সিমিংটন অনেকটা উত্তেজিত ভাবে উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, আমার স্ত্রীকে খুন করা হয়েছে, তাকে প্রায় ছোরা মারা হয়েছে। চিঠি লিখে যে শয়তান এই জঘন্য কাজ করেছে, আপনারা তাকে ধরতে পারবেন আমি তাই আশা করছি। সে হয়তো ব্যাপারটা উপভোগই করছে-ওহ।
কথা শেষ করে ঘর ছেড়ে চলে গেলেন সিমিংটন।
–সে কি ভাবতে পারে গ্রিফিথ?
সিমিংটনের বলে যাওয়া শেষ কথাটাই আমি জানতে চাইলাম ডাক্তারের কাছে। কেন না, মনস্তত্ব ব্যাপারটা ওরই আওতায় পড়ে।
অনুতপ্ত হওয়া অসম্ভব নয়। নিজের ক্ষমতা দেখে আনন্দও হতে পারে। বিকৃত মনের উম্মাদনা কিছুটা শান্ত হতে পারে। বললেন গ্রিফিথ।
কিন্তু, আমার মনে হয় মিসেস সিমিংটনের মৃত্যু তাকে ভীতই করে থাকবে, সে আবার চেষ্টা করবে বলে মনে হয় না।
–মানুষ জলের জন্য বারবার কুয়োর কাছে যায়, বললেন, ন্যাস, আমাদের কাছে সেটা অত্যন্ত কাজের হবে। মনে রাখবেন সে আবার চেষ্টা করবে। বললেন ন্যাস।
তা যদি হয়, তাকে পাগলই বলব। বললাম আমি।
–একাজ সে না করে পারে না, গ্রেভস বললেন, একধরনের পাপবোধ তাকে দিয়ে এ কাজ করাবে।
–আমাদের আলোচনার শেষে একটা অনুরোধ আপনাদের করছি। দয়া করে চোখ-কান খোলা রাখবেন। বেনামী কোন চিঠি কেউ পেলে তা পুলিসকে জানাবার কথা বুঝিয়ে বলবেন।
এরপর গ্রিফিথের সঙ্গে আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। রাস্তায় চলতে চলতে বললাম, নিরিবিলি শান্ত সুন্দর জায়গা ভেবে স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে এলাম এখানে, এখন দেখছি ভুলই করেছিলাম চিনতে। এমন বিষাক্ত জায়গা–আপনার কি মনে হয় গ্রিফিথ, ওরা কি কিছু বুঝতে বা জানতে পেরেছে?
-পুলিসের কাজের পদ্ধতি যা তাতে কিছু নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। মনে হয় ওরা সরলভাবে সব বলছে, আসলে ওরা কোন কথাই জানায় না।
–এখানে এমন মানসিক বিকারগ্রস্ত পাগল কেউ থাকলে আপনারই তো জানা উচিত। আমি বললাম।
মুখে কোন কথা বললেন না গ্রিফিথ। কেবল হতাশ ভাবে মাথা ঝাঁকালেন।
আমরা হাইস্ট্রিট ধরে হাঁটছিলাম। বললাম, যোয়ানকে নিয়ে এখান থেকে সরে পড়তে পারলেই হয়তো ভাল হত। কিন্তু আমি যাব না। শেষ দেখে যেতে চাই।
সামনেই আমার বাড়ির এজেন্টের অফিস। দ্বিতীয় দফায় টাকাটা জমা দেবার জন্য একবার যাওয়া দরকার। গ্রিফিথকে কথাটা জানিয়ে অফিসের পাল্লা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম।
একজন স্ত্রীলোক টাইপ করছিলেন। তিনি উঠে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। মহিলার মাথার কোঁকড়ানো চুলের দিকে তাকিয়ে মনে হলো আগে কোথায় যেন দেখেছি। একটু চিন্তা করতেই মনে পড়ে গেল আচমকা। মিঃ সিমিংটনের মহিলা কেরানী ছিলেন, মিসেস গিনচ। কথাটা তাকে বললামও।
–আপনাকে মনে হয় গলব্রেথ আর সিমিংটনের অফিসে দেখেছিলাম।
-হ্যাঁ। আগে ওখানে ছিলাম, বললেন মহিলা, টাকা কিছু কম হলেও এখানে চলে আসাই ভাল মনে হল। টাকাই তো সব নয়।
–নিঃসন্দেহে। বললাম আমি।
–মিঃ সিমিংটন আর আমাকে জড়িয়ে লেখা বিশ্রী একটা চিঠি আমি পাই। কী জঘন্য ভাষায় লেখা! আমি অবশ্য সেটা পুলিসের হাতে দিয়ে এসেছি। নিরূপায় হয়েই কাজটা আমাকে করতে হয়েছে।
–আপনি ঠিক কাজই করেছেন। বললাম।
–জানি লোকে এটা নিয়ে আলোচনা করছে। কিন্তু এটা সত্যি বলেই জানবেন মিঃ বার্টন, সিমিংটন আর আমার মধ্যে খারাপ কিছু ছিল না।
অপ্রীতিকর হলেও কথাটা আমাকে এভাবে বলতে হচ্ছে। অবাক হয়ে ভাবি মানুষের মন কত কদর্যতায় ভরা।
মিসেস গিনচের কথার সুরে অস্বস্তির ভাব থাকলেও আমার কেন যেন মনে হল, তিনি ব্যাপারটা বেশ উপভোগই করছেন। তার এই অস্বস্তির ভাবটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতই যেন মনে হল।
৬.১ মিসেস ডেন ক্যালথ্রপ
০৬.
বাড়ি ফিরে আসতেই যোয়ানা বলল, মিসেস ডেন ক্যালথ্রপ এতক্ষণ বকবক করে গেলেন। মহিলাকে আমার পাগল বলেই মনে হয়, জানিস?
–কেন, কি বলে গেলেন তিনি? আমি জানতে চাইলাম।
–বলতে চাইলেন, মিসেস সিমিংটন স্বার্থপর আর বকাটে ধরনের মহিলা ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ভয় পাওয়ার মতো মোটেই ছিলেন না। তার ধারণা এখানে এমন কেউ একজন রয়েছে, যে ভয়ঙ্কর রকমের অসুখী। সেই এসব চিঠির মাধ্যমে মনের বিষ ছড়িয়ে চলেছে। আর সেই বিষেই ঘায়েল হয়েছেন মিসেস সিমিংটন।
যোয়ানা আমাদের জিজ্ঞেস করল, তোর কি মনে হয় জেরি, সত্যিই কোন অসুখী ঈর্ষাকাতর লোক এসব চিঠি লিখছে?
–আমি ওসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না যো। আমার শুধু দুঃখ হয়, যারা ওই শয়তানের শিকার হচ্ছে।
.
পরদিন সকালে প্রাতরাশ শেষ করার পর পরই এলেন এমি গ্রিফিথ। মেগান ড্রইংরুমে চলে গিয়েছিল।
রেডক্রশ থেকে মেইন রোডে একটা স্টল তৈরি হয়েছে। সেই খবর জানিয়ে এমি গ্রিফিথ বললেন, কিছু তরিতরকারী তুলে রাখতে, ওয়েন গ্রিফিথ ফেরার পথে নিয়ে যাবেন।
যোয়ানা বলল, সবজির ব্যাপারটা আমি একেবারেই কিছু বুঝি না। ঠিক আছে, যা পারি কিছু তুলে রাখব।
এমি চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই টেলিফোন বেজে উঠল। এগিয়ে গিয়ে রিসিভার তুলে নিলাম।
-হ্যাল্লো, বলুন।
ওপাশ থেকে মেয়েলীকণ্ঠ ভেসে এল–এটা কি লিটল ফার্জ?
–হ্যাঁ, বলুন, কাকে চাই?
–ওহ, মিস পারট্রিজের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।
–নিশ্চয়ই। কি নাম বলব? আমি বললাম।
দয়া করে বলুন, অ্যাগনেস ওডেল কথা বলতে চায়।
–বেশ, ধরুন, ডেকে দিচ্ছি।
রিসিভার রেখে সিঁড়ির কাছে গিয়ে পারট্রিজকে ডেকে টেলিফোনের কথা বললাম।