থানায় পৌঁছে দেখলাম মিঃ সিমিংটন আর ডাঃ গ্রিফিথ আগেই উপস্থিত হয়েছেন। সেখানে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল সাধারণ পোশাক পরা ইন্সপেক্টর গ্রেভসকে।
শুনলাম ইনি লণ্ডন থেকে এসেছেন আমাদের এব্যাপারে সাহায্য করতে। বেনামী চিঠির ব্যাপারে ইনি একজন বিশেষজ্ঞ।
ব্লাড হাউণ্ডের মতো গলার স্বর গ্রেভসের। তিনি বললেন, এইসব চিঠির ভাষা, বক্তব্য, প্রায় একই ধারা মেনে চলতে দেখা যায়।
ন্যাস বললেন, বছর দুয়েক আগে একই ধরনের একটা কেস আমাদের হাতে এসেছিল। ইনসপেক্টর গ্রেভস তখন আমাদের সাহায্য করেছিলেন।
কিছু বেনামী চিঠি গ্রেভসের সামনে টেবিলে বিছিয়ে রাখা ছিল। তিনি সেগুলো পরীক্ষা করছিলেন বলে মনে হলো।
ন্যাস বলতে লাগলেন, চিঠিগুলো হাতে পাওয়ার ব্যাপারটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণত এসব পুড়িয়ে ফেলা হয়। অনেকে আবার স্বীকার করতেই চায় না যে কোন চিঠি তারা পেয়েছে। আসলে পুলিসের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ার ভয়। এখানকার লোক দেখছি খুবই পিছিয়ে আছে।
-তবু, কাজ শুরু করার মতো কিছু চিঠি আমাদের হাতে এসেছে গ্রেভস বললেন।
আমার চিঠিখানা পকেট থেকে বার করে ন্যাস গ্রেভসকে দিলেন। তিনি সেটা দেখে, অন্য চিঠিগুলোর পাশে রেখে দিলেন।
–খুবই চমৎকার। তারিফ করার মতো করে তিনি বললেন, ভদ্রমহোদয়েরা, এই সুযোগে আপনাদের অনুরোধ করছি, এধরনের চিঠি পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নজরে আনবেন। কেউ পেয়েছে যদি শোনেন, তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাদের পরামর্শ দেবেন।
আমি যে চিঠিগুলো হাতে পেয়েছি, তার মধ্যে একখানা রয়েছে–মিঃ সিমিংটন দুমাস আগে পেয়েছিলেন, একখানা পান ডাঃ গ্রিফিথ, একখানা মিস গিনচ, একটা পেয়েছেন মাংসওয়ালার স্ত্রী মিসেস মাজ, একটা পান মিসেস সিমিংটন। শেষ চিঠি যেটা এই মাত্র হাতে এলো সেটা পেয়েছেন মিস বার্টন। ওহহ, আর একটা রয়েছে, ব্যাঙ্কের ম্যানেজার পেয়েছিলেন।
গ্রেভস চিঠিগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বলতে লাগলেন বিভিন্ন ধরনের চিঠি হলেও একটার সঙ্গে অন্যটার তফাৎ ধরা কষ্টকর। আগেও আমি এধরনের বহু চিঠি দেখেছি। কিন্তু এসবের মধ্যে কোন নতুনত্বের সন্ধান পাচ্ছি না। সবই কেমন একই ধারায় চলেছে।
–এই সব চিঠির লেখক সম্পর্কে কোন ধারণা করতে পেরেছেন আপনারা? সিমিংটন বললেন।
গ্রেভস সামান্য কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলেন। পরে বলতে লাগলেন, কয়েকটা বিষয় আমি আপনাদের কাছে পরিষ্কার করে দিতে চাই।
যেমন ধরুন, এসব চিঠি লেখা হয়েছে কোন ছাপানো বইয়ের অক্ষর কেটে আঠা দিয়ে কাগজে সেঁটে।
বেশ পুরনো আমলের বই থেকেই অক্ষরগুলো নেওয়া হয়েছে, ১৮৩০ সালের ছাপা বই হলেও আশ্চর্য হব না।
হাতের লেখা আড়াল করার উদ্দেশ্যেই যে এটা করা হয়েছে, সহজেই বোঝা যায়। তবে আজকালকার যুগে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় সবই ধরা পড়ে যায়।
খামের ওপরেও বিশেষ কোন লোকের হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি। যেসব ছাপ পাওয়া গেছে তা হল, প্রাপক, আর ডাকঘরের কর্মী ও বাড়ির অন্যলোক দু-একজনের। বোঝা যায় লেখক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে ভুল করেনি–দস্তানা ব্যবহার করেছিল।
খামের ওপরে ঠিকানা লেখা হয়েছে উইণ্ডসর-৭ টাইপরাইটার মেসিনে। সেই মেসিনের টি আর এ ছোট অক্ষর দুটো ক্ষয়ে যাওয়া।
বেশিরভাগ চিঠিই হাতে করে চিঠির বাক্সে ফেলা হয়েছে। কিছু স্থানীয় ডাকে ফেলা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এসব চিঠির লেখক একজন স্ত্রীলোক–মধ্যবয়স্কা, সম্ভবত অবিবাহিতা।
-লিমন্টকের মতো জায়গায় টাইপরাইটার মেশিনটা খুঁজে বের করা খুব কঠিন হবে না বলে মনে হয়। বললাম আমি।
গ্রেভস দুঃখিতভাবে মাথা নেড়ে সুপারিন্টেন্টে ন্যাসের দিকে তাকালনে।
–টাইপরাইটারের ব্যাপারটা খুবই সহজ, বললেন ন্যাস, এটা মিঃ সিমিংটনের অফিসের একটা পুরনো মেসিন। তিনি এটা উইমেনস ইন্সটিউটে দান করেছিলেন। যে কেউই সেটা ব্যবহার করতে পারে।
গ্রেভস বললেন, খামের ওপরের নাম ঠিকানা থেকে এটা আন্দাজ করা যাচ্ছে, এক আঙুলে টাইপ করা হয়েছে।
–তাহলে কি অনভিজ্ঞ কেউ টাইপ করেছে? বললাম আমি।
–তা হয়তো নয়, গ্রেভস বললেন, বরং আমি বলব এমন কেউ টাইপ করেছে, যে জানাতে চায় না টাইপ করতে জানে। এ লাইনের অন্ধিসন্ধি তার জানা আছে।
আর একটা কথা, চিঠিগুলো লিখেছে একজন শিক্ষিতা স্ত্রীলোক। নিশ্চিতভাবেই কোন গ্রাম্য স্ত্রীলোক নয়। এখানে যারা আছে, তারা নেহাতই অশিক্ষিত–বানান করার বিদ্যাটাও অনেকের নেই।
কথাটা একটু অন্যরকম শোনাল আমার কানে। আমি তাই নানা কথা কল্পনা করতে লাগলাম।
সিমিংটন বললেন, তাহলে তো অনুসন্ধানের গণ্ডি অনেকটাই খাটো হয়ে গেল। যেরকম স্ত্রীলোকের কথা বললেন, ডজনখানেক মানুষই এখানে পাওয়া যেতে পারে।
–কথাটা ঠিকই বলেছেন। বললেন গ্রেভস।
–কথাটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, সিমিংটন বললেন, আমার স্ত্রী যে ধরনের চিঠি পেয়েছিলেন, তা ছিল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা। সম্পূর্ণ মিথ্যা। যা তার কাছে অত্যন্ত মানসিক আঘাতের কারণ হয়ে উঠেছিল।
আপনি হয়তো ঠিকই বলেছেন স্যর। এইসব চিঠিতে দেখা যাচ্ছে কেবল অন্ধ অভিযোগ–অন্তরঙ্গ কিছু জানার প্রতিফলন পাওয়া গেলে ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা বলা যেত। যা পাওয়া যাচ্ছে তা হলো অবদমিত কাম আর ঈর্ষার প্রকাশ। এ থেকেই এসব চিঠির লেখক সম্পর্কে আমরা কিছুটা আঁচ করতে পারছি।