-ওহ হ্যাঁ, সেকথা আমি জানি–ব্যাপারটা যে কোন ঘুমের ওষুধ হতে পারে তা আমি ভাবছিলাম। আর বন্ধ নেই। ধন্যবাদ ডাঃ গ্রিফিথ।
গ্রিফিথ বিদায় নিলেন। আমিও প্রায় একই সময়ে থানা থেকে বেরিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে বাড়ির দিকে চললাম।
বাড়িতে পৌঁছে যোয়ানাকে কোথাও দেখতে পেলাম না। কেবল টেলিফোনের পাশে একটা কাগজে লেখা ছিল, ডাঃ গ্রিফিথ টেলিফোন করলে তাকে জানাতে হবে মঙ্গলবার যাওয়ার অসুবিধা আছে–বুধবার বা বৃহস্পতিবার হতে পারে।
ড্রইংরুমে গিয়ে বসলাম। আর তখনই খুব বিরক্তির সঙ্গে মনে পড়ল, গ্রিফিথ এসে পড়ায় আমার আর ন্যাসের আলোচনায় বাধা পড়েছিল।
বাকি দুজন সন্দেহভাজনের নাম শোনা হয়ে ওঠেনি। একা ঘরে বসে ভাববার চেষ্টা করতে লাগলাম বাকি দুজন কারা হতে পারে।
দুজনের একজন যে পারট্রিজই হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে নেওয়া বইটা এই বাড়িতেই পাওয়া গেছে। তাছাড়া, পরামর্শদাত্রী হিসেবে অ্যাগনেসকে মাথায় আঘাত করা তার পক্ষেই সম্ভব ছিল। তাকে কোনভাবেই সে সন্দেহ করত না।
পারট্রিজ বাদে অন্যজন কে হতে পারে? তাকে হয়তো আমি চিনি না। এমন একজন হল মিসেস ক্লিট। গ্রামের লোকেরা তাকেই গোড়ায় সন্দেহ করত।
ধীরে ধীরে ব্যাপারটা নিয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে যেতে লাগলাম। যে চারজন সন্দেহভাজনের নাম শুনলাম, এদের কারোর পক্ষেই একাজ করা সম্ভব না।
এমিলি বার্টন অতিশয় শান্ত আর দুর্বল। তাকে সন্দেহের আওতায় আনার একটাই মাত্র কারণ তার একাকীত্ব। ছোটবেলা থেকেই বাধানিষেধের মধ্যে থেকে, খারাপ সবকিছুতেই একটা ভীতি রয়েছে। এটাই কি তার অসুখী মনের ভাব সৃষ্টির কারণ? অবদমিত কিছু?
এমি গ্রিফিথের মধ্যে হাসিখুশি ভাব থাকলেও কিছুটা পুরুষালীও রয়েছে। তবে তার সফল জীবন-কর্মব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটে।
কিন্তু তবু জানি না কেন, আমার অবচেতন মনে একটা অস্বস্তি ঘোরাফেরা করতে লাগল। কিছু একটা যেন মনে পড়ে পড়েও পড়ছে না…ডাঃ গ্রিফিথ বলেছিলেন কিছু একটা…হ্যাঁ…মনে পড়েছে, তিনি বলেছিলেন, উত্তরে একজায়গায় প্র্যাকটিস করার সময়ে সেখানে লোকেরা খুব বেনামী চিঠি পেয়েছে।
এমি গ্রিফিথ এখানেও আছে, এখানেও সেই বেনামী চিঠি লোকেরা পেয়ে চলেছে। এটা কি নিছকই সমাপতন?
গ্রিফিথ অবশ্য বলেছিলেন, পুলিস শেষ পর্যন্ত একটা স্কুলের মেয়েকে ধরেছিল। সেই বেনামী চিঠি লিখত।
তবে ব্যাপারটা কি এমন হতে পারে না, পুলিস ভুল লোককে ধরেছিল? আসলে কাজটা ছিল এমি গ্রিফিথের। এখানে আসার পর সে আবার তার পুরনো খেলা শুরু করেছে। ব্যাপারটা ওয়েন গ্রিফিথ জানেন বলেই তাকে এমন চিন্তাগ্রস্ত আর ভেঙ্গে পড়ার মতো লাগছে। কিংবা তিনি হয়তো সন্দেহ করছেন বোনকে।
আর মিঃ পাই–লোকটির চরিত্র কল্পনা করলে তার পক্ষে একাজ অসম্ভব বলে মনে হয় না। কিন্তু…সেই কথাটা আবার মাথায় জেগে উঠল–আগুন ছাড়া ধোঁয়া হয় না…ঠিক তাই…আগুন ছাড়া ধোঁয়া হয় না…
হঠাৎ কেমন শীত করতে লাগল…অদ্ভুত একটা অনুভূতি…হঠাৎ দেখতে পেলাম আমি আর মেগান হাত ধরাধরি করে চলেছি…আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল সুন্দরী এলসি হল্যাণ্ড…তার গায়ে বিয়ের পোশাক..পথে চলতে চলতে শুনতে পেলাম লোকেরা বলাবলি করছে, ও ডাঃ গ্রিফিথকে বিয়ে করতে চলেছে…ওরা গোপনে অনেক দিন থেকে বাগদত্ত ছিল।
আমরা গির্জায় পৌঁছলাম…দেখতে পেলাম সেখানে ডেন ক্যালথ্রপ লাতিন ভাষায় মন্ত্রপাঠ করছেন।
আমচকা মিসেস ডেন ক্যালথ্রপ লাফিয়ে উঠে বলতে লাগলেন, এটা বন্ধ করতেই হবে…এটা বন্ধ করতেই হবে।
কেমন একটা ধাক্কা খেলাম যেন। পরক্ষণে বুঝতে পারলাম, আমি লিটল ফার্জের ড্রইংরুমে বসে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম।
চোখ মেলে দেখতে পেলাম মিসেস ডেন ক্যালথ্রপ দরজা দিয়ে ঢুকছেন। আমি বিহ্বল চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সামনে এসে তিনি বললেন, মিঃ বার্টন, জেনে রাখুন এটা বন্ধ করতেই হবে। এইসব নোংরা চিঠি দেওয়া আর খুন। সহ্য করতে পারছি না–অ্যাগনেস উডের মতো বাচ্চা মেয়েটা চোখের সামনে খুন হচ্ছে।
ততক্ষণে আমি সজাগ হয়ে বসেছি। বললাম, আপনার কথা ঠিক। কিন্তু কাজটা কিভাবে করবেন বলে ভাবছেন? আমরা এব্যাপারে কি করতে পারি?
–আমাদের এজায়গাটা বড্ড দূষিত হয়ে পড়েছে বুঝতে পারছি। আগে এমন ছিল না। অবিলম্বে সব রহস্যের সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
–পুলিস তো যথাসাধ্য করে চলেছে। বললাম আমি।
-তাই যদি তারা করতো তাহলে গতকাল অ্যাগনেস খুন হয় কি করে? এসব কাজ পুলিসকে দিয়ে হবে না, আমি ভাল রকম বুঝতে পারছি।
–কিন্তু যা করার তারাই তো করবে।
–না, একজন অভিজ্ঞ দক্ষ কাউকে চাই। জেনে রাখুন আমিই ব্যবস্থা করতে চলেছি।
–আপনি কি করে করবেন? বিরক্তির সঙ্গে বললাম আমি, এসব কাজের দায়িত্ব স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড নিতে পারে না যতক্ষণ না কাউন্টির চিফ কনস্টেবল অনুরোধ করছেন। ইতিমধ্যেই তারা গ্রেভসকে পাঠিয়েছে।
–আমি পুলিসের কারোর কথা বলছি না। কেবল বেনামী চিঠি আর খুনের বিষয়ে অভিজ্ঞ হলেই চলবে না, এমন একজন দরকার যিনি মানুষকে জানেন, বুঝতে পারেন। আমাদের এখন এমন একজনকে দরকার যিনি মানুষের মনের খারাপ দিকটার পরিচয় জানেন।
আমি কিছু বলার আগেই মিসেস ডেন ক্যালথ্রপ বললেন, আমি নিজেই এব্যাপারে কিছু করতে চলেছি জানবেন।