-হ্যাঁ, বলেছিলেন, বললেন মিঃ পাই, তার কথায় অবশ্য শ্লেষ ছিল। বলেছিলেন, আজকাল কাজের লোকেরাও বাড়িতে ফোন করে কথা বলে।
–কথাটা আমারও আশ্চর্য লাগছে, আমার বাড়িতে কাজ করা অ্যাগনেস একাজ কেন করল? পারট্রিজ নিশ্চয়ই অবাক হয়েছিল।
–আপনার সেকেলে মনোভাব এখনো পাল্টায়নি মিস বার্টন, বললেন মিঃ পাই, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই সমাজে পরিবর্তনগুলো হয়। আজকাল বাড়ির কাজের লোকেরা একটু বেশি স্বাধীনতা পেয়ে থাকে, এ নিয়ে বকাঝকা করা চলে না।
আলোচনার মোড় ঘোরাবার উদ্দেশ্যে আমি বললাম, খুনের কথাটা খুব তাড়াতাড়িই দেখছি ছড়িয়ে পড়েছে।
-কেবল কি তাই–সঙ্গে গুজবও রয়েছে। বললেন মিঃ পাই, প্রথমে ছিল বেনামী চিঠি, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে খুন, লিমন্টকের মানুষ এরপর চনমনে না হয়ে পারে?
–এই দুটো ঘটনার মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে লোকেরা নিশ্চয় এরকম কিছু ভাবে না। বললেন এমিলি বার্টন।
–আপনি একেবারে খাপে খাপে মিলিয়ে দিয়েছেন, দারুণ, বলে উঠলেন মিঃ পাই, নিশ্চয় মেয়েটা কিছু জানত, তাই তাকে খুন করা হয়েছে। আপনার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়।
–সারাক্ষণই এসব শুনে চলেছি। আর ভাল লাগছে না।
বলে মিস এমিলি তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে হাঁটতে শুরু করলেন।
আমি মিঃ পাইয়ের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলাম, এসমস্ত ঘটনা মানে বেনামী চিঠি..খুন..এসব দেখেশুনে আপনার কি মনে হচ্ছে?
মাথা নিচু করে একমিনিট কি ভাবলেন মিঃ পাই। পরে গম্ভীরভাবে বললেন, দেখুন, পুলিস যা সাধারণত করে থাকে–হাতের ছাপ, হাতের লেখা এসব বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা–আমার ধারণা এভাবে বেশিদূর তারা এগুতে পারবে না। চরিত্র অনুধাবন করার পদ্ধতি অনুসরণ করাই এক্ষেত্রে সঠিক পথ। মানুষের কাজ, তাদের ভাবভঙ্গী, ভাবনাচিন্তার ধারা–এসব থেকেই প্রকৃত রহস্যের সন্ধান পাওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি।
এভাবে সম্ভব বলছেন? বললাম আমি।
–এ না হলে পুলিস কোনদিনই তার সন্ধান পাবে না।
–আপনি কার কথা বলতে চাইছেন? আমি অনুসন্ধিৎসু হলাম।
–ওসব কথা জিজ্ঞেস করবেন না মিঃ বার্টন, আমি দুর্নাম রটনার অপবাদ নিতে পারি না। কথাটা বলে তাড়াতাড়ি সরে পড়লেন মিঃ পাই।
.
আরও কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ ঘোরাঘুরি করে বাড়ির পথ ধরলাম আমি।
গতকালকের খুন সম্পর্কে অনেককেই মন্তব্য করতে শোনা গেল, কোন জঘন্য ভবঘুরের কাজ বলে।
লিটলফার্জে পৌঁছে দেখলাম ড্রইংরুমে জানালার ধরে বসে যোয়ানা একটা ছবি দেখছে।
–কি দেখছিস অমন মনোযোগ দিয়ে কোন নতুন বন্ধুর ছবি মনে হচ্ছে।
ওর পাশে বসতে বসতে বললাম।
-কাছাকাছি পৌঁছেছিস, হেসে ছবিটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল, দেখতো চিনতে পারিস কিনা?
ছবিটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলাম। কিন্তু কিছু বোধগম্য হল না।
–কি এটা? জানতে চাইলাম আমি।
–মনে হয় প্লীহা বা ওই জাতীয় কিছুর ছবি। ডাঃ গ্রিফিথের মনে হয়েছে এটা দেখলে, আমি খুশি হব, তাই দিয়ে গেছেন।
আমি আগ্রহের সঙ্গে ফটোটার দিকে তাকালাম। কিন্তু মোটেই ভাল লাগল না। যোয়ানাকে সে কথা বললাম।
–জিনিসটা খুব খারাপ দেখতে। আমার সঙ্গেও গ্রিফিথের দেখা হয়েছিল হাইস্ক্রিটে। তোর কিরকম মনে হল ওকে?
–ওকে কেমন ক্লান্ত লাগছিল। মনে হল কোন বিষয় নিয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে আছে।
-তোর কথাই হয়তো তার মন জুড়ে বসেছে। তাই অমন বিদঘুঁটে একটা প্লীহার ছবি তোকে দিয়ে গেছে।
বাজে বকিস না তো।
–বলে বিরক্তির সঙ্গে উঠে দাঁড়াল যোয়ানা। তারপর ঘর ছেড়ে ভেতরে চলে গেল।
প্লীহার ফটোটা রোদের তাতে পাকিয়ে যাচ্ছিল। আমি সেটা তুলে নিলাম। যোয়ানা বা আমার জিনিসটা পছন্দ না হলেও গ্রিফিথের কাজে লাগতে পারে। ওটাকে এভাবে নষ্ট হতে দেওয়া ঠিক হবে না।
বইয়ের সেলফ থেকে একটা মোটা বই টেনে বার করলাম। ওর মধ্যে চাপে রেখে পাকিয়ে যাওয়া ছবিটা ঠিক করা যাবে।
কিন্তু বইটা হাতে নিতেই অদ্ভুতভাবে সেটা খুলে গেল। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, বইয়ের মাঝখান থেকে বেশ কিছু পৃষ্ঠা নিখুঁতভাবে কেটে নেওয়া হয়েছে।
হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম বইটার দিকে। পরে গোড়ার পৃষ্ঠাটা খুলে দেখে নিলাম–বইটার ছাপা হওয়ার তারিখ লেখা হয়েছে ১৮৪০ খ্রিঃ।
চকিতে মাথায় খেলে গেল একটা কথা। এই বইয়ের কাটা পৃষ্ঠাগুলো থেকে অক্ষর কেটেই বেনামী চিঠিগুলো লেখা হয়েছিল।
কিন্তু কে এমন কাজ করতে পারে? কার পক্ষে এটা সম্ভব?
মিস এমিলি বার্টনের কথাই প্রথমে মনে পড়ল। পারট্রিজের হওয়াও অসম্ভব নয়। বাইরের কোন লোকও হতে পারে। হয়তো সে এমিলির জন্য অপেক্ষা করে কিছু সময় এঘরে ছিল।
কোন অতিথি যদি হয়ে থাকে, তবে কে সে? সমাজের অতি সম্মানিত একজন বলেছেন গ্রেভস। তাহলে কি মিঃ পাই? এমি গ্রিফিথ? না মিসেস ডেন ক্যালথ্রপ?
৬.২ মধ্যাহ্নভোজের পরে
মধ্যাহ্নভোজের পরে যোয়ানাকে নিয়ে ড্রইংরুমে এলাম। আমার অভাবিত আবিষ্কারটা ওকে দেখালাম। দুজনে মিলে ব্যাপারটা নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করলাম। পরে বইখানা নিয়ে থানায় রওনা হলাম।
গ্রেভস থানায় ছিলেন না। ন্যাস ও অন্যান্যরা সকলেই আমার আবিষ্কার দেখে আনন্দ প্রকাশ করলেন।
ন্যাস বললেন, যদিও জানি এখন আর কিছু পাওয়া সম্ভব নয়, তবুও একবার বইখানা পরীক্ষা করে আমাদের দেখতে হবে যদি কোন হাতের ছাপ পাওয়া যায়।