–অ্যাগনেস ওডেল এসময় আবার কি চায়? বলতে বলতে পারট্রিজ এসে রিসিভার তুলে নিল। আমি ডাইনিংরুমে চলে এলাম। মেগান টেবিলে বসে মাংস খাচ্ছিল।
আমি একটা চেয়ারে বসে পাইপে তামাক ভরতে শুরু করলাম। একটু পরেই যোয়ানা ঢুকল ঘরে।
–কি জঘন্য সব সেকেলে রীতিনীতি। সেখানে মানুষের দাম এত কম ছিল ভাবা যায় না।–
-কেন কি হল? জানতে চাইলাম আমি।
-আগে নাকি এবাড়িতে ঝি চারকদের টেলিফোনে কথা বলা বা ছুটির দিনে কোন বন্ধুকে চা খেতে বলার নিয়ম ছিল না। চিন্তা কর একবার–ওরা কি মানুষ নয়?
ব্যাপারটা খুলে না বললে বুঝি কি করে? বিরক্তির সঙ্গে বললাম?
–পারট্রিজ ক্ষমা চাইছিল, অ্যাগনেস বলে কে একজন তাকে টেলিফোন করেছে বলে। আগে এসব নাকি এ বাড়িতে চলত না। অ্যাগনেস মেয়েটি আগে এ বাড়িতেই নাকি কাজ করত। বয়স ষোল-সতেরো হবে–একেবারেই বাচ্চা। নিজের আত্মীয়স্বজন কেউ নেই বলে দরকার হলে পারট্রিজের কাছেই আসত। আজ বিকেলে সে আসতে চেয়েছে, সেকথাই টেলিফোনে জানিয়েছিল। তাকে আসার কথা বলবে কিনা, সেকথা জানতে চাইছিল পারট্রিজ।
–তা তুই কি বলেছিস?
–আমি বললাম, সে কাউকে চা খেতে আসতে বলবে এতে আমাদের আপত্তি করার কি আছে। মানুষ মানুষের সঙ্গে কি অমানবিক ব্যবহার করতো, চিন্তা করে দেখ একবার জেরি।
–ওসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। বললাম আমি।
মেগানের খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। সে এগিয়ে এসে বলল, আমি আজই বাড়ি চলে যাব ভাবছি।
-সেকি, কেন? আমি হতাশ স্বরে বলে উঠলাম।
-আপনাদের এখানে আমি খুব ভাল থাকলাম। আপনারা সত্যিই খুব ভাল। কিন্তু আমাকে এখন ফিরে যেতে হবে। ওটাই যে আমার বাড়ি।
–তা বলে আজই চলে যাবে? বলল যোয়ানা।
মেগানকে আমরা দুজনেই অনেক বোঝালাম তার মত বদল করার জন্য। কিন্তু ও একেবারে গোঁ ধরে রইল।
অগত্যা বোয়ানা কিছুক্ষণের মধ্যেই ওকে গাড়ি করে নিয়ে রওনা হয়ে গেল।
যোয়ানা যখন ফিরে এলো আমি তখন বাগানে ঘাসে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার কাছে এসে প্রশ্ন করল, সূর্যঘড়ি হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
.
মধ্যাহ্নভোজের কিছু আগেই ওয়েন গ্রিফিথ তাঁর গাড়ি নিয়ে এলেন। মালী কিছু সবজি তুলে রেখেছিল। গাড়িতে তুলে দিল।
আমি ওয়েন গ্রিফিথকে ভেতরে নিয়ে এসে কিছু পানীয় দিয়ে অভ্যর্থনা করলাম। মধ্যাহ্নভোজের জন্য অনুরোধ করলাম, কিন্তু রাজি হলেন না।
যোয়ানা হেসে বলল, মন বদলে ফেলুন ডঃ গ্রিফিথ। আমাদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে থেকে যান।
–কিন্তু এমি যে অপেক্ষা করে থাকবে। কথা বলতে গিয়ে কেমন লাল হয়ে উঠলেন ওয়েন।
-আমি তাকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি। বলে যোয়ানা ফোন করতে উঠে গেল।
ওয়েন গ্রিফিথ এরপর মধ্যাহ্নভোজে থেকে গেলেন। বেশ জমিয়েই আড্ডা দিলাম আমরা। সাহিত্য, নাটক, রাজনীতি কোন কিছুই আলোচনা করতে বাকি রাখলাম না।
কিন্তু লিমণ্টকের বেনামী চিঠি বা মিসেস সিমিংটনের আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে একবারও কথা বললাম না কেউ।
আমার মনে হলো আমাদের সঙ্গ বিশেষ করে যোয়ানার, বেশ উপভোগ করলেন ওয়েন। উৎফুল্ল মনেই বাড়ি ফিরে গেলেন।
.
ওইদিন বিকেলেই এমিলি বার্টনের বাড়িতে আমাদের চা পানের নিমন্ত্রণ ছিল। আমরা পায়ে হেঁটে গেলেও একটু আগেই পৌঁছে গেলাম।
এমিলি বার্টনের বিশ্বস্ত পরিচারিকা ফ্লোরেন্স দরজা খুলে আমাদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসাল।
মিস বার্টন বাইরে গিয়েছিলেন। কয়েক মিনিট পরেই তিনি দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন।
–সকালের কেকগুলো ভাল ছিল না, তাই কয়েকটা টাটকা কেক আনতে গিয়েছিলাম। বলে নিজের অনুপস্থিতির জন্য ক্ষমা চাইলেন তিনি।
–আমরা আগেই এসে পড়েছি মিস বার্টন। বলল যোয়ানা।
–আপনাদের পেয়ে কত যে আনন্দ হচ্ছে। মনের মতো কাউকে তো এখানে পাওয়া যায় না।
কথা বলতে বলতেই প্রায় হুটোপুটি করেই তিনি ছোট ছোট টেবিলের ব্যবস্থা করে ফেললেন আমাদের জন্য।
কয়েক মিনিট পরে ফ্লোরেন্স কয়েকটা ক্রাউন ডার্বি কাপ আর চায়ের পট নিয়ে হাজির হল।
চীনা চায়ের সঙ্গে স্যাণ্ডউইচ রুটি, মাখন আর ছোট আকারের কিছু কেকের আয়োজন ছিল। বেশ জমে গেল।
আমাদের কথাবার্তা স্বাভাবিক পথ ধরে চলছিল। এমিলি বার্টন ডাঃ গ্রিফিথের চিকিৎসার প্রশংসা করলেন।
সিমিংটন যে একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ তা-ও বারবার জানালেন। বললেন, তার চেষ্টাতেই এমিলি তার কিছু টাকা আয়কর দপ্তরের কাছ থেকে আদায় করে নিতে পেরেছেন।
কথাপ্রসঙ্গে মিসেস সিমিংটনের কথা উঠে পড়ল। এমিলি বার্টন দুঃখপ্রকাশ করে বললেন, বেচারি মারা যাওয়ায় বাচ্চারা অকালে মাতৃহারা হল। কী যে হয়ে গেল। আচমকা নিশ্চয় মাথার গোলমাল হয়ে গিয়েছিল, নইলে বাচ্চাদের কথা তার মনে পড়ত।
–ওই বেনামী চিঠি তাকে প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছিল। বলল যোয়ানা।
–কিন্তু ওসব বিষয় নিয়ে আমার আলোচনা করতে ভাল লাগে না। ভারি নোংরা বিষয়। এসব অগ্রাহ্য করাই উচিত আমার মনে হয়।
আমিও স্বীকার করলাম। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে এমি গ্রিফিথের কথা তুললাম। এমিলি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। বললেন, উনি খুবই বাস্তবঘেঁষা আধুনিক মনের মানুষ। ভাইয়ের জন্য যথেষ্ট স্বার্থ ত্যাগ করেছেন।
যোয়ানা আমার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসছিল। আমি প্রসঙ্গ বদল করে মিঃ পাইয়ের কথায় এলাম।
এমিলি বার্টন এবারে অতটা উচ্ছ্বসিত হতে পারলেন না। বললেন, এমনিতে বেশ সদাশয় মানুষ। পয়সা আছে তবে অহঙ্কার নেই। মাঝে মাঝে তার কাছে অনেক অচেনা লোক আসে। বাইরে অনেক ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি, তাই অনেকের সঙ্গেই আলাপ পরিচয় আছে।