আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম। মনে মনে আতঙ্কিত না হয়েও পারলাম না। বললাম, তবে নতুন কোন ঘটনা ঘটবার আগেই আমাদের কাজ শেষ করতে হবে-যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে আমাদের।
–বলেছেন ঠিক। তবে এটা জানবেন আমরা পুলিসরা বিভিন্ন দিকে কাজ করে চলেছি।
রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে ন্যাস জানালেন ইতিমধ্যে রোজ পুলিসকে দুবারে দুরকম কথা বলেছে। আরো একবার জেরা করার সময় সে যদি নতুন কোন কথা বলে তাহলে তা থেকে আসল সত্য প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে এই আশাতেই রোজের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। কথাটা অযৌক্তিক মনে হল না আমার।
রান্নাঘরে এসে দেখলাম, রোজ প্রাতরাশের বাসনকোসন পরিষ্কার করছে। আমাদের দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকালো।
তোমাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে এলাম রোজ। আশা করি ঠিক ঠিক জবাব দেবে।
খানিকটা কড়া স্বরেই বললেন ন্যাস।
-আমি তো বলেছি স্যর, অ্যাগনেসকে খুবই ভয় পেয়েছে বলে মনে হয়েছিল আমার। কিছু একটা নিয়ে খুব ভাবছিল।
-কেন ও ভয় পেয়েছিল এ নিয়ে কিছু ও বলেনি তোমাকে? জানতে চাইলেন ন্যাস।
–না। আমি জানতে চাইলে ভয়ে কেঁপে উঠে বলেছিল, একথা বললে সে প্রাণে বাঁচবে না।
ন্যাস মাথা নাড়লেন চিন্তিতভাবে।
–গতকাল বিকেলে তুমি কি করেছিলে মনে করে নিশ্চয় বলতে পারবে?
-হ্যাঁ স্যর। এখান থেকে বেরিয়ে আড়াইটার বাস ধরে বাড়ি ফিরে গেছি। বিকেলটা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কাটিয়েছি। তারপর রাত ৮-৪০ মিঃ বাস ধরে নেদার মিডফোর্ড থেকে ফিরে আসি। তবে স্যর, একমুহুতের জন্যও মনে স্বস্তি ছিল না। খুবই খারাপ লাগছিল। ভাল করে খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত করতে পারিনি।
রোজকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করার ছিল না। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আমরা এলসি হল্যাণ্ডের কাছে এলাম।
সে তখন বাচ্চাদের পড়ানোর কাজে ব্যস্ত ছিল। আমাদের দেখতে পেয়ে ওদের লেখার কাজ দিয়ে উঠে এলো।
বাচ্চাদের পড়াশোনার বিঘ্ন যাতে না হয় সেজন্য আলাদা একটা ঘরে বসালো আমাদের।
তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ন্যাস বললেন, মিস হল্যাণ্ড, একটা কথা শুধু আমাকে বলুন। মিসেস সিমিংটনের মৃত্যুর পর থেকে অ্যাগনেস কেন খুব মুষড়ে পড়েছিল, এ সম্পর্কে সে কি কিছুই জানায়নি?
-না স্যর, সে কিছুই জানায়নি। ও এমনিতে খুবই সরল প্রকৃতির মেয়ে ছিল। কথাও কম বলত।
-রোজের মতো ছিল না বলছেন। বললেন ন্যাস।
–হ্যাঁ। রোজ বড় বেশি বকে।
–গতকাল ঠিক কি ঘটেছিল যদি এবার দয়া করে বলেন
–যতটা মনে আছে বলছি শুনুন। গতকাল মধ্যাহ্নভোজ অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু আগেই হয়। তখন একটা বেজেছে। এরপর মিঃ সিমিংটন অফিসে ফিরে যান। অ্যাগনেস টেবিল গুছিয়ে রাখছিল। সেই সময় বাচ্চারা বাগানে খেলা করছিল। একটু পরে ওদের নিয়ে আমি বেড়াতে বেরোই।
ওদের কোথায় নিয়ে যান?
-মাঠের মধ্য দিয়ে কুম্বত্রকারে। ওরা ওখানে মাছ ধরতে চাইছিল। ছিপ নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম বলে, ওগুলো নিয়ে যাবার জন্য আবার ফিরে আসতে হয়েছিল।
–তখন কটা বেজেছিল?
–কটা বেজেছে–মনে হয়–তিনটে বাজতে খুব বেশি বাকি ছিল না। হ্যাঁ, মনে পড়েছে, বিশ মিনিট বাকি ছিল। মেগান তার সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল।
–আপনি ছিপের জন্য কখন বাড়ি ফিরে আসেন তাই জানতে চাইছিলাম।
–আপনি বাড়ি ফিরে এসে মেগান বা অ্যাগনেসকে দেখেছিলেন?
–মেগান ছিল না। অ্যাগনেসও বাড়ি চলে গিয়েছিল।
–তারপর আবার মাছ ধরতে চলে যান?
–হ্যাঁ। নদীর পাড় দিয়েই গিয়েছিলাম আমরা। তবে কিছুই ধরতে পারিনি। শূন্যহাতেই ফিরে এসেছিলাম আমরা।
বুধবারে আপনি চায়ের আসরে থাকেন?
-হ্যাঁ। মিঃ সিমিংটন ফিরে আসার পর আমি তাকে চা তৈরি করে দিয়েছিলাম। পরে বাচ্চাদের নিয়ে আমি পড়ার ঘরে যাই। মেগানও আমাদের সঙ্গে ছিল।
–আপনারা কটায় বাড়ি ফিরে এসেছিলেন?
-পাঁচটা বাজতে দশ মিনিট বাকি ছিল। মিঃ সিমিংটন ফিরে এসেছিলেন পাঁচটার সময়। তিনি সকলের সঙ্গে বসে পড়ার ঘরেই চা পান করেন। বাচ্চারা তাতে খুব খুশি হয়েছিল। চা পর্বের পর বাচ্চাদের নিয়ে খানিকক্ষণ খেলাধূলা করি। বেচারি মেয়েটার কথা ভাবলে বড় কষ্ট হয়–সারাটা সময় ও দেয়াল আলমারিতেই পড়েছিল।
–ওই আলমারির কাছে সাধারণত কেউ যায়?
-না, ওদিকে কেউ যায় না। দরকারী কোন জিনিস তো ওটার মধ্যে থাকে না। ক্কচিৎ কখনো যাওয়া পড়ত ওদিকে।
–তা, বাড়ি ফিরে আসার পরে অস্বাভাবিক কিছু কি আপনার চোখে পড়েছিল?
–ওহ না, স্যর, কিছুই তেমন চোখে পড়েনি।
–আচ্ছা, আগের সপ্তাহে
–যেই সপ্তাহে মিসেস সিমিংটন
–হ্যাঁ।
–ওহ, সেসব কথা মনে পড়লে এখনও শরীর অবশ হয়ে আসতে চায়।
–হ্যাঁ, সত্যিই ভয়ঙ্কর। সেদিন আপনারা সবাই বিকেলে বাইরে ছিলেন?
-হ্যাঁ। এ সময়টায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি সাধারণত বাইরেই থাকি। মনে আছে, সেদিন আমরা অনেক দূর–জলার দিকে গিয়েছিলাম।
আমরা ফিরে আসার সময় দেখতে পাই, রাস্তার অন্য ধার দিয়ে মিঃ সিমিংটন অফিস থেকে ফিরে আসছেন। ফিরে এসে চায়ের জল বসাই।
–আপনি মিসেস সিমিংটনের কাছে যাননি?
-না, যাইনি। ডাঃ গ্রিফিথ তাকে কিছু ওষুধ দিয়েছিলেন। সেটা খাওয়ার পরেই তার ঝিমুনি দেখা দিত। তাই ওই সময়টা তিনি বিছানাতেই থাকতেন।
বিকেলের ডাকে আসা চিঠি তাঁর কাছে কেউ নিয়ে যেত না?