জন তাকে যেতে নিষেধ করল। ইভি দৃঢ়স্বরে বললেন সে আর এক মুহূর্ত থাকতে রাজী নয়।
আমরা হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। জন যখন বুঝতে পারল ইভিকে বলে আর কোনো লাভ নেই তখন সে ট্রেনের সময় দেখার জন্য উঠে গেল। ওর স্ত্রীও জনের সঙ্গে গেল।
ওরা চলে যেতেই মিস হাওয়ার্ডের মুখের ভাব বদলে গেল। উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে নিচু স্বরে বললেন তিনি আমাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছেন তাই একথা বলছেন যে আমি যেন জনের মার প্রতি লক্ষ্য রাখি, কারণ, এখানকার সকলেই সুযোগসন্ধানী, এরা টাকা ছাড়া আর কিছুই চেনে না।
আমি মিস হাওয়ার্ডকে নিশ্চিন্ত হতে বললাম এবং জনের মার প্রতি লক্ষ্য রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করব বলে জানালাম। মিস হাওয়ার্ড আমাকে চোখ কান খোলা রেখে চলতে বললেন। একথা বলে তিনি বিদায় নিলেন।
মোটর গাড়ির শব্দ পেলাম। জানলার পাশে গিয়ে দেখলাম মিস ইভি গাড়ির দরজা খুলে ঢুকছেন। বাড়ির কর্তা ও কর্জী ছাড়া সবাই তাকে বিদায় জানাল।
গাড়িটা রাস্তার বাঁকে অদৃশ্য হতেই দেখলাম মেরী ক্যাভেণ্ডিস মাঠের ওপর দিয়ে এক ভদ্রলোকের দিকে এগিয়ে চলেছেন। লোকটাকে অভ্যর্থনা জানানোর সময় মেরীকে অতি মাত্রায় আনন্দিত বলে মনে হল আমার।
লোকটার এক মুখভর্তি দাড়ি। কেন যেন একে আমার একটুও ভালো লাগল না। আমি মুখ ফসকে জিজ্ঞাসা করে ফেললাম যে লোকটা কে। জন জানাল উনি ডাঃ বরস্টিন। এই গ্রামেই থাকেন। লণ্ডনের একজন বিশেষজ্ঞ তিনি। বিষের ওপর তিনি গবেষণা করেন। স্নায়ুদৌর্বল্যের কারণে তিনি এখানে বিশ্রাম নিতে এসেছেন।
সিনথিয়া পাশ থেকে বলে উঠল ডাঃ বরস্টিন মেরীর খুব ভালো বন্ধু, কথাটাতে জনকে একটু অসন্তুষ্ট মনে হল। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করার জন্য সে আমাকে তার সঙ্গে বেড়াতে যেতে বলল।
গাছপালার মধ্য দিয়ে আমরা হাঁটতে লাগলাম। জনেদের জমিদারীর পথ ধরেই গ্রামের দিকে চললাম। কিছুক্ষণ পরে একটা খুব সুন্দরী মেয়েকে দেখতে পেলাম। মেয়েটি মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকালো।
আমি বেশ প্রশংসাচ্ছলে বলে ফেললাম যে মেয়েটা বেশ সুন্দরী। জন বলল এই মেয়েটি হল মিসেস রেইক। আমার হঠাৎ মনে পড়ে গেল মিস হাওয়ার্ড এই মেয়েটির সঙ্গে মিঃ ইঙ্গলথর্পের সম্পর্কের কথা বলছিল।
মনের মধ্যে একটা অশুভ ছবি যেন ঝিলিক খেলে গেল। এক শুভ্রকেশ বৃদ্ধার মুখের পাশে দুষ্টুমি ভরা একটা সজীব মুখ ফুটে উঠল।
মন থেকে চিন্তাটা সরিয়ে দিয়ে জনকে বললাম যে স্টাইলস জায়গাটা সত্যিই খুব সুন্দর। গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে জন বলল সম্পত্তিটা যে লোভনীয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা হয়ত একদিন তারই হবে। জনের আক্ষেপ তার বাবা যদি একটু ভদ্রলোকের মত উইলটা করে যেতেন তাহলে, এতদিনে এই সম্পত্তির মালিক সেই হত। তাকে আর এরকম আর্থিক কষ্টে পড়তে হত না।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম জনের আবার কীসের অভাব। সে বলল টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে সে। আমি বললাম তার ভাই লরেন্স তাকে কোনো সাহায্য করতে পারে না? জন একটা শুষ্ক হাসি হেসে বলল লরেন্সের কিছুই নেই, যা ছিল সব তার কবিতা ছাপাতে খরচ করে ফেলেছে।
জন একথা স্বীকার করতে দ্বিধা করল না যে তার মা তাদের জন্য যথেষ্ট করেছেন, অবশ্য বিয়ের আগে পর্যন্ত। জন হঠাৎ চুপ করে গেল।
এই প্রথম বুঝলাম যে ইভিলিন হাওয়ার্ড চলে যাবার পর আবহাওয়াটা সত্যিই বদলে গেছে।
০২. মিস হাওয়ার্ড যাওয়ার দিন
খুব সম্ভবত আমি স্টাইলসে পৌঁছেছিলাম ৫ই জুলাই। ১৫ই আর ১৬ই জুলাই-এর কথা আমার খুব মনে পড়ছে। ঐ দুটো দিনের ঘটনা মনকে ভয়ানক নাড়া দিয়েছে।
মিস হাওয়ার্ড যাওয়ার দিন কয়েক পরে ওঁর কাছ থেকে একটা চিঠি এল। তাতে উনি লিখেছেন মিডলিংহ্যামের একটা বড় হাসপাতালে তিনি নার্সের চাকরী পেয়েছেন।
আমার সময়টা বেশ ভালোই কাটছিল। শুধু একটা ব্যাপারে আমার বেশ অদ্ভুত লাগত। মেরী ক্যাভেণ্ডিস কেন যে সবসময় ডাঃ বরস্টিনের সঙ্গে সময় কাটান তা কিছুতেই বুঝতে পারতাম না। লোকটার মধ্যে যে উনি কি দেখেছেন কে জানে। সময়ে অসময়ে তিনি লোকটাকে বাড়িতে আসতে বলতেন, না হয় তার সঙ্গে কোথাও বেরিয়ে যেতেন।
১৬ই জুলাই ছিল সোমবার। এর আগের শনিবার এক মেলার ব্যবস্থা করেছিলেন মিসেস ইঙ্গলথর্প। সোমবার রাত্রে ছিল ঐ মেলা সংক্রান্তই এক আসর।
সকালবেলা থেকেই তাই খুব ব্যস্ত ছিলাম। গ্রামের একটা বড় হলঘরকে আসরের জন্য সাজান হচ্ছিল। খাওয়া-দাওয়া সারতে আমাদের অনেক দেরি হল।
চা পানের পর মিসেস ইঙ্গলথর্প একটু বিশ্রাম নিতে চলে গেলেন। আমার কোনো কাজ ছিল না বলে মেরী ক্যাভেণ্ডিসকে এক হাত টেনিস খেলতে আমন্ত্রণ জানালাম।
কিছুক্ষণ পরে মিসেস ইঙ্গলথর্প আসরের জন্য সকলকে খুব তাড়া দিলেন। আসরটা বেশ জমজমাট হয়েছিল। মিসেস ইঙ্গলথর্প খুব হাততালি পেলেন যুদ্ধ বিষয়ক একটি কবিতা আবৃত্তি করে। সিনথিয়াও বেশ সুন্দর অভিনয় করে সকলকে আনন্দ দিল।
পরদিন সকালে অনেকবেলায় মিসেস ইঙ্গলথর্প বিছানা ছেড়ে উঠলেন। অনেক পরিশ্রম করেছেন। অবশ্য দুপুরে খাওয়ার টেবিলে তিনি যথারীতি হাজির ছিলেন। বিকালে উনি লরেন্স দিল।
আর আমাকে নিয়ে একটি নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বেরোলেন। গাড়িতে যেতে যেতে অনেক কথা বললেন।