বললাম আমি, মেগান যে আমাকে ফোন করেছিল সে কথাটা ইচ্ছে করেই চেপে গেলাম।
–এলো না বলে, আশ্চর্য বলতে হবে, আপনি সবচেয়ে খারাপটাই ভেবে নিতে পেরেছেন। আর আপনার ভাবনাটাই সত্যি হল শেষ পর্যন্ত।
আমি অর্থহীন ভঙ্গীতে হাসলাম। কোন জবাব দিলাম না।
–লিমণ্টকে খুনের ঘটনা এই প্রথম ঘটল। তাই উত্তেজনা সকলের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিস এসব কি করে সামাল দেয় দেখা যাক।
-পুলিস সম্পর্কে আমি আশাবাদী, বললাম আমি, তাদের মধ্যে অনেক লক্ষ্য লোক রয়েছে।
-ওয়েলের কাছে শুনলাম, প্রথমে মাথায় মেরে ওকে অজ্ঞান করে ফেলা হয়, পরে মাথার পেছনে ছোরা বিধিয়ে মারে। মেয়েটার ছেলেবন্ধুই একাজ করেছে বলে আমার ধারণা। আপনার কি মনে হয়?
–এরকমই সম্ভব বলছেন? আমি প্রশ্ন করলাম।
–অসম্ভব কেন? ওদের নাকি খুব ঝগড়া হয়েছিল। শুনলাম মেগান হান্টার নাকি প্রথমে মৃতদেহটা দেখতে পেয়েছিল। বেচারি নিশ্চয় খুব শক পেয়েছে।
সত্যিই মেয়েটা মনে বড় চোট পেয়েছে। বললাম আমি।
সেই মুহূর্তে একটা কথা মনে পড়ে গেল আমার। ব্যাপারটা যাচাই করে নিতে চাইলাম এই সুযোগে।
–একটা কথা, মিস গ্রিফিথ, মেগানকে বাড়ি ফিরে যাবার কথা গতকাল আপনিই কি বলেছিলেন?
–তেমন জোর দিয়ে কিছু বলিনি অবশ্য।
–তাই বলুন, আমি বললাম, আমিও তাই অনুমান করেছিলাম।
এমি গ্রিফিথ আমার চোখের দিকে তাকালেন। পরে সতর্কতার সঙ্গে বললেন, মেয়েটার তো বয়স অল্প, সব ব্যাপারটা বুঝতে পারে না। তাই ওকে একটু সতর্ক করেই দিতে চেয়েছিলাম। কখন কি কথা ছাড়াবে–এখানে কেউ বলতে পারে না।
–কি কথা ছড়াবে?
আমি স্পষ্ট বিরক্তি প্রকাশ না করে পারলাম না।
–লোকে কি বলে সে সম্পর্কে মনে হয় আপনার কোন ধারণা নেই। আমার কানে অনেক কথাই আসে, তাই আমি জানি।
লোকেরা খারাপটাই বলে–আর যে মেয়েকে কাজ করে তার জীবিকা অর্জন করতে হয়, সহজেই সে অন্যের আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে।
–আপনি কি বলতে চাইছেন, ঠিক ধরতে পারছি না।
আমি সত্যিই ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিলাম। এর মধ্যে আবার জীবিকার প্রশ্ন আসছে কি করে?
-আমি এলসি হল্যাণ্ডের কথা বলছি, বুঝতে পারছেন না, বললেন এমি, লোকে যাই বলুক, আমার ধারণা ও সত্যিকার ভাল মেয়ে। লোকের কথায় কান দিয়ে বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে চাকরিতে জবাব না দিয়ে ও যথার্থ কর্তব্যই করেছে।
–লোকে কি বলছে?
এমির মুখে হাসি মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। খারাপ ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই আমার মনে হল।
লোকে বলাবলি করছে, ও দুই নম্বর মিসেস সিমিংটন হওয়ার চেষ্টা করছে। যে ভাবে সদ্য স্ত্রীহারা মানুষের সেবাযত্ন করে চলেছে
আমি বেশ ধাক্কা খেলাম। বললাম, এসব কী? মিসেস সিমিংটন মারা গেছেন সবে এক সপ্তাহ হল–
-আমিও তাই অসম্ভব বলেই ভাবছি, কাঁধ ঝাঁকিয়ে হাসলেন মিস গ্রিফিথ, মানুষের মন যে কি বস্তু তা তো জানেন। মেয়েটা তরুণী, তার ওপর বেশ সুন্দরী–লোকেরা যা চায় তার সবই রয়েছে। তবে যদি সত্যি সত্যি এমন কিছু ঘটনা থেকে থাকে, মেয়েটাকে আমি দোষ দিতে পারব না। সবমেয়েই ঘর আর বর চাইবে–এতে বিচিত্র কি?
আমার মুখ দিয়ে কথা সরছিল না। হাঁ করে তাকিয়ে মিস গ্রিফিথের কথা শুনে যেতে লাগলাম।
তবে এটা ঠিক, মিঃ সিমিংটন মেয়েটার মনের কথা কিছুই জানেন না। স্ত্রীর এমন মৃত্যুর পরে তার এখন দিশাহারা অবস্থা। মেয়েটা যেভাবে ভদ্রলোকের দেখাশোনার ভার নিজের হাতে তুলে নিয়েছে, তাতে তার নির্ভরশীল না হয়ে উপায় কি?
–তাহলে বলছেন, এলসি হল্যাণ্ড মেয়েটার অবস্থা বুঝেই সুযোগটা নিয়েছে?
–ঠিক সেকথা বলছি না, ইতস্তত করে বললেন মিস গ্রিফিথ, মেয়েটার জন্য আমার দুঃখ হয়। আসলে লোকের এসব কুৎসিত কথা ভেবেই মেগানকে আমি বলেছিলাম, ওর বাড়িতে যাওয়া উচিত। মিঃ সিমিংটন আর ওই মেয়েটা শুধু এই দুজন বাড়িতে থাকা ভাল দেখায় না।
আসল রহস্যটা এতক্ষণে ঝরঝরে হল আমার কাছে। আমি নির্বিকার দৃষ্টি ফেললাম মুখরা স্ত্রীলোকটির মুখের ওপর।
–আমাদের এই ছোট্ট শহরের মানুষজন খুব সুবিধার নয় মিঃ বার্টন। এরা সবকিছুর মধ্যেই কু খুঁজে বেড়ায়।
কথা শেষ করে হেসে বিদায় নিলেন মিস গ্রিফিথ।
.
গীর্জার কাছে এসে মিঃ পাইয়ের সঙ্গে দেখা হল। তিনি মিস এমিলি বার্টনের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
-সুপ্রভাত মিঃ বাৰ্টন, উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন মিঃ পাই, এমন একটা খবর যে আমাদের এই গ্রামে সৃষ্টি হবে, কল্পনা করতে পারিনি। এসব খবর রবিবারের খবরের কাগজে পেয়ে এসেছি এতকাল।
-সত্যিই বড় শোচনীয়। মিস বার্টন প্রতিধ্বনি তুললেন।
-আপনি এর মধ্যে নিশ্চয় উত্তেজনার খোরাকও পেয়েছেন মিস বার্টন, বলুন ঠিক বলছি কিনা। বেশ উপভোগ করছেন যে আপনার কথা শুনেই বুঝতে পারছি।
–মেয়েটা আমার কাছে কাজ করতে এসেছিল সরাসরি একটা অনাথ আশ্রম থেকে। সরল গ্রাম্য মেয়ে। তবে চমৎকার কাজের ছিল। পারট্রিজ ওকে খুব পছন্দ করত। বললেন মিস বার্টন।
গতকাল বিকেলে পারট্রিজের কাছে চা খেতে আসবে বলেও জানিয়েছিল, আমি বললাম। পরক্ষণে মিঃ পাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সম্ভবত কথাটা মিস গ্রিফিথ আপনাকে জানিয়ে থাকবে।
মিঃ পাইয়ের মনে যাতে সন্দেহ না হয় সেই উদ্দেশ্যেই আমি প্রসঙ্গক্রমে কথাটা উত্থাপন করলাম।