পোয়ারো বলতে লাগল সে যতই মিঃ ইঙ্গলথর্পপকে আড়ালে রাখতে চাইছিল ততই তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য তৎপর হয়ে পড়ছেন। তারপর যখন সে দেখল রেইকসের সঙ্গে মাখামাখিটা ওর নয় জনের তখনই পোয়ারো নিশ্চিত হল।
আমি জানতে চাইলাম কি করে সে এতটা নিশ্চিত হল।
পোয়ারো বলল যদি ইঙ্গলথর্পের সঙ্গে মিসেস রেইকসের কোনো ঘনিষ্ঠতা থাকত তাহলে ওঁর চুপ করে থাকার একটা অর্থ হয়, কিন্তু জানা গেল জন রেইকসের প্রতি আকৃষ্ট আর গ্রামের সকলেই ব্যাপারটা জানে তখনই মিঃ ইঙ্গলথর্পের মৌনতার অন্য রকম অর্থ দাঁড়ায়। পোয়ারো বুঝতে পেরেছিল ইঙ্গলথর্পের কলঙ্কের ভয় ছিল না। তিনি যেনতেন প্রকারে গ্রেপ্তার হতে চান। সেই মুহূর্ত থেকে পোয়ারো স্থির করে ফেলল কিছুতেই ওকে গ্রেপ্তার হতে দেবে না।
আমি বললাম মিঃ ইঙ্গলথর্প শুধু শুধু কেন গ্রেপ্তার হতে চাইছিলেন বুঝতে পারছি না।
পোয়ারো আমাকে বুঝিয়ে বলল আমাদের দেশের আইনটাই এরকম। একবার ছাড়া পেয়ে গেলে সেই একই অপরাধের জন্য একজনের দুবার বিচার করা যায় না। লোকটা সেজন্যই কিছু বানানো সাক্ষ্য নিজের বিরুদ্ধে তৈরি করে যাতে সহজে গ্রেপ্তার হতে পারে। আর তাহলেই সারা জীবনের মত নিশ্চিন্ত।
এবার আমি জানতে চাইলাম মিঃ ইঙ্গলথর্প কি করে একই সময়ে অজুহাতের ব্যবস্থা করল আবার ওষুধের দোকান থেকে স্ট্রিকনিনও কিনল।
পোয়ারো আমার কথা শুনে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল আমি এসব কি বলছি। আমি কি এখনও জানি না যে মিস হাওয়ার্ড স্ট্রিকনিন কিনতে দোকানে ঢুকেছিল।
আমি হাঁ হয়ে গেলাম। পোয়ারো বলল এই কাজটা করতে মিস হাওয়ার্ডকে এতটুকু বেগ পেতে হয়নি। ওকে বেশ লম্বাই বলা যায়, তার ওপর ওর গলার স্বরটাও পুরুষালী। তাছাড়া মিঃ ইঙ্গলথর্প আর মিস ওয়ার্ড মামাতো পিসতুতো ভাই বোন, দুজনের মধ্যে তাই যথেষ্ট মিল রয়েছে। সেজন্য ব্যাপারটা খুবই সহজ হয়ে গেছে।
ব্রোমাইডের ব্যাপারটা কি জানতে চাইলাম।
পোয়ারো বলতে লাগল। তার ধারণা এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে মিস হাওয়ার্ডই আসল উদ্যোক্তা। তিনি একসময় বলেছিলেন তার বাবা ডাক্তার ছিলেন। হয়ত সেই সূত্রেই ওষুধ বানানো শিখেছিলেন তিনি, নয়ত বা সিনথিয়ার পড়ার বই ঘেঁটে মিস হাওয়ার্ড ব্রোমাইডের ব্যাপারটা জেনেছিলেন। এও জেনেছিলেন যে স্ত্রিকনিন দিয়ে তৈরি ওষুধের মধ্যে ব্রোমাইড মিশিয়ে দিলে স্ত্রিকনিন ব্রোমাইডের স্ফটিক জমা হয়।
মিসেস ইঙ্গলথর্প মাঝে মাঝে ঘুমের ওষুধ খেতেন রাত্রিবেলা। ব্রোমাইড পাউডারের পুরিয়া সেজন্য রাখা থাকত। কেটসের দোকান থেকে ওর ওষুধের বোতল এলে ঐ বোতলে দু-এক পুরিয়া ব্রোমাইড পাউডার মিশিয়ে দিলেই কাজ হয়ে যাবে। কেউ জানতেও পারবে না–কারণ মৃত্যুটা অন্তত পনেরো দিন আগে তো হচ্ছে না। মিস হাওয়ার্ড ইতিমধ্যে একটা ঝগড়ার ব্যবস্থা পাকা করে ফেলবেন এবং বাড়ি ছেড়েও চলে যাবেন। তার অনুপস্থিতিতে কেউ তাকে সন্দেহ করবে না।
সন্দেহটা জনের ওপর ফেলার ব্যবস্থাও ওরা পাকা করে রেখেছিল, ওর হাতের লেখা নকল করে দোকান থেকে স্ট্রিকনিন কিনে।
পোয়ারোর কথাগুলো শুনে সত্যিই আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম।
পোয়ারো বলে যেতে লাগল, সোমবার মিসেস ইঙ্গলথর্পের শেষ ওষুধের দাগটা খাবার কথা। সেজন্য মিঃ ইঙ্গলথর্প সন্ধ্যাবেলা ছটার সময় এমন ব্যবস্থা করলেন যাতে অনেকেই তাকে গ্রামের থেকে বেশ দূরে কোথাও দেখে।
মিস হাওয়ার্ডও ইতিমধ্যে মিসেস রেইসকে নিয়ে একটা কাল্পনিক গুজবও তৈরি করে রেখেছেন। সন্ধ্যা ছটার সময় মিস হাওয়ার্ড মিঃ ইঙ্গলথর্পের ছদ্মবেশে দোকান থেকে কুকুরের জন্য স্ট্রিকনিন কিনলেন। সইটা করলেন মিঃ ইঙ্গলথর্পেরই নামে জনের হাতের লেখা নকল করে।
জন কোনো অজুহাত হাজির যাতে করতে না পারে সেজন্য মিস হাওয়ার্ড জনেরই লেখা নকল করে একটা চিরকূট লিখলেন জনের কাছে। এর ফলেও জনও অনেক দূরের এক নির্জন জায়গায় যেতে বাধ্য হল। সব কিছুই পরিকল্পনা মাফিক চলল। মিস হাওয়ার্ড মিডলিংহ্যাম ফিরে গেলেন, অ্যালফ্রেড ইঙ্গলথর্পপও স্টাইলসে ফিরলেন। সুতরাং ধরা পড়ারও আর সম্ভাবনা রইল না।
পরিকল্পনাটা একটু গোলমাল হয়ে গেল, যখন মিসেস ইঙ্গলথর্প সোমবার রাত্রে ওষুধ খেতে ভুলে গেলেন। এর ফলে মিঃ ইঙ্গলথর্পপও সবচেয়ে মারাত্মক ভুলটা করে বসলেন। মিসেস ইঙ্গলথর্প বাইরে বেরিয়ে যেতেই উনি তার দুষ্কর্মের সঙ্গী মিস হাওয়ার্ডকে চিঠি লিখতে বসলেন। কারণ তার মনে ভয় হল পাছে পরিকল্পনা মাফিক কাজ না হওয়ায় মিস হাওয়ার্ড ঘাবড়ে যায়। সেদিন মিসেস ইঙ্গলথর্প হয়ত একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরেছিলেন। মিঃ ইঙ্গলথর্প তাই ধরা পড়ার ভয়ে চিঠিটা ডেস্কের মধ্যে চাবি দিয়ে রেখে দিলেন। তার ভয় হল ঘরের মধ্যে থাকলে হয়ত ডেস্কটা খুলতে হতে পারে আর তাহলেই স্ত্রীর চোখে চিঠিটাও পড়ে যেতে পারে। তাই মিঃ ইঙ্গলথর্প তাড়াতাড়ি বাগানে চলে গেলেন। তার একবারও মনে হল না যে তার স্ত্রী ডেস্কটা খুলতে পারেন।
মিসেস ইঙ্গলথর্প ডেস্কটা খুললেন এবং চিঠিটা দেখে ফেললেন। ফলে মিঃ ইঙ্গলথর্প আর মিস হাওয়ার্ডের গোপন ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটাও তার অজানা রইল না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ব্রোমাইডের কথাটা উনি বুঝতে পারলেন না। স্বামীকে কিছু বলবেন না স্থির করে মিসেস ইঙ্গলথর্প আইনজ্ঞের কাছে চিঠি লিখে পরদিন দেখা করতে বললেন এবং উইলটাও নষ্ট করে ফেলবেন ঠিক করলেন। শুধু ঐ মারাত্মক চিঠিটা রেখে দিলেন।