আমি বললাম তাহলে ঐ চিঠিটার জন্য মিঃ ইঙ্গলথর্প তার স্ত্রীর নথীব্যাগটা জোর করে খুলেছিলেন।
পোয়ারো বলল ঠিক এরকমই ঘটেছে। মিঃ ইঙ্গলথর্প এই মারাত্মক ঝুঁকিটা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, ঐ চিঠিটা না থাকলে ওর ধরা পড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, চিঠিটা হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইঙ্গলথর্প ওটা নষ্ট করে ফেললেন না কেন।
পোয়ারো বলল ওরকম মারাত্মক ঝুঁকি উনি নিতে চাননি। চিঠিটা নিজের কাছে রাখলেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
আমি পোয়ারোকে বললাম ব্যাপারটা ঠিক আমার বোধগম্য হচ্ছে না। পোয়ারো এবার আমাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেবার জন্য বলতে শুরু করল। আমাদের সেদিন ওখানে উপস্থিত হওয়ার মিনিট পাঁচেক আগে ইঙ্গলথর্প চিঠিটা পেয়েছিলেন। এর আগে অ্যামি সিঁড়ি বঁট দিচ্ছিল। সুতরাং বারান্দার ডানদিকে কেউ গেলেই ওর নজরে পড়তো। ইঙ্গলথর্প অন্যদিকের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকলেন। তাড়াতাড়ি নথী ব্যাগটা খুলতে গিয়ে দেখলেন চাবিটা কাছে নেই। মহাবিপদে পড়লেন তিনি। কিন্তু চিঠিটা যে তাকে পেতেই হবে, তাই চাবির বদলে একটা ছুরি দিয়ে তালাটায় চাপ দিয়ে নথীব্যাগটা খুললেন, কাগজপত্র ঘেঁটে আসল চিঠিটা উদ্ধার করলেন।
এবার কাগজটা রাখা নিয়ে সমস্যা দেখা দিল। চিঠিটা যদি নিজের কাছে রাখেন তাহলে ঘর থেকে বেরোনোর সময় কেউ দেখতে পেয়ে যদি তাকে খানাতল্লাশ করে তাহলে তো সর্বনাশ হবে। দিশেহারা হয়ে গেলেন কাগজটা কোথায় রাখবেন ভেবে। বাজে কাগজের ঝুড়িতে ফেললে হবে না। কেউ ওগুলো পরীক্ষা করতে পারে। তাহলে কী করা যায় চিন্তা করতে লাগলেন মিঃ ইঙ্গলথর্প।
হঠাৎ উপায়ন্তর না দেখে কাগজটাকে তিনটে সরু ফালি করে তিনি ছিঁড়ে ফেললেন। তারপর দলা পাকিয়ে তাপচুল্লীর তাকের ওপরের ফুলদানীর মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন।
আমি বললাম তাহলে ঐ কাগজের টুকরোগুলো বরাবরই ফুলদানীর মধ্যে ছিল।
পোয়ারো মাথা নাড়ল। আর ওখান থেকে ওগুলো উদ্ধার করতে পারার জন্য আমার কাছে ঋণী। আমি কথাটা অর্থ বুঝতে না পেরে বোকার মত তাকিয়ে রইলাম। পোয়ারো আমাকে মনে করিয়ে দিল সেদিন আমি তাকে বলেছিলাম তাপচুল্লীর তাকের খেলনাগুলো নাড়াচাড়া করার সময় আমার হাত খুব কাঁপছিল। এই কথাটা শুনেই পোয়ারোর মনে একটা কথা আসে যে তাপচুল্লীর ওপরের তাকের খেলনাগুলো তো গোছানো থাকারই কথা কিন্তু তাহলে সে সেগুলো গুছিয়ে রাখছিল কেন, নিশ্চয়ই সেগুলো অগোছালো অবস্থায় ছিল। তার মানে কেউ ওখানে হাত দিয়েছিল।
আমি বললাম সবই বুঝতে পারছি। তবে মিঃ ইঙ্গলথর্প তো অনেক সুযোগই পেয়েছিলেন কাগজগুলো সরিয়ে নেবার।
পোয়ারো বলল ইঙ্গলথর্প যাতে তা করতে না পেরে সেই ব্যবস্থা সে আগে থেকে করে রেখেছিল। আমি জানতে চাইলাম কিভাবে ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল আমার মনে আছে কিনা যে সে বাড়ির মধ্যে সবাইকে চিৎকার করে জানাচ্ছিল বলে আমি তাকে বকাবকি করেছিলাম। আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। পোয়ারো বলল সে বুঝেছিল তার সামনে একটি মাত্র রাস্তাই আছে। অবশ্যই তখন সে জানত না যে ইঙ্গলথর্প দোষী কি না। আর দোষী হলে কাগজটা নিশ্চয়ই ওর কাছে নেই, অন্য কোথাও লুকানো আছে, এই সময় বাড়ির সকলকে একটু সতর্ক করে দিতে পারলেই ইঙ্গলথর্পের পক্ষে আর কারও নজর এড়িয়ে কাগজটা পাওয়া সম্ভব হবে না। সবাই তখন ওকে সন্দেহের চোখে দেখছিল। তার ওপর তার এই চিৎকার শুনে অন্ততপক্ষে দশজন সৌখিন গোয়েন্দা তার ওপর অনবরত নজর রাখছিল। ফলে ইঙ্গলথর্পের পক্ষে কাগজটা নষ্ট করা সম্ভব হল না। ফুলদানীর মধ্যে ওটা রেখেই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হল।
আমি বললাম মিস হাওয়ার্ড তো কাগজটা সরিয়ে ফেলতে পারতেন।
পোয়ারো বলল মিস হাওয়ার্ড এই কাগজটার কথা জানতেনই না। আসলে ওরা দুজনে কখনও কথা বলবে না বলে ঠিক করে রেখেছিল। ওদের আচরণে সকলে ভাবত ওরা পরস্পরের মহাশত্রু। জন ক্যাভেণ্ডিসের যতক্ষণ পর্যন্ত না বিচার হচ্ছে ততক্ষণ ওরা কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি। পোয়ারো বলল সে মিঃ ইঙ্গলথর্পের ওপর নজর রেখেছিল যদি ওরা কোথাও দেখা করে। কিন্তু লোকটা এত ধুরন্ধর যে এসবের ধার দিয়েও যায়নি। কাগজটা এতদিন যেমন ফুলদানীতে ছিল আরও কিছুদিন থাকতে পারত। কিন্তু আমার সেই হঠাৎ মন্তব্য শুনে পোয়ারো ছুটে গিয়ে এই মহামূল্যবান সূত্রটা আবিষ্কার করে। এজন্য সে আমাকে ধন্যবাদ দিতে লাগল।
এবার আমি প্রশ্ন করলাম পোয়ারো কখন থেকে মিস হাওয়ার্ডকে সন্দেহ করতে শুরু করেছিল।
পোয়ারো বলল যখন তদন্তের সময় সে লক্ষ্য করল যে মিস হাওয়ার্ড মিসেস ইঙ্গলথর্পের চিঠিটা লেখার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলছেন তখন থেকে মিস হাওয়ার্ড সন্দেহের তালিকায় এলেন।
আমি বললাম চিঠিটাতো আমিও পড়েছি কিন্তু কোনো গলদ তো আমার চোখে পড়েনি। পোয়ারো বলল মিসেস ইঙ্গলথর্পের হাতের লেখা বেশ পরিচ্ছন্ন। প্রত্যেকটি শব্দের মাঝে বেশ ফঁক থাকে। এবার চিঠিটার একদম পরে ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ১৭ই জুলাই কথাটা একটু বিসদৃশ।
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। পোয়ারো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল, চিঠিটা আদৌ ১৭ই তারিখে লেখা হয়নি, লেখা হয়েছিল ৭ই তারিখে। মিস হাওয়ার্ড চলে যাবার পরের দিন। ৭ই কথাটার আগে একটা ১ বসিয়ে ওটাকে ১৭ই করা হয়েছে।