তাছাড়া, অ্যাগনেস ওই দিন বিকেলে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল এই কথাটা তার কাছ থেকেও প্রচার হওয়া সম্ভব।
যাই হোক, এটা আশার কথা যে এভাবে গণ্ডীটা বেশ ছোট হয়ে এসেছে। এবার একটু ধৈর্য ধরে ঝাড়াই-বাছাই করে আমরা ঠিক অপরাধীকে খুঁজে বের করতে পারব।
-কাদের বাদ দেবার কথা ভাবছেন আপনি? জানতে চাইলাম আমি।
–যেমন ধরুন, স্কুলের শিক্ষিকারা। আর বিকেলে যেসকল মহিলা কেরানী কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ হতে পারে, তা আমি ভাবি না।
আর একটা ব্যাপার মিঃ বার্টন, সময় নিয়ে দুটো সূত্র আমাদের সামনে রয়েছে যা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। গতকাল বিকেল আর একসপ্তাহ আগে মিসেস সিমিংটনের মৃত্যুর দিন। গতকালের সময়টা ধরুন, সওয়া তিনটে, যখন রেণ্ডেলের সঙ্গে ঝগড়া হওয়ার পর অ্যাগনেস বাড়ি ফিরে আসে। আর একসপ্তাহ আগে চিঠিটা যখন আসে তার সময় চারটের মধ্যে।
গতকালের ব্যাপারটা নিয়ে কি ভাবছেন? বললাম আমি।
-কি ভাবছি? ন্যাস একটু থামলেন, পরে বললেন, আমার মনে হয় কোন মহিলা সদর। দরজায় ঘণ্টা বাজায়। বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গীই ছিল মহিলার। সে মিস হল্যাণ্ড বা মিস মেগানের খোঁজ করে। সে হাতে পার্শেল জাতীয় কিছুও নিয়ে আসতে পারে। সেই সময়েই কোন এক অসতর্ক মুহূর্তে আগন্তুক ভারি কিছু দিয়ে অ্যাগনেসের মাথার পেছনে আঘাত করে। তারপর ওকে ঘাড়ের পেছনে ছুরি দিয়ে আঘাত করে দলামোচা করে দেয়াল আলমারির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে।
-কিন্তু কোন স্ত্রীলোকের পক্ষে এই কাজটা বেশ শক্ত মনে হয় না কি? বললাম আমি।
ন্যাস তাকালেন আমার দিকে। ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন।
–দেখুন মিঃ বার্টন এসব বেনামী চিঠির পেছনে যে স্ত্রীলোকটি থাকতে পারে, সে মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ হতে পারে না। আর মানসিক ভারসাম্য যাদের থাকে না, তাদের দেহের শক্তি অন্যরকম হওয়াই সম্ভব। তাছাড়া অ্যাগনেসও তেমন একটা বড়সড় চেহারার ছিল না।
-অ্যাগনেসের দেহটা আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারা যাচ্ছে না। বললাম আমি।
-কাজটা পাকা বুদ্ধির বলতে হবে। দেহটা আবিষ্কারে দেরি হলে মৃত্যুর সময়ও সঠিক নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। ধরুন মিস হল্যাণ্ড যদি বাড়ি ফেরার পর মৃতদেহের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতেন কিংবা পড়ে আছে দেখতে পেতেন তাহলে ডাক্তার পরীক্ষা করে বলতে পারতেন দশ মিনিটের মধ্যে অ্যাগনেসের মৃত্যু হয়েছে কি না।
–অ্যাগনেসের মনে ওই মহিলা সম্পর্কে কোন সন্দেহ জেগেছিল বলে মনে করেন? চিন্তিতভাবে জানতে চাইলাম আমি।
অ্যাগনেসের মনে নির্দিষ্টভাবে কোন সন্দেহ জেগেছিল বলে মনে হয় না, বললেন ন্যাস, তবে অস্পষ্টভাবে কোন জিজ্ঞাসা জেগে থাকতে পারে।
খানিকটা কৌতূহলও হয়তো ছিল। ও ভাবতেই পারেনি, যে মহিলার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছে, সে তাকে খুন করতে পারে।
–আপনি এরকমই সন্দেহ করছেন? বললাম আমি।
–একটা ব্যাপার আমার বুঝতে ভুল হয়ে গিয়েছিল, বললেন ন্যাস, এসব বেনামী চিঠির লেখিকার মনে ভয়ের সঞ্চায় হয়েছিল।
হ্যাঁ, আমারও তাই সন্দেহ, ভয় থেকেই খুনটা করতে বাধ্য হয়েছিল সে। বিকৃত মানসিকতার মানুষের মনের ভয় বড় ভয়াবহ।
তবে এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন–এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে এমন একজন লোক, সমাজে যে গণ্যমান্য বলে স্বীকৃত, বেশ সম্মানের অধিকারী। তার বিরুদ্ধেই লড়াইতে নামতে হয়েছে আমাদের।
কয়েক মিনিট চুপ করে থাকলেন সুপারিন্টেন্টে ন্যাস। মুখ দেখে মনে হল, মনের তলায় কিছু হাতড়ে চলেছে।
-একবার রোজের সঙ্গে কথা বলা দরকার। আপনিও সঙ্গে থাকলে খুশি হব।
আমি অবাক হলাম। বললাম, আসব বলছেন? অবশ্য বলতে বাধা নেই, এরকম একটা ইচ্ছা আমার মনে ছিল। দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারিনি, ন্যাস কিভাবে নেবেন ভেবে।
একটু ইতস্তত করেই বললাম, বইতে দেখা যায়, গোয়েন্দারা যাকে সাহায্যের জন্য ডাকেন, সাধারণত তারাই অপরাধী প্রমাণিত হয়।
আপনার আহ্বানের পেছনেও কি–
উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠলেন ন্যাস। পরে বললেন, আপনার কথা শুনে না হেসে পারছি না। মিঃ বার্টন। বেনামী চিঠির লেখক হিসেবে আপনাকে ভাবা চলে না। আপনার কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্যই পেতে পারি আমরা।
–শুনে খুশি হলাম। আপনি তা কিভাবে আসা করছেন জানতে পারি কি?
-আপনি এখানে সম্পূর্ণ নবাগত বলেই এখানকার লোকজন সম্পর্কে ভোলা মনে ধারণা করতে পারবেন। সকলের সঙ্গে সামাজিক ভাবে মেলামেশারও ভাল সুযোগ আপনার রয়েছে, যা থেকে অনেক কিছু জেনে যাবার সম্ভাবনা আপনার রয়েছে।
–অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন সমাজের উঁচু মহলের সম্ভাব্য খুনীকে সন্ধান করবার জন্য আমাকে একজন গুপ্তচরের ভূমিকা নিতে হবে। বললাম আমি।
–বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে, আপনি নিশ্চয়ই আপত্তি করবেন না, মিঃ বার্টন?
একদম না। এখানকার নিরীহ মহিলাদের যে লোক মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে চাইছে, আর হতভাগ্য পরিচারিকাদের পরিকল্পিতভাবে খুন করছে, সেই ভয়ঙ্কর চরিত্রের কোন অপরাধীকে শাস্তি দেবার কাজে সাহায্যে জন্য যে কোন কাজ করতেই আমি রাজি আছি।
একজন দায়িত্বশীল সামাজিক মানুষের মতোই বলেছেন আপনি স্যর। আপনাকে কেবল এটুকু মনে করিয়ে দিতে চাই, আমরা এমন একজন সাঙ্ঘাতিক চরিত্রের স্ত্রীলোকের সন্ধানে নেমেছি, যে সাপের মতোই ভয়ঙ্কর আর বিপজ্জনক।