–বিকেলের ডাক সাধারণত আমিই ফেরার পথে বাক্স থেকে বের করে টেবিলের ওপর রাখতাম। অনেক সময় মিসেস সিমিংটন বাক্স থেকে চিঠি বের করে নিতেন।
–সেদিন বিকেলে বিছানা থেকে না ওঠায় অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি?
-কিছুই না। এরকম কিছু তো কল্পনা করাও যায় না। আমি রান্নাঘরে কেতলিতে জল ফুটছে দেখে আসার পর চোখে পড়ল মিঃ সিমিংটন হলঘরে কোট খুলছেন।
শুনতে পেলাম তিনি মোনা মোনা বলে ডাকলেন। সাড়া না পেয়ে তিনি দোতলায় উঠে মিসেস সিমিংটনের শোবার ঘরে যান। তারপরই তিনি অস্বাভাবিক কণ্ঠে আমাকে ডাকতে থাকেন। আমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাই।
তিনি বলেন, বাচ্চাদের যেন আমি সরিয়ে রাখি যাতে এ ঘরে না আসে। তারপরেই তিনি ডাঃ গ্রিফিথকে টেলিফোন করেন।
এরপর আর চায়ের কথা আমাদের কারু মনে ছিল না। সেই সাংঘাতিক ঘটনা, বাড়ির সমস্ত প্রাণচাঞ্চল্য যেন স্তব্ধ করে ফেলেছিল। উঃ, কী ভয়ংকর–দুপুরে খাওয়ার সময়ও মিসেস সিমিংটন এত হাসিখুশি ছিলেন।
ন্যাস এরপর প্রশ্নের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। বললেন, মিসেস সিমিংটন যে চিঠিটা পেয়েছিলেন, সে সম্পর্কে আপনার ধারণা কিরকম মিস হল্যাণ্ড?
চকিতে মুখ তুলে তাকালেন মিস এলসি হল্যাণ্ড, দৃঢ়স্বরে বললেন, অত্যন্ত জঘন্য। আমি ওসব একদম বিশ্বাস করি না। মিসেস সিমিংটন, কখনও এমন নীতিহীন কাজ করতে পারেন না। এজন্যই তিনি প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন।
ন্যাস নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকালেন। পরে বললেন, একটা কথা, মিস হল্যাণ্ড, আপনি কি এরকম চিঠি কখনো পেয়েছেন?
যেন চমকে উঠলেন এলসি। তার মুখ লাল হয়ে উঠলো।
-না-না, এরকম চিঠি আমি কখনও পাইনি।
–আপনি একটু ভেবে বলুন, মিস হল্যাণ্ড, বললেন ন্যাস, অবশ্য এটা ঠিক এরকম চিঠি পাওয়া খুবই মর্মান্তিক। লোকে তাই এরকম চিঠি পাওয়ার কথা চেপে যেতেই চায়। এসব চিঠিতে যা থাকে, আমরা জানি, সেসব মিথ্যা ছাড়া কিছু নয়। তাই বলছি, আপনার বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। ব্যাপারটা জানা আমাদের খুবই দরকার।
–কিন্তু সুপারিন্টেন্ডেন্ট, আমি সত্যিই পাইনি। আপনি বিশ্বাস করুন।
এলসি হল্যাণ্ডের মুখভাব কাঁদোকাঁদো হয়ে এলো। তিনি যে মিথ্যা বলছেন না, তা বিশ্বাসযোগ্যই মনে হলো।
এলসি হল্যাণ্ডকে বিদায় জানানো হলো। তিনি বাচ্চাদের কাছে চলে গেলেন। সুপারিন্টেন্টে কিছুক্ষণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন।
কয়েক মিনিট পরে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, মনে হয় তিনি সত্য কথাই বলছেন, কোন চিঠি পাননি।
-আমারও তাই মনে হয়। বললাম আমি।
–কিন্তু, আশ্চর্য যা, তা হল, তিনি কোন চিঠি পেলেন না কেন? অথচ…অথচ মহিলা সুন্দরী।
-একটু বেশি রকম সুন্দরীই বলা চলে। আমি সায় দিলাম।
-সুন্দরী এবং তরুণী। বেনামী চিঠির লেখকদের চোখ এমন একজনকে এড়িয়ে গেল কেন? প্রশ্নটা ভেবে দেখার মতো, কি বলেন?
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
–গ্রেভস বলেছিলেন, যারা চিঠি পায়নি তাদের কথাও তাকে জানাতে।
–আরও একজন এমন আছেন। মিস এমিলি বার্টনও কোন চিঠি পাননি।
–একথাটা আমার বিশ্বাস হয় না, বললেন ন্যাস; আমার ধারণা তিনি অবশ্যই চিঠি পেয়েছিলেন। একটা নয়, বেশ কয়েকটাও হতে পারে।
–আপনার এমন ধারণার কারণ কি?
-তার আগেকার পার্লারমেড ফ্লোরেন্স এলফোর্ডই আমাকে কথাটা বলেছে। ওই লেখকের ওপর খুবই রেগে আছে ফ্লোরেন্স।
–তাহলে এমিলি একেবারেই অস্বীকার করে গেলেন কেন কথাটা, বিশেষ করে পুলিস যখন তদন্তে নেমেছে?
-মিস বার্টন বরাবরই একটু অন্য ধরনের মহিলা। নোংরা অরুচিকর জিনিস এড়িয়ে চলতেই অভ্যস্ত তিনি। তাই ওরকম জঘন্য ভাষার চিঠির কথা বলতে স্বভাবতই সঙ্কোচ বোধ করছেন তিনি।
–ওর চিঠিতে কি লেখা ছিল, তা কি জানতে পেরেছেন?
–এসব মারাত্মক কথা যে লিখতে পারে সে বদ্ধ উম্মাদ ছাড়া আর কি। আশ্চর্য হচ্ছি এই লোকটিকে আপনারা খুঁজে বের করতে পারছেন না?
এবারে আমরা ঠিক খুঁজে বার করব অকে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন ন্যাস, এখানেই সে থামবে না, আরও চিঠি তাকে লিখতে হবে।
আমি ন্যাসের কথাটা মেনে নিতে পারলাম না। বললাম, যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, মনে হয় এইমুহূর্তে সে আর চিঠি লিখছে না।
লিখবে, না লিখে উপায় নেই তার। এ একধরনের রোগ। কেউ না কেউ চিঠি ঠিক পেতে থাকবে।
বাগানে মেগানের দেখা পেয়ে গেলাম। আগের মতোই আমাকে দেখে হাসিমুখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল।
-হাই, বার্টন
আমি মেগানকে বললাম, আমাদের ওখানে গিয়ে তো কদিন থেকে আসতে পার।
-তুমি বললে বলে আমার খুব ভাল লাগছে। কিন্তু এখন এখানেই থাকব ভাবছি। বাচ্চাগুলোকেও একটু দেখাশোনা করতে পারছি।
-ভাল কথা, যেভাবে ভাল থাকবে মনে করো তাই করবে।
–কিন্তু কিন্তু এরকম সাংঘাতিক কিছু ঘটলে তোমাকে ফোন করতে পারব তো?
–অবশ্যই। কিন্তু এরকম ভাবছ কেন তুমি?
–যা সব ঘটে চলেছে, কখন কি হয়
–যাই হোক, ওরকম ভয়াবহ কিছু আর আবিষ্কার করতে যেও না।
উঃ! বড় ভয়ানক সত্যি। আমার খুবই খারাপ লেগেছিল।
মেগানের সঙ্গে কথা শেষ করে ন্যাসকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। যোয়ানাকে সব কথা শোনাতে বসলাম। সেই ফাঁকে ন্যাস গেলেন পারট্রিজের সঙ্গে কথা বলতে।
কয়েক মিনিট পরেই ফিরে এলেন ন্যাস। জানালেন, নতুন কিছু তার কাছ থেকে পাওয়া গেল না।
–অ্যাগনেসের কথাটা ও কি কাউকে জানিয়েছিল? জানতে চাইল যোয়ানা।