–কারণ হল, বললেন, মিস মারপল, সকলে তাকে একজন উম্মাদ বলেই মনে করেছে। কিন্তু আমার ধারণা একজন অত্যন্ত সুস্থ মস্তিষ্কের কাউকেই খোঁজ করার কথা ছিল।
-ন্যাসও তাই বলেছিলেন। সমাজের অতিমান্য কারুর কথাই তিনি বলেছিলেন। বললাম আমি।
-হ্যাঁ। যথার্থই বলেছেন তিনি। বললেন মিস মারপল।
-ন্যাস আরও ভেবেছেন, বেনামী চিঠি আরও আসবে। আপনি কি এখনও বেনামী চিঠির লেখকের জন্য দুঃখিত মিসেস ক্যালথ্রপ?
-কেনই-বা নয়? বললেন তিনি।
অন্তত এই ঘটনায় আমি তোমার সঙ্গে একমত নই। বললেন মিস মারপল।
–আপনি কোন চিঠি পেয়েছিলেন মিস বার্টন? প্রশ্ন করলেন মিস মারপল।
–পেয়েছি বইকি–জঘন্য সব কথা লেখা ছিল। বলল যোয়ানা।
বয়সে যারা তরুণ আর সুন্দর, আমার মনে হয় বেনামী চিঠির লেখকরা তাদেরই বেছে নেয়।
-এই কারণেই, আমি বললাম, এলসি হল্যাণ্ড কোন চিঠি না পাওয়ায় আমি আশ্চর্য না হয়ে পারিনি।
মিস এলসি হল্যাণ্ড, মানে, বললেন মিস মারপল, মিঃ সিমিংটনের সেই নার্সারী গভর্নেসের কথা বলছেন?
-হ্যাঁ।
–ও সত্যিকথা বলেছে আমার মনে হয় না। যোয়ানা বলল।
–ওর কথা আমি বিশ্বাস করি–মিথ্যা বলেনি। ন্যাসও তাই করেছেন। বললাম আমি।
–এ তো খুবই অদ্ভুত কাণ্ড দেখছি। খুবই আশ্চর্য ব্যাপার বললেন মিস মারপল।
.
বাড়ি ফেরার পথে যোয়ানা বলল, তোর ওকথাটা ওখানে না বলাই ঠিক ছিল।
–কোন কথাটা? জানতে চাইলাম আমি।
–ন্যাস বলেছিলেন, আরো চিঠি আসতে পারে
––কেন উচিত হয়নি বলছিস?
–কারণ মিসেস ডেন ক্যালথ্রপই অপরাধী কিনা কেউ এখনো জানে না।
–একথাটা তুই বিশ্বাস করিস?
নিশ্চিত নই, তবে এটাও ঠিক, খুব অদ্ভুত ধরনের মহিলা তিনি।
দুদিন পরের কথা। এক বিকেলে হ্যাঁম্পটনে একটা নৈশ ভোজে গিয়েছিলাম। লিমণ্টকে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল।
ফেরার পথে গাড়ির আলোকে গোলমাল দেখা দিল। গাড়ি থেকে নেমে একজায়গায় অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম আলো।
পথ একদম জনশূন্য। এখানে সন্ধ্যার পরে বড় একটা কেউ পথে বের হয় না।
চলতে চলতে পথের ধারে চোখে পড়ল উইমেনস ইনসটিটিউটের বাড়িটা। তারার আলোয় ছায়ার মতো দেখতে পেলাম বাড়িটাকে।
হঠাৎ জানি না কেন, বাড়িটা একবার ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হল আমার। গাড়ি থেকে নামতেই মনে হল যেন গেটের কাছ থেকে ছায়ামূর্তি স্যাৎ করে সরে গেল।
অস্পষ্ট ভাবে হলেও একটা কেউ যে সরে গেল আড়ালে এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
আধখোলা গেটটা ঠেলে ভেতরে ঢুকে যথাসম্ভব নিঃশব্দে আমি ভেতরে ঢুকলাম।
ছোট একটা পথ ধরে কয়েক পা এগিয়ে একটা দরজার সামনে পৌঁছলাম।
কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ মনে হল, কাছেই কোথায় একটা খসখস শব্দ হচ্ছে। মেয়েদের পোশাকে যেরকম শব্দ হয় শব্দটা অনেকটা সেরকম।
বাড়ির কোণের দিক থেকে শব্দটা পেয়েছিলাম। আমি দ্রুত সেদিকে পা বাড়ালাম।
কিন্তু সেখানে কাউকেই দেখতে পাওয়া গেল ন। শব্দটাও আর নেই। কোণের দিকে একটা খোলা জানালা চোখে পড়ল।
জানালা গলে কেউ ভেতরে ঢুকেছে কিনা দেখবার জন্য আমি গুটিগুটি পায়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। উৎকর্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।
আমার পকেটে একটা টর্চ ছিল। এবার সেটা বার করে এনে সামনে আলো ফেললাম।
সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার থেকে তীব্র স্বরে কেউ বলে উঠল, আলো নিভিয়ে দিন।
চিনতে ভুল হল না, সুপারিন্টেন্টে ন্যাসের গলা। আলো নিভিয়ে দিতে দিতেই টের পেলাম তিনি হাতধরে টেনে আমাকে বাড়ির একটা ঘরে নিয়ে গেলেন।
এই ঘরে কোন জানালা ছিল না। বাইরে থেকে আমাদের উপস্থিতি কারো টের পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। ন্যাস একটা সুইচ টিপে আলো জ্বাললেন।
–ঠিক এই সময়েই আপনি এখানে উপস্থিত হলেন মিঃ বার্টন!
কেমন হতাশার স্বরে বললেন ন্যাস।
-খুবই দুঃখিত, আমি ক্ষমা চেয়ে বললাম, গেটের কাছে কিছু একটা দেখেছি বলে সন্দেহ হল আমার,
–আপনি নিশ্চিত, কাউকে দেখতে পেয়েছিলেন?
–অস্পষ্টভাবে দেখা–কেউ মনে হল গেট দিয়ে ঢুকল। তার পরেই বাড়ির কোণের দিকে একটা মৃদু খসখস শব্দ মনে হল।
–আপনি ঠিকই দেখেছেন।
বাড়িটা ঘুরে এসেছিল কেউ একজন। জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল, তারপর আপনার আসার শব্দ পেয়ে দ্রুত এগিয়ে যায়।
-ওঃ, খুবই দুঃখিত। কিন্তু সুপারিন্টেন্টে, ব্যাপারটা কি হতে পারে?
–সেই বেনামী চিঠির লেখক যে থেমে থাকবে না তা আমি জানতাম। আমার লক্ষ্যও ছিল সেটা–সে আবার আগের মতো চিঠি লিখুক।
বইয়ের ছেঁড়া পৃষ্ঠাগুলোর অক্ষর কেটে চিঠি লেখার কাজটা সহজেই হয়ে যাবে। কিন্তু খামের ব্যাপারটা ওভাবে করা সে পছন্দ করবে না। সে চাইবে সবকিছুই আগের মতো থাকবে। তাই একই মেশিনে ঠিকানা টাইপ করতে সে চাইবে।
আমি জানতাম কোন এক সময়ে সেই অজ্ঞাত লোকটি এই ইনসটিটিউটে ঠিকানা টাইপ করতে ঠিক আসবে।
–মিস গিনচ বলে মনে করেন?
–অসম্ভব নয়। বললেন ন্যাস।
–তার মানে এখনো আপনি নিশ্চিত হতে পারেননি।
–হ্যাঁ। তবে যেই হোক, এই নোংরা খেলার কৌশলে রীতিমত অভিজ্ঞ বলতে পারি।
ন্যাসের কথা থেকে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, নানা ভাবেই তিনি তার কাজ করে চলেছেন। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের প্রতিটি পদক্ষেপ, এমনকি তারা যে চিটি লিখছে বা ডাকে দিচ্ছে তা সবই সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।