আমি বললাম, পারট্রিজ রোজই বইগুলো ঝাড়পোঁছ করত। ওতে আমার হাতের ছাপ পাওয়াই সম্ভব।
একটু পরে থানা থেকে বেরিয়ে এলাম। ন্যাস আমার সঙ্গে এলেন।
পাহাড়ি পথে হাঁটতে হাঁটতে আমি জানতে চাইলাম, আপনাদের কাজ কিরকম এগোচ্ছে?
কাজের সুবিধার জন্য অনেক ঝাড়াইবাছাই করে আমরা গণ্ডীটা ছোট করে এনেছি।
–খুব ভাল কাজ। তাহলে আপনাদের হিসাবে কারা রইল?
–প্রথম নামটি মিস গিনচ। গতকাল বিকেলে কুম্বত্রকার একটা বাড়িতে তার একজন লোকের সঙ্গে দেখা করবার কথা ছিল। সে-বাড়ির রাস্তা সিমিংটনের বাড়ি ছাড়িয়ে গেছে। যাওয়া আসার সময় দুবারই ওই পথে ভার যাবার কথা।
একসপ্তাহ আগে যেদিন মিসেস সিমিংটন আত্মহত্যা করেন, সেইদিন তিনি বিকেলে বেনামী চিঠিটা পেয়েছিলেন। মিস গিনচ সেই দিনই সিমিংটনের অফিসের কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমি খবর নিয়ে জেনেছি সেদিন মিস গিনচ তিনটে থেকে চারটের মধ্যে অফিস। থেকে বেরিয়ে ডাকঘরে গিয়েছিলেন কিছু ডাকটিকিট কিনবার জন্য। সাধারণত অফিসের বয়ই এসব কাজ করে দেয়। তবে সেদিন মিস গিনচ নিজেই গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মাথা ভারি হয়ে আছে, কিছুক্ষণ খোলা হাওয়ায় হাঁটলে মাথাটা ছাড়তে পারে। তবে বেশিক্ষণ বাইরে ছিলেন না তিনি।
তবে ওই সময়টুকুই যথেষ্ট। বললাম আমি।
–হ্যাঁ। গ্রামের অন্য দিকে গিয়ে একটা চিঠি চিঠির বাক্সে ফেলে দিয়ে ফিরে আসার পথে সময়টা যথেষ্ট। তবে প্রশ্নটা হল, মিস গিনচকে সিমিংটনদের বাড়ির আশপাশে দেখেছে এমন একজনকেও খোঁজ করে পাইনি।
তারপর আর কার কার নাম আপনার তালিকায় আছে? জানতে চাইলাম আমি।
–আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, কোন একজনকেও আমরা বাদ দিতে চাইনি–যার ক্ষেত্রে সামান্য সম্ভাবনার আভাসও রয়েছে। গতকাল গার্ল গাইডের একটা সভায় যোগ দিতে ব্রেনটনে গিয়েছিলেন মিস গ্রিফিথ। তিনি সেখানে বেশ দেরি করেই পৌঁছেছিলেন।
–আপনি কি ভাবছেন যে
-না, তার ব্যাপারে কিছুই ভাবছি না। কেন না কিছুই জানি ন। মিস গ্রিফিথকে ভাল স্বভাবের বিশিষ্ট মহিলা বলেই বরাবর জেনে এসেছি।
কিন্তু গত সপ্তাহের ব্যাপারটা তার ক্ষেত্রে কি খতিয়ে দেখেছেন? ওর পক্ষে কি চিঠি বাক্সে ফেলা সম্ভব ছিল?
–হ্যাঁ, তা সম্ভব ছিল। বললেন ন্যাস, ওই দিন বিকেলে তিনি শহরে কেনাকাটা করছিলেন। মিস এমিলি বার্টনের সম্পর্কেও একই রিপোর্ট। গতকাল প্রায় একই সময়ে তাঁকে বাজারে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে।
আগের সপ্তাহে তিনি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য ওই রাস্তা ধরে সিমিংটনদের বাড়ি ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন।
বুঝতে পারছি। খুব বিশ্রী একটা ব্যাপার নিয়ে পড়তে হয়েছে আপনাকে। অদ্ভুত সব চিন্তা মাথায় নিয়ে মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে।
–ঠিকই বলেছেন, বললেন ন্যাস, যাদের সঙ্গে প্রায় সময়ই মেলামেশা করতে হচ্ছে। তাদের মধ্যেই একজন অধম্মাদ অপরাধী এই ভাবনাটা খুবই পীড়াদায়ক। যাইহোক, এর পর রয়েছেন মিঃ পাই–
–তার কথাও আপনি ভেবেছেন? বললাম আমি।
-হ্যাঁ। আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত চরিত্রের মনে হলেও খুব ভালো লোক তিনি নন। তার কোন অ্যালিবাই নেই। দুটো ঘটনার সময়েই তিনি বাগানে ছিলেন–একা।
-তাহলে দেখা যাচ্ছে কেবল মেয়েদেরই আপনি সন্দেহের তালিকায় রাখেননি?
–আমি বা গ্রেভস মনে করি চিঠিগুলোর পেছনে কোন পুরুষের হাত নেই। বরাবরই সেই কারণে আমরা মিঃ পাইকে বাদ দিয়েই ভেবেছি।
গতকালের ব্যাপারে আমরা প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। আপনার এবং আপনার বোনের ব্যাপারটা ঠিক আছে। মিঃ সিমিংটন অফিসে ঢোকার পর আর বেরোননি। ডাঃ গ্রিফিথ রোগী দেখতে অন্যদিকে গিয়েছিলেন। আমি সেসব জায়গাতেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি। আমাদের কাজে যে কোন খুঁত ছিল না নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন।
–আমি ধীরে ধীরে বললাম, আপনাদের সন্দেহভাজন মানুষদের মধ্যে চারজনকে পাওয়া যাচ্ছে–মিস গিনচ, মিঃ পাই, মিস গ্রিফিথ আর মিস এমিলি বার্টন–
–ভাইকারের স্ত্রীও রয়েছেন–এছাড়া আরও কয়েকজনের নাম বলা হয়নি
মিসেস ডেন ক্যালথ্রপ সম্পর্কে আপনাদের মতামত কি?
–ভাইকারের স্ত্রী খানিকটা খ্যাপাটে ধরনের। তার পক্ষে এসব কাজ করা অসম্ভব নয়। গতকাল বিকেলে তিনি বাগানে ছিলেন।
ন্যাস আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, ঠিক এমনি সময়ে বাধা পড়ল। থানার ঘরে ঢুকলেন ডাঃ ওয়েন গ্রিফিথ।
-হ্যাল্লো ন্যাস, শুনলাম আমার খোঁজ করেছিলেন?
-ইনকোয়েস্টের দিন ঠিক হয়েছে শুক্রবার। আশা করি তার মধ্যেই আপনার কাজ হয়ে যাবে?
–হ্যাঁ। মোরেসবি আর আমি আজ রাতেই শবব্যবচ্ছেদের কাজটা করব।
–আর একটা ব্যাপার ডাঃ গ্রিফিথ, ন্যাস বললেন, মিসেস সিমিংটন আপনার দেওয়া কিছু ওষুধ খাচ্ছিলেন, পাউডার জাতীয় কিছু
-হ্যাঁ, তাতে কি?
–আপনি তাকে লিখে দিয়েছিলেন ওগুলো বেশিমাত্রায় খেলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
-হ্যাঁ, ঠিক। ওই ওষুধের মাত্রা যাতে তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার তাগিদে বাড়িয়ে না ফেলেন তার জন্যই ওই হুঁশিয়ারি জানানো হয়েছিল। আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন ফেনটিন বা অ্যাসপিরিন বেশিমাত্রায় পড়লে হার্টের পক্ষে কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে। যাই হোক, মিসেস সিমিংটনের মৃত্যু যে সায়ানাইডে হয়েছিল এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।