–শান্ত হও মেগান, আমি এসে গেছি। কি হয়েছে আমাকে খুলে বল।
–মেগান কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। থরথর করে কাঁপছে।
–আমি ওকে খুঁজে পেয়েছি।
–অ্যাগনেসকে?
–সিঁড়ির নিচে। একটা দেয়াল আলমারি আছে ওখানে, তার মধ্যে মাছ ধরার ছিপ, গলফের ক্যাপ আর টুকিটাকি জিনিস থাকে।
–অ্যাগনেস কোথায় ছিল? আমি জানতে চাইলাম।
–ওই আলমারির মধ্যে দলা পাকিয়ে ছিল–ভয়ঙ্কর ঠাণ্ডা–মরে কাঠ হয়ে গিয়েছিল।
–তুমি আলমারিতে কি দেখতে গিয়েছিলে?
–কিছু না। তুমি কাল রাতে টেলিফোন করেছিলে–আমরা সবাই ভাবছিলাম অ্যাগনেস কোথায় গেল। রাতে ওর জন্য আমরা অনেকক্ষণ বসেছিলাম।
রাতে একদম ঘুম হয়নি আমার। খুব সকালে উঠে পড়েছিলাম। তখন আমাদের রাঁধুনী রোজ কেবল উঠেছিল। রাতে অ্যাগনেস ফিরে আসেনি বলে রোজ খুব রেগে গিয়েছিল। আমি রান্নাঘরে বসেই একটু দুধ আর রুটি খেয়েছিলাম। রোজ তখন এসে বলে, অ্যাগনেসের বাইরে যাওয়ার জামা জুতো সবকিছু ওর ঘরেই রয়েছে। আমার কেমন মনে হল, ও বাড়ির ভেতরেই কোথাও আছে–বাইরে যায়নি। তখন সব জায়গায় খুঁজতে শুরু করি। আর–ওই আলমারিটা খুলতেই–তার ভেতরে ওকে দেখতে পেলাম
–পুলিসে কেউ খবর দিয়েছে? বললাম আমি।
-হ্যাঁ। আমার সৎবাবা ফোন করেছিলেন। তারা এসে গেছে। ওদের দেখে আমার কেমন মনে হল। তখনই তোমাকে ফোন করলাম। তুমি কিছু মনে করোনি তো?
-না, মনে করব কেন। তুমি…ওকে খুঁজে পাওয়ার পর তোমাকে কেউ ব্রাণ্ডি বা কফি দেয়নি?
মেগান আমার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাল।
ওইটুকু মেয়ে, অমন একটা মৃতদেহ আবিষ্কার করার পর তার স্নায়ুর অবস্থা কেমন হতে পারে, সিমিংটন পরিবারের কেউ একবার ভেবে দেখেনি।
পুলিসে খবর দিয়েই তারা কর্তব্য শেষ করেছে। মনে মনে সিমিংটনদের মুণ্ডুপাত না করে পারলাম না।
মেগানকে নিয়ে তখনই রান্নাঘরে গেলাম। মোটাসোটা গোলগাল চেহারার রোজ আগুনের পাশে বসে চা পান করছিল। আমাকে দেখেই সে কথা বলতে শুরু করল। রোজ খুবই ঘাবড়ে গিয়েছিল।
-রোজ, মেগান ওই মৃতদেহটা খুঁজে পেয়েছে। ওর মনে দারুণ চোট লেগেছে। কড়া করে এককাপ চা ওকে দাও।
পটেই চা ছিল। রোজ কাপে ঢেলে মেগানকে দিল। কয়েক ফোঁটা ব্রাণ্ডিও চায়ের কাপে ঢেলে দিল।
এরপর মেগানকে রোজের হেফাজতে রেখে আমি বাড়ির মধ্যে ঢুকলাম।
মিস এলসি হল্যাণ্ডের সঙ্গেই মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল প্রথমে।
–ওহ, মিঃ বার্টন, কি ভয়ানক ব্যাপার। কে এরকম কাণ্ড করল?
–অ্যাগনেস তাহলে খুন হল? বললাম আমি।
-কেউ ওর মাথার পেছনে আঘাত করেছিল। ওহ কি ভয়ঙ্কর। তারপর দলা পাকিয়ে আলমারিতে ঢুকিয়ে রেখেছিল। বেচারা অ্যাগনেস-ও তো কারো ক্ষতি করেনি–এমন বীভৎসভাবে কে ওকে মারল?
এলসি হল্যাণ্ড তেমন ঘাবড়ায় নি। স্নায়ুর বেশ জোর আছে।
–মিঃ বার্টন, আমি বাচ্চাদের কাছে যাচ্ছি। মিঃ সিমিংটন বলেছেন ওদের আড়ালে রাখবার জন্য, ওদের মনে যাতে আঘাত লাগতে না পারে।
-মেগান শুনেছি মৃতদেহটা আবিষ্কার করেছে। ওরও দেখাশোনা করা দরকার। রোজের কাছে বসিয়ে রেখে এসেছি ওকে–দেখবেন।
-ওহ্ নিশ্চয়ই। ওর কথা একদম ভুলে গিয়েছিলাম। বেচারা মেয়েটার নিশ্চয়ই দারুণ লেগেছে। আমি এখনই গিয়ে দেখছি।
আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এলসি হল্যাণ্ড দ্রুত ওপরে চলে গেল।
ঠিক তখনই হলঘরে ঢুকলেন সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট ন্যাস। তার পেছনে সিমিংটন।
আমাকে দেখে ন্যাস খুশি হলেন। বললেন, এখুনি আপনাকে টেলিফোন করতে যাচ্ছিলাম।
আমি কেন এসেছি সেকথা উনি জানতে চাইলেন না।
সিমিংটনকে ন্যাস বললেন, সামনের ঘরটা একটু ব্যবহার করতে চাই মিঃ সিমিংটন।
–নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। বললেন সিমিংটন। তাকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।
–আপনি কিছু এখনো মুখে দেননি মিঃ সিমিংটন। খালিপেটে খুনের মতো বিশ্রী ব্যাপারের মুখোমুখি হওয়া ঠিক নয়। আপনি, মিস হল্যাণ্ড আর মেগান সামান্য কফি মাংস খেয়ে নিন।
ন্যাস একজন পারিবারিক চিকিৎসকের মতোই কথাগুলো বললেন।
–ধন্যবাদ, সুপারিন্টেন্টে। আপনার কথাই মেনে নিচ্ছি। সামান্য হাসবার চেষ্টা করলেন সিমিংটন।
ন্যাস আমাকে নিয়ে ছোট ঘরটায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। বাড়ির সামনের দিকে একটা মাত্র জানালা এঘরে।
-কিভাবে আপনি খবরটা পেলেন মিঃ বার্টন? খুবই তাড়াতাড়ি এসে গেছেন। ন্যাস বললেন।
আমি তাকে মেগানোর টেলিফোনের কথা জানালাম।
–শুনলাম, গতকাল রাতে আপনি এখানে ফোন করেন? মেয়েটার ফেরার কথা জানতে চেয়েছিলেন?
আমি ন্যাসকে জানালাম অ্যাগনেস ফোন করেও পারট্রিজের কাছে যায়নি।
বুঝতে পেরেছি, চিন্তিতভাবে বললেন ন্যাস, সরাসরি খুন করা হয়েছে মেয়েটিকে। মনে হয় এমন কিছু ও জেনেছিল যা পারট্রিজকে জানাতে চেয়েছিল। কিছু কি জানিয়েছিল মনে। করেন?
-মনে হয় না, তাহলে পারট্রিজ জানাতে। আপনি ওকে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন।
–তাই করব। আগে এখানের কাজ শেষ করে নিই।
–সব জানতে পেরেছেন?
–মোটামুটি। ওদের আজ ছুটির দিন ছিল। দুই বোন এবাড়িতে কাজ করতো। ওদের একসঙ্গে ছুটির ব্যবস্থা মিসেস সিমিংটনই করেছিলেন।
-তারপর? জানতে চাইলাম আমি।
রাঁধুনী রোজ আসে মিটফোর্ড থেকে। ছুটির দিনে আড়াইঘণ্টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ে। অ্যাগনেসকেই মধ্যাহ্নভোজের বাসনপত্র গুছিয়ে রাখতে হতো। গতকালও রাঁধুনী দুটো পঁচিশে বেরিয়ে যায়। সিমিংটন অফিসে বেরিয়ে যান দশ মিনিট পরেই। পৌনে তিনটে নাগাদ এলসি হল্যাণ্ড বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়ে যান। পাঁচ মিনিট পরেই মেগান হান্টার সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায়। একমাত্র অ্যাগনেসেরই বাড়িতে থাকার কথা। সে সাধারণত তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে বেরিয়ে যায়।