–হ্যাঁ, বলেছিল, গম্ভীরভাবে বললেন ন্যাস, আপনাদের কাজের লোক মিসেস এমোরিকে। কোন সমস্যায় পড়ে তার পরামর্শ নিতে চায়–এই ভাবেই সে কথাটা জানিয়েছিল।
-তাহলে মিসেস এমোরির মুখ থেকেই কথাটা বাইরে ছড়িয়ে থাকতে পারে। বলল যোয়ানা।
–আমারও তাই ধারণা মিস বার্টন। বললেন ন্যাস।
–একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারছি না, বললাম আমি, আমাকে আর আমার বোনকে নিয়ে ওই বেনামী চিঠি কেন লেখা হল? আমরা এখানে সম্পূর্ণ নতুন মানুষ। আমাদের ওপর কারোর তো রাগ থাকার কথা নয়।
-নবাগত তো কি, বললেন ন্যাস, বেনামী চিঠিলেখকের বিদ্বেষ যে কোন সুখী মানবিক মানুষের ওপরেই
-হ্যাঁ, মিসেস ডেন ক্যালQপও এরকমই বলতে চেয়েছিলেন। বলল যোয়ানা।
ন্যাস বললেন, মিস বার্টন, আমার একটা সন্দেহ, আপনার চিঠিটা আসলে মিস বার্টনকেই লেখা হয়েছিল। যদি চিঠির খামখানা ভাল করে লক্ষ্য করতেন, তাহলে ঠিক বুঝতে পারতেন।
–মিস বার্টনকে লেখা? এরকম কেন হতে যাবে? আশ্চর্য হল যোয়ানা।
–নামের ছোট্ট এ অক্ষরটা কৌশলে ইউ করে দেওয়া হয়েছিল, আমার সন্দেহ।
কথাটা শুনে আমিও ভাবিত হলাম। আগে এভাবে কখনো ভেবে দেখিনি।
ন্যাস চলে যাবার পরে যোয়ানাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হারে, সত্যিই তোর মনে হয়, চিঠিটা মিস বার্টনকে লেখা হয়েছিল?
-না, না, কখনোই না। সুপারিন্টেন্টে বললেই তো হবে না। তাহলে ওরকম কথা লেখা থাকত না।
পরে যোয়ানা বলল, তুই একবার শহর থেকে ঘুরে আয়। সকলে কি বলাবলি করছে তা শোনা দরকার।
–পুলিসের ধারণা বেনামী চিঠির লেখক কোন স্ত্রীলোক। লোকেরাও হয়তো সেরকমই ধারণা করে নিয়ে থাকতে পারে। বললাম আমি।
–পুরুষ হওয়াও বিচিত্র নয়। তবে বিশেষ ধরনের পুরুষদেরই এরকম মানসিকতা থাকে…অবদমিত কামোন্মাদনা। আমার একজনকে সন্দেহ হয়। বলল যোয়ানা।
–কার কথা বলছিস? জানতে চাইলাম আমি।
–মিঃ পাইকেই আমার সন্দেহ হয়। একাকীত্বের বিষণ্ণতায় মোড়া একজন অসুখী মানুষ। মানুষের বিরুদ্ধে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। নিশ্চয় লক্ষ্য করে থাকবি, এখানকার সব সুখী মানুষের প্রতিই তার ঘৃণা আর অবজ্ঞা রয়েছে। আর করেন কেমন বেয়ারা ধরনের সব কাজ-লোকে এ নিয়ে আড়ালে হাসিঠাট্টা করে।
-কিন্তু বেনামী চিঠি বিশেষজ্ঞ গ্রেভস বলেছেন, কোন মধ্যবয়স্কা অবিবাহিতা স্ত্রীলোক এসব বেনামী চিঠি লিখছে।
–মিঃ পাইও তাই, অবিবাহিত মধ্যবয়স্ক পুরুষ।
–কিন্তু যো, যতদূর দেখেছি, ওকে ঠিক মানাচ্ছে না।
–বাইরে থেকে এরকম মনে হওয়া স্বাভাবিক। পয়সাওয়ালা ধনী মানুষ। কিন্তু টাকাই তো মানুষের পরিপূর্ণতার পক্ষে যথেষ্ট নয়।
-উনি নিজেও কিন্তু ওরকম চিঠি পেয়েছেন।
প্রতিবাদ জানিয়ে যোয়ানা বলল, এসব কথা আমরা কেউই সঠিক জানি না। তার কাছে। শোনা, তার পক্ষে বানিয়ে বলা অসম্ভব কিছু না।
–আমাদের সুবিধে করে দেবার জন্য, বলছিস?
-হ্যাঁ। কোন রকম বাড়াবাড়ি করেন নি। বেশ বুদ্ধির সঙ্গেই কাজটা করেছেন, বলতে হবে।
–তাহলে তো বলতে হয়, উনি একজন পাকা অভিনেতা।
তাছাড়া আর কি। অভিনেতা না হলে এরকম কাজ করে চলা সম্ভব হয় কখনো?
যোয়ানার অভিনব আবিষ্কার আমার বিরক্তিরই সৃষ্টি করল। বললাম, এমন ভাব দেখাচ্ছিস, যেন তুই সব জেনে ফেলেছিস। বেনামী চিঠির লেখকের মানসিকতা বোঝা অত সহজ কাজ নয়, এটা মনে রাখিস।
তুই বলতে পারিস। কিন্তু, জেরি, আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি। আমার কথাই ধর না, যদি আমি তরুণী আর মোটামুটি সুন্দরী হাসিখুশি সুখী মানুষ না হয়ে জেলে থাকতাম আর সকলকে জীবন উপভোগ করতে দেখতাম, তাহলে আমার মনে এমন এক শয়তানীর জম্ম হত, যে সকল সুখী মানুষকে আঘাত করতে চাইত, কষ্ট দিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে চাইত।
একটু থামল যোয়ানা। আমার দিকে তাকিয়ে পরে বলল, পুলিস যদি এমনি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটাকে দেখার চেষ্টা করত, তাহলে মনে হয়, রহস্য ভেদ করা তাদের পক্ষে সহজ হত, ওই লোকটা, তুই যদি তার মানসিকতা অনুভব করবার চেষ্টা করিস, তাহলে সহজেই বুঝতে পারবি। এরপর এসব লোক কি করতে চাইবে তা অনুভব করাও তোর পক্ষে অসম্ভব হবে না।
অত সব ছাইপাঁশ ভাববার জন্য আমি এখানে এসেছিলাম, নাকি, বিরক্তির সঙ্গে বললাম আমি। ওসব অশ্লীল চিঠি আর খুনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলে কোনদিনই স্বাস্থ্য উদ্ধার হবে না।
.
যোয়ানার কথামতো হাইস্ক্রীটে এসে দেখলাম, এখানে ওখানে লোকের জটলা। কি নিয়ে তারা আলোচনা করছে অনুমান করতে কষ্ট হল না।
প্রথমেই চোখ পড়ল গ্রিফিথের ওপর। কেমন রুগ্ন আর ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে।
–দেখে মনে হচ্ছে খুবই ভেঙ্গে পড়েছেন। বললাম আমি।
হতে পারে। বেশ ঝামেলার কিছু কেস নিয়ে পড়েছি। বললেন গ্রিফিথ।
–বেনামী চিঠির লেখকও এরমধ্যে রয়েছে?
–অস্বীকার করি কি করে? এধরনের মানসিক অত্যাচার
–লোকটা কে হতে পারে, আপনার কোন ধারণা আছে?
–একদম না। তবে ধারণা করতে পারলে বোধহয় বেঁচে যেতাম।
কথা বলার ফাঁকেই দেখতে পেলাম ডাক্তারের বোন এমি আসছে। তার সঙ্গে কথা বলার উদ্দেশ্যে গ্রিফিথকে বিদায় দিলাম।
-শুনলাম, আপনি বেশ তাড়াতাড়িই ওখানে হাজির হয়েছিলেন?
প্রায় চিৎকার করে বলতে বলতে এগিয়ে এলো এমি।
-আসলে গতকাল রাতে মেয়েটার আমাদের বাড়িতে চা খেতে আসার কথা ছিল। আসেনি বলে অস্বস্তি বোধ করেছিলাম।