যোয়ানা বলল, ভ্রমণ মানুষের মনকে উদার করে। অচেনা মানুষের সঙ্গেও আলাপ পরিচয়ের সুযোগ পাওয়া যায়।
–বেড়াতে যাওয়ার কথা কাগজে পড়ি। কিন্তু যেতে ভরসা হয় না। মালপত্র সামলানো–বিদেশের বন্দরে মুদ্রা বিনিময়–এসব ভাবলেই আমার গায়ে জ্বর আসে।
এরপর একসময় মিসেস ডেন ক্যালগ্রুপের প্রসঙ্গ উঠল।
–ভদ্রমহিলাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না, বললেন এমিলি, মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলেন
–কীসব কথা? জানতে চাইলাম আমি।
-আশা করা যায় না এমন সব কথা। তাছাড়া এমন ভাবে তাকান যে বড় অস্বস্তি হয়। ভাইকারের স্ত্রী হিসেবে অনেক বিষয়ে তার মানুষকে পরামর্শ দেওয়া উচিত, কিন্তু উনি কারো কোন ব্যাপারেই মাথা গলাতে চান না। লোকে কেমন যেন ভয় পায় ওকে।
–আশ্চর্য ব্যাপার। যোয়ানা বলে উঠল।
–অথচ উনি ভাল বংশের মেয়ে। খুবই প্রাচীন বংশ। ভদ্রমহিলার স্বামী খুবই বিদ্বান, আর অনুগতও।
এরপরেই মিস এমিলি আচমকা এখানকার স্কুলের শিক্ষিকার প্রসঙ্গে চলে এলেন।
–খুবই অপ্রিয় ধরনের এক তরুণী এই শিক্ষিকা। বললেন তিনি, অদ্ভুত রকমের লাল সে।
লক্ষ্য করলাম লাল কথটার ওপরে বেশ জোর দিলেন এমিলি বার্টন।
ফিরে আসার পথে যোয় না মন্তব্য করল, মহিলা খুবই ভাল।
.
রাতে নৈশ ভোজের সময় যোয়ানা পারট্রিজকে বলল, তোমাদের চায়ের আসর কেমন হল?
-ধন্যবাদ মিস, পারট্রিজ বলল, কিন্তু অ্যাগনেস আসেনি।
–সে কি! এলো না কেন? দুঃখপ্রকাশ করল যোয়ানা।
–কি জানি কি হল। ও নিজেই জানিয়েছিল, কিন্তু কথা ছিল, তাই আসতে চেয়েছিল। কেন এল না, কিছু জানালোও না। এই মেয়েগুলো যেন কেমন
–হয়তো শরীর খারাপ হয়েছিল। ফোন করে খবর তো নিতে পারতে। যোয়ানা বলল।
–ওহ, মিস, তা করেনি।
বেশ রাগতস্বরে বলে পারট্রিজ রান্নাঘরে চলে গেল।
–আসলে কি ব্যাপার হয়েছে আমি বলতে পারি, আমি বললাম যোয়ানাকে, ছেলেবন্ধুর সঙ্গে মিটমাট হয়ে গেছে অ্যাগনেসের, তাই সে আসতে দেয়নি।
-তাই হবে হয়তো। হেসে বলল যোয়ানা।
একটু থেমে হঠাৎ বলে উঠল, আজ ঠিক এক সপ্তাহ হল, মিসেস সিমিংটন আত্মহত্যা করেছেন। পুলিস এতদিনে নিশ্চয় কোন সূত্র পেয়ে থাকবে।
অন্যমনস্কভাবে যোয়ানার কথায় সায় দিলাম। আমার মনে কেমন একটা অস্বস্তি বোধ করছিলাম। কেমন একটা সন্দেহের অনুভূতি যেন। ঠিক বুঝতে পারছিলাম না অবচেতন মনে কি হচ্ছিল।
-কি ব্যাপার জেরি, চুপ করে আছিস কেন?
–আমার অন্যমনস্কতা যোয়ানা ঠিক লক্ষ্য করল। সপ্তাহ হয়ে গেল…মিসেস সিমিংটন আত্মহত্যা করেছেন…ওই দিন বিকেলে তিনি বাড়িতে একাই ছিলেন…বাড়ির কাজের লোকেরা সেদিন তাদের সাপ্তাহিক ছুটিতে ছিল..
আমি আচমকা বলে উঠলাম, আচ্ছা যো, পরিচারিকারা সপ্তাহে একদিন ছুটি পায় তাই না?
–হ্যাঁ, এটাই নিয়ম। বলল যোয়ানা।
সহসা আমি এগিয়ে গিয়ে ঘন্টা বাজালাম। শব্দ শুনে পারট্রিজ এসে দাঁড়াল।
–একটা কথা জিজ্ঞেস করব তোমাকে পারট্রিজ। অ্যাগনেস উড কি এখনও কাজ করে?
–হ্যাঁ স্যর, সিমিংটনদের বাড়িতে কাজ করে।
আমার চিন্তাধারা কোন দিকে বইছিল আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। নিজের অজ্ঞাতেই ঘড়ির দিকে চোখ গেল। দেখতে পেলাম রাত দশটা বাজে।
-এখন তাকে মনে হয় বাড়িতে পাওয়া যাবে।
–দশটার মধ্যে তো ফিরে আসা উচিত।
–আমি একবার টেলিফোন করে দেখি।
আমি হলঘরে এলাম। যোয়ানা আর পারট্রিজ আমাকে অনুসরণ করল।
–টেলিফোন করার কথা ভাবছিস কেন জেরি? যোয়ানা অবাক হয়ে জানতে চাইল।
ততক্ষণে আমি রিসিভার তুলে নিয়েছি। বললাম, মেয়েটার আজ ছুটির দিন। ঠিকমতো বাড়ি ফিরল কিনা, নিশ্চিত হতে চাইছি।
টেলিফোনে ওপ্রান্ত থেকে সাড়া দিল এলসি হল্যাণ্ড। পরিচয় জানিয়ে বললাম, আপনাদের বিরক্ত করছি বলে দুঃখিত। আপনাদের কাজের লোক অ্যাগনেস ফিরেছে?
নার্সারি গভর্নের্সকে অনুরোধ করলাম মেয়েটার খোঁজ নেবার জন্য।
মিনিট দুই পরে ওপ্রান্ত থেকে মিঃ সিমিংটনের গলা শোনা গেল।
–হ্যাল্লো বার্টন, কি ব্যাপার?
–আপনার পরিচারিকা অ্যাগনেস ফিরেছে কিনা জানতে চাইছিলাম।
–মিস হল্যাণ্ড এই মাত্র খবর নিয়ে এলেন ও এখনো ফেরেনি। কোন দুর্ঘটনা বা ওরকম কিছু ভাবছেন নাকি?
-না, কোন দুর্ঘটনা নয়, তবে হলে অবাক হব না।
.
০৭.
সকালে ঘুম ভাঙ্গল সাতটায়। রাতে ভাল ঘুম হয়নি। নানান চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে। বেনামী চিঠিগুলো কে লিখেছে তা জানার একটা সূত্র যেন মনে পড়ে পড়েও পড়ছিল না।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছি, হলঘরে টেলিফোন বেজে উঠল। তাড়াতাড়ি এসে রিসিভার তুলে নিলাম।
–হ্যাল্লো–
-ওহ্, তুমি উঠেছ, মেগানের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, কেমন ভয় মাখানো, কী সাংঘাতিক, শিগগির, এসো
–আসছি। এখনই আসছি।
সাংঘাতিক কিছু একটা যে ঘটেছে বুঝতে অসুবিধা হল না। কিন্তু কি ঘটতে পারে?
যোয়ানাকে ডেকে বললাম, আমি সিমিংটনদের ওখানে যাচ্ছি। মেগান ফোন করেছিল—
যোয়ানা বলল, কি হয়েছে ভাবছিস?
–মনে হয় পরিচারিকা অ্যাগনেসকে নিয়ে কিছু হয়েছে।
আধঘণ্টার মধ্যে দাড়ি কামিয়ে, স্নান করে পোশাক পরে গাড়ি বের করে সিমিংটনের বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
মেগান আমার জন্যই হয়তো অধীর হয়ে পথের দিকে তাকিয়েছিল। গাড়ি থেকে নামতেই দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
-ওহ, জেরি তুমি এসেছে।