ওখানে বেশ ভালোই কাটল। ফিরে আসার সময় লরেন্স ট্যাডমিনস্টার ঘুরে যাওয়ার কথা বলল। মিসেস ইঙ্গলথর্প আপত্তি করলেন না। আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। লরেন্সের ইচ্ছা সিনথিয়াকে অবাক করে দেবে। হাসপাতালে পৌঁছতে দারোয়ান আমাদের ঢুকতে দিল না, কেমন যেন সন্দেহের চোখে দেখতে লাগল, শেষ পর্যন্ত সিনথিয়াই আমাদের উদ্ধার করল।
সাদা পোশাকে সিনথিয়াকে চমৎকার লাগছিল। সিনথিয়া আমাদের তার ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে ওর সহকারিণী নিবসের সঙ্গে পরিচয় হল।
ঘোট ঘরটার চারদিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে অস্ফুটে বলে ফেললাম কত বোতল এখানে। জানতে চাইলাম সব বোতলে যা আছে সেগুলোর নাম সে জানে কিনা। সিনথিয়া আক্ষেপের সুরে বলল সকলের মত আমিও তাকে শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্ন করলাম। আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম, সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
সিনথিয়া আমাদের চা খাওয়াল, আমরা তাকে কাপ ডিসগুলো ধুয়ে রাখতে সাহায্য করলাম। সিনথিয়া সেগুলো গুছিয়ে রাখল। এমন সময় কেউ দরজায় টোকা মারল। সিনথিয়া আর তার বান্ধবীর মুখের ভাব পাল্টে গেল।
অতি সাধারণ দেখতে একজন নার্স ঘরে ঢুকলো। নার্সটির হাতে একটি বোতল ছিল, সে বোতলটা নিবসের দিকে এগিয়ে দিতেই নিবস সিনথিয়াকে দেখিয়ে দিল। সিনথিয়া দেখলাম বেশ রেগে গেছে। নার্সকে এক ধমক দিয়ে সে জিজ্ঞাসা করল জিনিষটা আনতে এত দেরি হল কেন। এটা তো সকালে আসার কথা ছিল। নার্সটি বলল তার ভুল হয়ে গেছে। জিনিষটা রাত্রেই লাগবে বলে জানাল। সিনথিয়া বলল পরের দিন সকালবেলার আগে হবে না। নার্সটি এবার চলে গেল।
সিনথিয়া সঙ্গে সঙ্গে তাক থেকে একটা বড় বোতল নিয়ে ঐ বোতলে কিছু ঢাললো, তারপর দরজার বাইরে রেখে দিল।
সিনথিয়ার কাজ দেখে হেসে বললাম তাহলে সে খুবই শৃঙ্খলাপরায়ণা।
এরপর সিনথিয়ার সঙ্গে বারান্দায় গেলাম, অন্য ঘরগুলোেও সে আমাকে দেখাল। লরেন্স তখন ঘরেই বসেছিল। পরে সিনথিয়ার ডাকে বাইরে এল। সিনথিয়া এবার ঘড়ি দেখে নিবসকে ঘরগুলো বন্ধ করে চলে যেতে বলল।
এবার আমাদেরও ফেরার পালা। গাড়ি করে গ্রামের দিকে রওনা হতেই হঠাৎ আমার কিছু ডাক টিকিট কেনার কথা মনে হওয়ায় ডাকঘরের সামনে গাড়ি থামানো হল।
টিকিট কিনে ফিরে আসার সময় খুব মজার একটা ব্যাপার ঘটল। একজনের সঙ্গে আমার ধাক্কা লাগল, অপ্রস্তুত হয়ে তাড়াতাড়ি ক্ষমা চাইলাম। আর তখনই চিৎকার করে লোকটা আমাকে জড়িয়ে ধরল। পোয়ারোকে এখানে এভাবে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। ঘোড়ার গাড়ির কাছে পোয়ারোকে সিনথিয়ার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে গেলাম।
সিনথিয়া জানাল পোয়ারো তার অতি পরিচিত। তবে একথা সে জানত না যে পোয়ারো আমার বন্ধু।
পোয়ারোও বলল সে সিনথিয়াকে চেনে। এরপর আমার সপ্রশ্ন দৃষ্টির উত্তরে জানাল মিসেস ইঙ্গলথর্পের দয়াতেই সে এখানে রয়েছে।
পোয়ারো এক আশ্চর্য মানুষ। ওর উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। মানুষটি ছোটখাটো হলেও ওকে ঘিরে রয়েছে এক আশ্চর্য সম্ভ্রমবোধ। পোয়ারোর মাথাটি একেবারে ডিম্বাকৃতি, তাও আবার একপাশে একটু হেলে থাকে। সৈনিকদের মত গোঁফ জোড়াটি সর্বদাই খাড়া থাকে। সে খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকত।
এতদিন পরে পোয়ারোকে দেখে আমার খুবই কষ্ট হল। আগে কী ছিল আর এখন কি হয়ে গেছে। দেখলাম ও বেশ খুঁড়িয়ে চলছে। একসময় বেলজিয়ান পুলিশের এক নামজাদা লোক ছিল সে আর গোয়েন্দা হিসাবে তুখোড়–কত যে রহস্যের কিনারা রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
যেতে যেতে পোয়ারো একটা ছোট্ট বাড়ি দেখিয়ে বলল সেখানেই অন্য বেলজিয়ানদের সঙ্গে এখন পোয়ারো বাস করছে।
পোয়ারোকে বিদায় জানিয়ে আমরা আবার রওনা দিলাম। যেতে যেতে পোয়ারোর বিভিন্ন কীর্তির গল্প শোনালাম ওদের।
খুশি মনেই আমরা বাড়ি ফিরলাম। বড় হলঘরটাতে ঢুকতেই দেখলাম মিসেস ইঙ্গলথর্প তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন–তাঁকে বেশ অস্থির মনে হল। সিনথিয়া জানতে চাইল কিছু হয়েছে কিনা। মিসেস ইঙ্গলথর্প রাগত স্বরেই বললেন কিছু হয়নি।
মিসেস ইঙ্গলথর্প নিজের ঘরে চলে খেলেন। আমারও মনে একটু খটকা লাগল। লরেন্স, বাড়ির বাইরে চলে গেল।
খাওয়া দাওয়ার আগে সিনথিয়াকে এক হাত টেনিস খেলতে ডাকলাম। সে রাজী হলে আমি র্যাকেট আনার জন্য ওপরে ছুটলাম।
সিঁড়িতে মেরী ক্যাভেণ্ডিসের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আমার মনে হল যেন উনি খুব চিন্তিত। তবু বেশ হাল্কাভাবেই জিজ্ঞাসা করলাম তিনি ডঃ বরস্টিনের সঙ্গে কেমন বেড়ালেন? মেরী জানালেন তিনি যাননি। মিসেস ইঙ্গলথর্প কোথায় আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি বললাম তিনি তাঁর ঘরেই আছেন।
সিঁড়ির রেলিংটা শক্ত করে চেপে ধরলেন মেরী–তারপর কোনো কথা না বলে হলঘর পার হয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
টেনিস র্যাকেটটা নিয়ে আসার সময় হলঘর পেরিয়ে ওই ঘরের পাশে দাঁড়াতেই শুনতে পেলাম মেরী ক্যাভেণ্ডিসের গলা, তিনি শ্বাশুড়ীকে বলছেন সেই জিনিষটা কি তিনি তাকে দেখাবেন না। মিসেস ইঙ্গলথর্পের উত্তরও শুনতে পেলাম। তিনি বলছেন মেরী যা ভাবছেন তার সঙ্গে এর কোনো সম্বন্ধ নেই।
মেরী এবার তিক্ত কণ্ঠে বললেন তিনি জানতেন যে তার শ্বাশুড়ী তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন।
সেখান থেকে তাড়াতাড়ি সরে এলাম। সিনথিয়ার সঙ্গে দেখা হতে সে জানাল বাড়িতে দারুণ ঝগড়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কার সাথে কার ঝগড়া হয়েছে।