্বোধন করতে কখনো শুনিনি। এখনো কোন সম্বোধন না করেই সে বলে উঠল, আমি তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।
সিমিংটন ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। মনে হলো তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।
মেগান নির্বিকার মুখে তাকিয়ে রইল সিমিংটনের দিকে। তার চোয়ালে দৃঢ়তাব্যঞ্জক ভাব ফুটে উঠেছে স্পষ্ট।
ওই অবস্থাতেই সে এলসি হল্যাণ্ডের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার আপত্তি নেই তো এলসি?
–আপত্তি কেন থাকবে?
বলে সে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগলো। মেগান সরে গিয়ে ওকে যাবার পথ করে দিল। দরজার ওপাশে গিয়ে ঠোঁট চেপে এলসি একমুহূর্তের জন্য তাকাল ভেতরে। পরক্ষণে দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল।
–এবারে বল মেগান, কি বলতে চাইছ। বিরক্তির সঙ্গে বললেন সিমিংটন।
একপা দু পা করে টেবিলের কাছে এগিয়ে এলো মেগান। সটান সিমিংটনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার কিছু টাকার দরকার।
–টাকা। বেশ কড়া স্বর বেরলো সিমিংটনের গলা থেকে, একথা তো কাল সকালেই বলা যেত। তোমার হাতখরচ কম পড়ছে মনে হয়?
–আমি বেশ কিছু টাকা চাই। দৃঢ় স্বরে বলল মেগান।
সিমিংটন এবারে নড়েচেড়ে বসলেন। তীক্ষ্ণস্বরে বললেন, তুমি তো আর কয়েক মাসের মধ্যেই সাবালিকা হবে। তখন তোমার দিদিমার রেখে যাওয়া সব টাকাই তুমি হাতে পেয়ে যাবে।
-জানি, আমি তোমার কাছ থেকেই টাকা চাই। মনে করতে পার এটা একটা ব্ল্যাকমেল। আমি যতদূর শুনেছি, আমার বাবাও এই ব্ল্যাকমেল করার জন্যহ জেলে গিয়েছিল। আমি তারই মেয়ে।
আমি তোমাকে টাকা দিতে বলেছি, কারণ, ওদিন আমার মার ঘরে তার ওষুধের পুরিয়ায় তোমাকে কিছু একটা মেশাতে দেখেছিলাম। টাকা না পেলে একথাটা সকলকে
কথাটা অসম্পূর্ণ রেখেই থেমে গেল মেগান।
কর্কশ শুষ্ককণ্ঠে বলে উঠলেন সিমিংটন, এসব তুমি কি বলছ, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
-আমি জানি, সব কথাই তুমি বুঝতে পেরেছ।
শয়তানের হাসি হাসলেন সিমিংটন। হাসতে হাসতেই লেখার টেবিলের কাছে এগিয়ে গেলেন।
ড্রয়ার থেকে একটা চেক বই বার করে একটা চেক লিখে নিয়ে ফিরে এসে মেগানের দিকে এগিয়ে ধরলেন।
বললেন, তুমি এখন বড় হয়েছে, তোমার বিশেষ পছন্দের কিছু কেনার ইচ্ছে হতেই পারে, আমি বুঝতে পারি। কিন্তু তার জন্য ওসব আবোলতাবোল কি বলতে শুরু করলে–কিছুই বুঝতে পারলাম না। যাক গে, এই নাও
চেকটায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে মেগান বলল, ধন্যবাদ। এতেই আপাতত চলবে।
মেগান ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলে সিমিংটন দরজার দিকে তাকিয়ে কয়েক মুহূর্ত কি ভাবলেন। পরে চেয়ারে বসে পড়লেন।
সিমিংটনের মুখের ভাব দেখে আমার বুকের ভেতর পর্যন্ত কেঁপে উঠল। মনে হল মেগানের সমূহ বিপদ। আমি তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে এসে এগিয়ে যেতে লাগলাম।
সহসা সামনের দেয়ালের ধারের ঝোপটা যেন অন্ধকারে সচল হয়ে উঠল। সামনে পা বাড়াবার আগেই বুঝতে পারলাম ঝোপের আড়াল থেকে সুপারিন্টেন্টে ন্যাসের দুটো হাত আমাকে জাপটে ধরল। কানের কাছে তার ফিসফিস কথা শুনতে পেলাম, উত্তেজিত হবেন না মিঃ বার্টন। সঙ্গে আসুন।
আমি স্তম্ভিত হবারও অবকাশ পেলাম না। হামাগুড়ি দিয়ে ন্যাসকে অনুসরণ করতে বাধ্য হলাম।
ওই ভাবেই বাড়ির শেষপ্রান্ত পর্যন্ত চলে এসে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন ন্যাস। পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘাম মুছলেন।
–মোক্ষম সময়েই এসে হাজির হয়েছেন। নিচু স্বরে বললেন ন্যাস।
মেগানের কথা ভেবে আমি খুবই অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, মেয়েটা একেবারে বাঘের মুখে পড়েছে–দেরি হলেই মরবে।
ন্যাসকে রুদ্ধ নিঃশ্বাসে বললাম, মেয়েটার মুখ লক্ষ করেছিলেন? মেগান নির্ঘাৎ বিপদে পড়বে। ওকে এখুনি এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
–শান্ত হোন, মিঃ বার্টন, ন্যাস আমার হাত চেপে ধরে বললেন, এই সময় এমন অধীর হলে চলবে না। আমি যা বলব, তার বাইরে কিছু করতে যাবেন না, ঈশ্বরের দোহাই।
ন্যাস কি বলতে চাইছিলেন কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
কিন্তু এটা আর গোপন ছিল না যে কিছু একটা অনুমান করে তিনি এখানে ফাঁদ পেতে বসেছিলেন। দৈবাৎ এসে পড়ায় আমি দৃশ্যপটে চলে এলাম।
মেগান যে নিরাপদ নয় সেকথা আমার মতো তিনি বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন। জেনেশুনে নিশ্চয় তাকে তিনি বিপদের মুখে ফেলে রাখবেন না। এই বিশ্বাস থেকেই শেষ পর্যন্ত আমাকে তাঁর কথা মেনে নিয়ে ধৈর্য ধরতে হল।
-বেশ, আপনার কথাই মেনে চলব, কথা দিলাম, বললাম আমি, তবে শেষ না দেখে এখান থেকে নড়ব না।
–বেশ এবারে শুনুন। বললেন ন্যাস।
তিনি জানালেন, পার্কিনস ইতিমধ্যেই বাড়িতে ঢোকার পেছনের দরজা খুলে রেখেছে, আমাদের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হবে।
রীতিমত দুঃসাহসিক একটা অভিযানের ইঙ্গিত। কিন্তু এটাও ঠিক যে ওপরে যেতে না পারলে মেগানের কি হল তা জানার উপায় থাকবে না।
ন্যাসকে অনুসরণ করে এরপর পেছন দিকে এলাম। দরজা খোলাই পাওয়া গেল। পার্কিনস নিখুঁতভাবে কাজ সেরে রেখেছে।
দুজনে মিলে মন্থর পায়ে ওপরে উঠে গেলাম। ওখানে ভেলভেটের পর্দায় ঢাকা জানালার আড়ালে আত্মগোপন করলাম।