–ডিক, তুমি চলে যাও দয়া করে চলে যাও
–প্রিয় এমি, আমার মনে হচ্ছে তোমার একজন সলিসিটর দরকার
–কিন্তু তুমি নয়। আমি সহ্য করতে পারব না–না–আমি চাই না
সিমিংটন তার আইনী বুদ্ধিতে মনে হয় ব্যাপারটা অনুমান করতে পারলেন। তিনি শান্ত স্বরে বললেন, তবে আমি এক্সহ্যাম্পটনের মাইল্ডমে-কে ডাকছি–
এমি ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। সেই অবস্থাতেই মাথা নেড়ে সায় দিলেন।
সিমিংটন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। সেই মুহূর্তেই ওয়েন গ্রিফিথ দরজার সামনে পৌঁছল, দুজনের প্রায় ধাক্কা লাগার মতো অবস্থা।
–এসব কি ব্যাপার ন্যাস, আমার বোন—
হ্যাঁ, ডাঃ গ্রিফিথ, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। কিন্তু এছাড়া কোন উপায় ছিল না
–বিষণ্ণ কণ্ঠে বললেন ন্যাস।
–আমার বোন এসব চিঠির জন্য দায়ী–আপনি তাই মনে করেন?
–সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ডাক্তার, বললেন ন্যাস, আমি খুবই দুঃখিত।
পরে এমির দিকে তাকিয়ে বললেন, মিস গ্রিফিথ, প্রয়োজনে আপনি একজন সলিসিটরের পরামর্শ নিতে পারবেন–এবারে দয়া করে আমাদের সঙ্গে আসতে হবে
–এমি
ওয়েন গ্রিফিথ বোনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলেন।
এমি একবারও ওয়েনের দিকে তাকালেন না। তাকে পাশ কাটিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেলেন।
সকলে চলে গেলে ঘরে বজ্রাহতের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন ওয়েন। আমি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে গেলাম।
-এমি এ সব করেছে, এ কথা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না
–কোথাও ভুলও হয়ে থাকতে পারে। আমি বলার চেষ্টা করলাম।
–তাহলে ও কথাটা এভাবে বলল কেন? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
থপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়লেন ওয়েন। আমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়ে একগ্লাস কড়া পানীয় জোগাড় করে আনালাম। একচুমুকে গ্লাসের পানীয়টুকু শেষ করে খানিকটা যেন চাঙা হলেন।
পরে বললেন, ব্যাপারটার জন্য আদৌ প্রস্তুত ছিলাম না মিঃ বাৰ্টন। এখন অনেকটা সামলে উঠতে পেরেছি।
আমার কিছু করণীয় থাকলে বলুন, গ্রিফিথ।
কারোরই আর কিছু করার নেই–কিছুই না—
এই সময় দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল যোয়ানা। ওকে অতিশয় বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।
ওয়েনের দিকে এগিয়ে গিয়ে আমাকে বলল, তুই এবারে যেতে পারিস জেরি, এটা আমার কাজ।
আমি উঠে দাঁড়ালাম নীরবে। দরজার মুখে গিয়ে ফিরে তাকালাম একবার। দেখলাম, জেরি ওয়েনের সামনে হাঁটু মুড়ে বসেছে।
.
সেদিন যোয়ানা যখন বাড়ি ফিরল, তাকে দেখে আমি খুশি হতে পারিনি। কেমন ফ্যাকাশে আর ক্লান্ত লাগছিল ওকে।
ওর মনোভাবটা বুঝবার জন্য হাল্কা স্বরে বললাম, তাহলে তোর দেবদূতকে খুঁজে পেয়েছিস?
-না, জেরি, বেদনাভারাক্রান্ত কণ্ঠ ওয়েনের, ও জানিয়েছে আমাকে গ্রহণ করতে পারবে না। ও খুবই আত্মমর্যাদা সচেতন
আমার দীর্ঘশ্বাস পড়ল। বললাম, আমার মেয়েবন্ধুটিও আমাকে চায় না…
বলাবাহুল্য, ইতিমধ্যে ঘটনা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়েই আমার আর মেগানের সম্পর্ক নিকটতর হয়েছিল। তাকে আমি বিয়ের প্রস্তাব করেছিলাম। সে প্রত্যুত্তরে গম্ভীরস্বরে আমাকে জানিয়েছিল, তোমার স্ত্রী হওয়ার যোগ্য আমি নই। তুমি আমাকে ভালবাস জানি, কিন্তু আমি ভালবাসার চেয়ে ঘেন্না করতেই শিখেছি।
এভাবেই সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু আমি নিরাশ না হয়ে তাকে জানিয়েছি আমি তার মুখ চেয়ে আশা করেই থাকব।
যোয়ানাকে আমাদের দুজনের সম্পর্কের পরিণতি সম্পর্কে যথাসময়েই জানিয়েছিলাম।
এই মুহূর্তে দুজন সমব্যথী মানুষের নীরব হয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না।
কয়েক মিনিট পরে যোয়ানা বলে উঠল, জেরি, এই মুহূর্তে বার্টন পরিবারের বলতে পারা যায় কোনই চাহিদা নেই।
আমি সজীব কণ্ঠে বলার চেষ্টা করলাম, তাতে কিছু যায় আসে না যা, এখনো আমরা দুজনে দুজনের জন্য রয়েছি।
-হ্যাঁ, আপাতত এটাই আমাদের সান্ত্বনা। বলল যোয়ানা।
.
পরদিন ডাঃ গ্রিফিথ এলেন। যোয়ানা সম্পর্কে আবেগময় কণ্ঠে অনেক কথা বলতে লাগলেন।
–অতি চমৎকার মেয়ে যোয়ানা। ও যেভাবে নিজেকে আমার কাছে তুলে ধরেছে, তার তুলনা হয় না। কিন্তু, আমার দুর্ভাগ্য, আমি তাকে গ্রহণ করতে পারছি না।
ওয়েন আমাকে বোঝাতে চাইলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, এমিকে নিয়ে, এখবর জানাজানি হবার পর যেরকম নোংরা আলোচনা শুরু হবে, যোয়ানাকে তা স্পর্শ করে তিনি তা চান না।
যোয়ানা যে দুর্বল মনের মেয়ে নয়, বিপদের দিনে পাশে দাঁড়াবার মতো দৃঢ়তা তার আছে, আমি ভাল করেই জানি। তাই গ্রিফিথের কথাগুলোকে আমার গালভরা বুলি বলেই মনে হল। আমি বিরক্তির সঙ্গেই বলেছিলাম যে, তিনি অনভিপ্রেতভাবেই বড় বেশি মহত্ত্ব দেখিয়ে ফেলছেন।
গ্রিফিথ চলে গেলে হাঁটতে হাঁটতে হাইস্ক্রিটের দিকে গেলাম। দেখলাম ওখানে সকলেই মুখরোচক আলোচনার খোরাক পেয়ে বেশ জমিয়ে তুলেছে।
ন্যাসের সঙ্গে দেখা হল। তিনি জানালেন এমিলি বার্টনের যে বইটা আমি আবিষ্কার করেছিলাম তার ছেঁড়া পাতাগুলো গ্রিফিথের বাড়ির সিঁড়ির নিচে দেয়াল আলমারিতে পাওয়া গেছে। দেয়াল-কাগজে সেগুলো মুড়ে রাখা ছিল। এটা পাওয়াতে তাদের মামলা সাজানোর কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে।
আমি চিন্তিত হয়ে বললাম, ওরকম একটা জায়গাতে মালপত্র গুঁজে রাখার ঝোঁক মহিলার বেশিই দেখা যাচ্ছে।
–হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। অপরাধী মনস্তত্ত্ব ওরকমই দেখা যায়। আর একটা কথা, মৃত অ্যাগনেস উডের খুনের একটা সূত্রও পাওয়া গেছে।