কোন না কোন সময়ে অপরাধী একবার নিশ্চিত ভুল করবেই–যতই সে নিজের কাজ সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হোক না কেন।
ন্যাস অনেকটাই এগিয়ে চলেছিলেন। আচমকা উপস্থিত হয়ে আমি বাধার সৃষ্টি করলাম।
আরো একবার আমি ক্ষমা প্রার্থনা করলাম। ব্যাপারটা যে এরকম হয়ে উঠতে পারে আমার জানা ছিল না।
-ঠিক আছে যেতে দিন, হাল্কা গলায় বললেন ন্যাস, আবার পরে দেখা যাবে।
আমি বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলাম।
.
পরদিন সুপারিন্টেন্টে ন্যাসের টেলিফোন পেয়ে চমকে উঠলাম।
–শেষ পর্যন্ত তাকে আমরা ধরেছি মিঃ বার্টন।
রিসিভারটা হাত থেকে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। কোন রকমে নিয়ে বললাম, ধরতে পেরেছেন
ন্যাস বললেন, টেলিফোনে সবকথা বলা ঠিক হবে না। আপনার আশপাশে নিশ্চয় কেউ ঘাপটি মেরে আছে। দয়া করে একবার থানায় চলে আসুন।
এখনই আসছি–
খুব তাড়াতাড়ি থানায় গিয়ে পৌঁছলাম। ভেতরের ঘরে বসেছিলেন ন্যাস আর সর্জেন্ট পার্কিনস।
ন্যাস হাসিমুখে বললেন, এতদিনে আমাদের দুর্ভোগের শেষ হল। অনেক হয়রানি হতে হয়েছে। নিন দেখুন
একটা চিঠি টেবিলের ওপর ছুঁড়ে দিলেন। তুলে নিয়ে দেখলাম, চিঠিটা পুরোপুরি টাইপ করে লেখা। ভাষাও অনেকটা মোলায়েম।
চিঠিটা ছিল এরকম
মরা বউয়ের জায়গা নেবার চেষ্টা করে বিশেষ লাভ হবে না। তোমার অবস্থা দেখে শহরের সকলে হাসাহাসি করছে। দেরি হবার আগেই কোথাও পালাও-দূরে কোথাও, যত তাড়াতাড়ি পারো। নইলে তোমার অবস্থাও অন্য মেয়েটির মতো হবে।
চিঠি পড়া শেষ করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে ন্যাসের দিকে তাকালাম।
–মিস হল্যাণ্ড পেয়েছেন চিঠিটা, আজ সকালে।
উনি এত দিন কোন চিঠি পাননি কেন সেকথা ভেবে অবাক লাগছে। পার্কিনস বললেন।
-এটা কে লিখেছে?
জানতে চাইলাম আমি।
ন্যাসকে খুবই হতাশাগ্রস্ত আর ক্লান্ত লাগছিল। তিনি ধীরে ধীরে বললেন, খুবই দুঃখের ব্যাপার যে একজন বিশিষ্ট ভদ্রলোক ব্যাপারটাতে প্রচণ্ড আঘাত পাবেন। কিন্তু বুঝতেই তো পারছেন, আমরা নিরূপায়।
–কে লিখেছে চিঠিঠা? আবার জানতে চাইলাম আমি।
–মিস এমি গ্রিফিথ।
.
সেদিন বিকেলেই পরোয়ানা নিয়ে ন্যাস আর পার্কিনস গ্রিফিথের বাড়ি গেলেন। ন্যাসের অনুরোধে আমাকেও সঙ্গে যেতে হল।
তার ধারণা, ডাক্তার প্রচণ্ড আঘাত পাবেন। আঘাত সামলে নেওয়ার ব্যাপারে আমি তাকে সাহায্য করতে পারব।
আমিও অবশ্য আশান্বিত ছিলাম। কেননা ওয়েন আমাকে পছন্দ করেন।
সদরে ঘণ্টা বাজিয়ে আমরা মিস গ্রিফিথের খোঁজ করলাম। আমাদের ড্রইংরুমে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে তখন মিস এলসি হল্যাণ্ড, মেগান আর মিঃ সিমিংটন চা পান করছিলেন।
আপনার সঙ্গে একটু আলাদাভাবে কথা বলতে চাই মিস গ্রিফিথ। এমির দিকে তাকিয়ে বললেন ন্যাস।
এমি চায়ের আসর থেকে উঠে আমাদের কাছে এলেন। মনে হল তার চোখে চকিতে ভয়ের ছায়া পড়েই মিলিয়ে গেল। তিনি স্বাভাবিক উচ্ছল ভঙ্গীতেই কথা বলতে লাগলেন।
এমি ড্রইংরুম পার হয়ে একটা ছোট ঘরে আমাদের নিয়ে এলেন।
আমি দরজা বন্ধ করতে গিয়ে দেখলাম, সিমিংটন ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকালেন। ন্যাসের হাবভাবে তিনি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিলেন কিছু একটা ঘটেছে। আইন সংক্রান্ত ব্যাপারে পুলিসের সংস্পর্শে আসার অভিজ্ঞতা একজন সলিসিটর হিসেবে তার না থাকবার কথা নয়। মনে হল তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠবার উদ্যোগ করছেন।
ন্যাস ততক্ষণে তার কর্তব্য শুরু করে দিয়েছেন। অত্যন্ত শান্ত ধীর ভঙ্গিতে মার্জিত স্বরে তিনি এমিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, মিস গ্রিফিথ, আপনাকে আমাদের সঙ্গে থানায় যেতে হবে। অবশ্য আপনার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও আমার কাছে রয়েছে।
আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা হল, না, না, মিস খুনের নয়, তবে বেনামী চিঠির। এখানে সেসব চিঠি লোকেরা পেয়ে চলেছে, সেগুলো লিখছেন আপনিই।
ন্যাসের কথা শুনে এমি উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠলেন।
-ওসব জঘন্য চিঠি আমি লিখব, আপনি ভাবলেন কি করে? আপনার মাথা ঠিক আছে তো?
তারপর তীব্র শ্লেষের দৃষ্টি হেনে বললেন, না, না, ওসব চিঠি আমি লিখিনি।
ন্যাস এবারে এলসি হল্যাণ্ডকে লেখা চিঠিটা পকেট থেকে বের করে বললেন, এই চিঠিটা আপনি লেখেননি বলছেন?
চকিতের জন্য ইতস্তত করলেও এলসির কণ্ঠস্বরের বদল হল না। বললেন, না, এ চিঠি আমি কোনদিন লিখিনি।
-তাহলে একটু খুলেই বলা যাক মিস গ্রিফিথ, আপনার হয়তো মনে পড়তে পারে। গত পরশু রাত এগারোটার থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে উইমেনস ইনসটিটিউটে সেখানকার টাইপ মেশিনে আপনাকে এই চিঠি টাইপ করতে দেখা গেছে।
গতকাল এই চিঠি সহ অনেকগুলো চিটি নিয়ে আপনি ডাকঘরে ঢুকেছেন–
চিঠিগুলি ডাকে দেবার জন্যই গিয়েছিলাম। কিন্তু এ চিঠি আমি ডাকে দিই নি।
–তা ঠিক, আপনি ডাকে দেননি। কিন্তু চিঠিটা যাতে ডাকবাক্সে ফেলা হয় তার জন্য অত্যন্ত চতুর কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
ডাক টিকিটের জন্য অপেক্ষা করার সময় আপনি এই চিঠি সকলের অলক্ষ্যে মাটিতে ফেলে দিয়েছিলেন, যাতে অন্য কারো চোখে পড়লে ডাকবাক্সে ফেলে দেয়। বস্তুত হয়েছিলও তাই।
এলসি কি বলতে যাচ্ছিলেন, ঠিক এমনি সময়ে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলেন মিঃ সিমিংটন।
–এসব কি হচ্ছে? এমি, এমি, তোমার আইনের সাহায্য দরকার মনে করলে, আমি তৈরি আছি–
একথা শুনেই এমি দুহাতে মুখ ঢেকে একটা চেয়ারে বসে পড়লেন। দৃশ্যতই তিনি ভেঙ্গে পড়লেন।