-তাহলে বাড়ি কি খালি থাকে?
–ওসব নিয়ে এখানে তেমন কেউ ভাবে না। তিনটে বাজার দশ মিনিট আগে পর্যন্ত অ্যাগনেস বাড়িতে একাই ছিল। তার বাইরে বেরুবার কোন তোড়জোড় ছিল না। অ্যাপ্রন আর মাথায় টুপি অবস্থায়ই ওকে আবিষ্কার করি।
-কিছু আন্দাজ করতে পেরেছেন–ঠিক কখন সে মারা যায়?
–সরকারি ডাক্তারের বক্তব্য হল দুটো থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে।
–কিভাবে মারা হয়, আমি জানতে চাই।
-প্রথমে অজ্ঞান করে ফেলা হয়–মাথার পেছনে ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে। পরে ছুঁচলো কোন জিনিস দিয়ে মাথার নিচে গেঁথে দেওয়া হয়। ফলে সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয়।
-এতো রীতিমত ঠাণ্ডা মাথায় খুন।
–আমারও তাই মনে হয়।
–কিন্তু এমন নৃশংসভাবে খুন করার উদ্দেশ্য কি?
–সঠিক কারণ জানার উপায় নেই। তবে আন্দাজ করতে পারি।
–কিছু একটা জানতে পেরেছিল বলে মনে করেন?
–হ্যাঁ, আমিও তাই মনে করি।
–এখানে কাউকে কিছু আভাস দিয়েছিল?
-সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কাউকে কিছু জানায়নি। রাঁধুনী জানিয়েছে মিসেস সিমিংটনের মৃত্যুর পর থেকেই ও কেমন ভেঙ্গে পড়েছিল। সে নাকি বারবারই বলতো, কি করবে বুঝতে পারছে না।
একটু থেমে বিষণ্ণ হাসলেন ন্যাস। পরে আবার বললেন, মেয়েটি যদি আমাদের কাছে আসত তাহলে হয়তো আজ তাকে এভাবে মরতে হত না।
সবসময় এরকমই ঘটে। মানুষ পুলিসকে এড়িয়ে চলতে চায়।
তবে ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারছি মিঃ বার্টন। সেদিন বিকেলে মিসেস সিমিংটন আত্মহত্যা করেন, সেদিন দুজন পরিচারিকারই ছুটিতে যাওয়ার কথা ছিল। দুজনেরই সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল। কিন্তু অ্যাগনেস বাড়ি ফিরে এসেছিল।
–কথাটা আপনি জেনেছেন?
-হ্যাঁ। ফ্রেড রেণ্ডেল নামে অ্যাগনেসের একজন ছেলেবন্ধু ছিল। সে মাছের দোকানে কাজ করে। বুধবারে দোকান বন্ধের পর সে অ্যাগনেসের সঙ্গে দেখা করত। পরে দুজনে একসঙ্গে বেড়াতে যেত।
ওই বুধবারে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। রেণ্ডাল একটা বেনামী চিঠি পেয়েছিল। তাতে জানানো হয়েছিল অ্যাগনেস অন্য কারও সঙ্গে মেলামেশা করছে। এই নিয়েই দুজনের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। তাই অ্যাগনেস রেগে গিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। ও বলেছিল, ফ্রেড এসে ক্ষমা না চাইলে ও আর তার কাছে যাবে না।
-তারপর?
-এবাড়ির রান্নাঘরটা বাড়ির পেছন দিকে। বাড়িতে ঢুকতে হয় সামনের গেট দিয়ে। রান্নাঘরের পাশ দিয়ে পেছনে একটা দরজা আছে ঢোকার।
এবারে অন্য একটা বিষয় লক্ষ্য করুন। ওই দিন বিকেলে মিসেস সিমিংটনের কাছে যে চিঠিখানা এসেছিল, তার খামের ওপরে একটা ব্যবহার করা ডাকটিকিট লাগানো ছিল। ডাকঘরের সিলের বদলে ওরকমই দেখতে একটা কালির ছাপ ছিল। চিঠিটা যে ডাকে আসেনি এটাই তার প্রমাণ। চিঠিটা কেউ হাতে করে বাক্সে ফেলে গিয়েছিল বলেই আমার বিশ্বাস।
-হ্যাঁ, তাই তো প্রমাণ হয়। বললাম আমি।
-সাধারণত পৌনে চারটে নাগাদ বিকেলের চিঠি বিলি হয়। মেয়েটি রান্নাঘরের উল্টোদিকে ভাড়ার ঘরে ছিল। সেখান থেকেই জানালা দিয়ে সে একজনকে চিঠি ডাকবাক্সে ফেলে যেতে দেখে থাকবে।
–তারপর এই যুক্তি যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে দেখা যাচ্ছে, অ্যাগনেস জানতো, বেনামী চিঠির লেখক কে? কিন্তু তাহলে সে জানাল না কেন?
ন্যাস বললেন, হ্যাঁ, সে কোন আভাস কাউকে কেন দিল না, সেটাই প্রশ্ন। আমার ধারণা, এমন একজনকে সে চিঠিটা বাক্সে ফেলতে দেখেছিল, যাকে সে বেনামী চিঠির লেখক হিসেবে কল্পনাও করতে পারেনি। সেই লোকটি সব সন্দেহের বাইরে ছিল। বুঝতেই পারছেন, ব্যাপারটা তার কাছে খুবই অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল। কথাটা কাউকে বলবে কিনা বুঝে উঠতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত ঠিক করেছিল পারট্রিজকেই জানাবে। তার পরামর্শ চাইবে।
–আপনার যুক্তি আমি স্বীকার করছি। বললাম আমি। এর পর ওই বেনামী চিঠির লেখক যেভাবেই হোক, ব্যাপারটা জেনে গিয়েছিল। কিন্তু কিভাবে এই জানাটা সম্ভব হয়েছিল বলে আপনি মনে করেন, সুপারিন্টেন্টে?
–যেমন ধরুন টেলিফোনের কথাটা। আপনি যখন ফোন করেন, তখন কে শুনে থাকতে পারে বলে মনে করেন?
আমি একটু চিন্তা করলাম। পরে বললাম, টেলিফোন আমিই প্রথমে ধরি। তারপর সিঁড়ির কাছে গিয়ে পারট্রিজকে ডাকি।
–নিশ্চয় মেয়েটির নাম করে ডেকেছিলেন?
–হ্যাঁ। নাম ধরেই ডেকেছিলাম।
–আপনার কথা কেউ শুনেছিল?
–হ্যাঁ। আমার বোন আর মিস গ্রিফিথ শুনে থাকতে পারে।
–মিস গ্রিফিথ? উনি ওখানে তখন ছিলেন?
আমি তখন সব খুলে বললাম–রেডক্রশের স্টলের কথা–সবজি তুলে রাখার কথা–যোয়ানার সঙ্গে তার আলোচনার বিষয় সবকিছু।
–এরপর উনি কি গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন?
–বলেছিলেন মিঃ পাইয়ের কাছে যাবেন।
–তাহলে, এটা পরিষ্কার এই দুটি পথেই কথাটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখানে গ্রামে এভাবেই সব কথা জানাজানি হয়ে থাকে।
কিন্তু কথাটা আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সামান্য একটা অর্থহীন টেলিফোনের কথা–এটার মধ্যে প্রচার করবার কি থাকতে পারে যে মিস গ্রিফিথ বা মিঃ পাই তা প্রচার করতে পারেন? আমার অবিশ্বাসের কথা জানালাম ন্যাসকে।
তিনি মৃদু হেসে বললেন, শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটা সত্যিই মিঃ বার্টন যে এখানে যে কোন কিছুই খবর হয়ে উঠতে পারে। তারপর ওদিকের কথাটাও ভাবুন। মিস হল্যাণ্ড, রোজ-অ্যাগনেস কি বলেছিল তারাও শুনে থাকতে পারে।