এবার আর্নেস্ট বললেন এরকমও তো হতে পারে যে অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তি ঐ শিশিটা আসামীর অজান্তে ওখানে রাখতে পারে। ইনসপেক্টর বললেন তার এরকম মনে হয় না। আর্নেস্ট বললেন এরূপ সম্ভাবনাকে তো অস্বীকার করা যায় না। ইনসপেক্টর বললেন হতে পারে। স্যার আর্নেস্ট বললেন তার আর কোনো জিজ্ঞাসা নেই।
এরপর আরও সাক্ষ্য নেওয়া হল। আসামীর অর্থকষ্ট চরমে উঠেছিল একথাও বলা হল। মিসেস রেইকসের সঙ্গে আসামীর অন্তরঙ্গতার বিবরণও দেওয়া হল।
এবার লরেন্স ক্যাভেণ্ডিসের কাঠগড়ায় দাঁড় করান হল। মিঃ ফিলিপসের জেরার উত্তরে লরেন্স বলল পার্কসন কোম্পানীকে ২৯শে জুন সে কোনো বায়না দেয়নি। কারণ ঐ সময় সে ওয়েলসে ছিল।
স্যার আর্নেস্ট এরপর অন্য প্রসঙ্গে গেলেন, জানতে চাইলেন গত ১৭ই জুলাই তারিখে লরেন্স তার এক বন্ধুর সঙ্গে ট্যাডমিনস্টারের রেড ক্রস হাসপাতালের ডাক্তারখানা দেখতে গেছিলেন কিনা। লরেন্স মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেন। স্যার আর্নেস্ট জিজ্ঞাসা করলেন লরেন্স যখন কিছুক্ষণের জন্য একাকী ছিলেন তখন কি, বিষ রাখার আলমারী খুলে তিনি কোনো বোতল পরীক্ষা করছিলেন? লরেন্স একটু আমতা আমতা করতে লাগলেন। স্যার আর্নেস্ট এবার দ্বিতীয় প্রশ্নটা ছুঁড়লেন, জানতে চাইলেন লরেন্স একটা বিশেষ বোতল পরীক্ষা করছিলেন কিনা। লরেন্স বললেন তিনি তা করেননি। স্যার আর্নেস্ট জানতে চাইলেন তাহলে একটা বিশেষ বোতলে তার হাতের ছাপ এল কিভাবে।
লরেন্স বলল তার ধারণা কোনো এক সময় সে হয়ত বা বোতলটা ধরেছিল। আর্নেস্ট বললেন বোতল থেকে হয়ত তিনি কিছু বের করেছেন। লরেন্স মাথা নেড়ে অস্বীকার করলেন। আর্নেস্ট বললেন তাহলে লরেন্স বোতলটা কেন হাতে নিয়েছিলেন।
লরেন্স বললেন তিনি একসময় ডাক্তারী পড়তেন। তাই ওগুলোর প্রতি তার একটা স্বাভাবিক আগ্রহ আছে। স্যার আর্নেস্ট ব্যঙ্গ করে বললেন ঐ দিন বিকালে লরেন্স অল্প সময়ের জন্য একা হওয়া মাত্রই তার বিশেষ আগ্রহটা চরিতার্থ করেন। আর আগ্রহের বিষয়টাও হল চমৎকার–স্ট্রিকনিন হাইড্রোক্লোরাইড।
লরেন্স কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারল না।
স্যার আর্নেস্টের মুখে মৃদু হাসি খেলে গেল। তিনি বললেন তার আর কিছু জিজ্ঞাস্য নেই।
জেরার অবস্থা দেখে সারা আদালতেই একটা চাঞ্চল্য দেখা দিল। বিচারক সকলকে শান্ত হতে বললেন, না হলে আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে জানালেন।
এরপর সাক্ষ্য নেওয়ার বিশেষ কিছুই রইল না। হাতের লেখা বিশেষজ্ঞরা এরপর রায় দিলেন ডাক্তারখানার খাতার পাতায় মিঃ অ্যালফ্রেড ইঙ্গলথর্পের যে সই আছে সেটা ওঁর নয়। লেখাটা আসামীরও হতে পারে। তবে মনে হয় লেখাটা কৌশলে গোপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে সঠিক মতামত দেওয়া কঠিন।
স্যার আর্নেস্ট হেভীওয়েদার এবার আসামী পক্ষ সমর্থন করে খুব স্বল্প কথায় তার বক্তব্য জানালেন। বললেন, এরকম বিচিত্র ঘটনা তিনি কখনও দেখেননি। সাক্ষ্য প্রমাণগুলো সবই সম্পূর্ণ অবস্থাঘটিত। স্ট্রিকনিনের শিশিটার বিষয় ধরলে দেখা যায় ওটা আসামীর পক্ষে অজানা থাকাই স্বাভাবিক। দেরাজটা সবসময় ভোলা থাকত, সুতরাং অন্য যে কোনো অত্যন্ত শয়তান প্রকৃতির তৃতীয় ব্যক্তির পক্ষেই ওটা ওখানে রাখা সম্ভব। তার উদ্দেশ্য খুনের দায় আসামীর ওপর চাপানো। অভিযোগকারী আইনজ্ঞ এমন কোনো প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি যে আসামী পার্কসন কোম্পানীর কাছ থেকে ঐ দাড়ি আনিয়েছিল। মৃতার সঙ্গে আসামীর ঝগড়ার ব্যাপারটা সকলেই স্বীকার করেছেন বটে, তবে ঐ ব্যাপারটা এবং আসামীর অর্থকষ্টের কথাটা দুটোই অত্যন্ত অতিরঞ্জিত করেই বলা হয়েছে।
স্যার আর্নেস্ট এবার তাচ্ছিল্যভাবে সরকারী উকিলের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন যে মিঃ ফিলিপস বলেছেন আসামী যদি নিরপরাধ হয়ে থাকে তাহলে তদন্তের সময়ই তার বলা উচিৎ ছিল যে ঝগড়াটা মৃতার সঙ্গে তারই হয়েছিল–মিঃ ইঙ্গলথর্পের সঙ্গে নয়। আসল ব্যাপারটা ভুল বোঝান হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যা ঘটেছিল তা ছিল আসামী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে শুনতে পায় মিঃ আর মিসেস ইঙ্গলথর্পের মধ্যে খুব ঝগড়া হয়ে গেছে। আসামী নিশ্চয়ই ধারণা করেনি যে ওর গলাকে কেউ মিঃ ইসলথর্পের গলা বলে ভাবতে পারে। স্বভাবতই আসামী ভাবে তার মার সাথে সত্যি সত্যি ইঙ্গলথর্পের ঝগড়া হয়েছে।
অভিযোগকারী বলেছেন ১৬ই জুলাই, সোমবার গ্রামের এক ডাক্তারখানা থেকে আসামী মিঃ ইঙ্গলথর্পের ছদ্মবেশে স্ট্রিকনিন কেনে। প্রকৃতপক্ষে সেই সময় আসামী জনমানবশূন্য স্থান মারস্টনস্পিনেতে ছিল। আসামীকে কেউ ভয় দেখিয়ে ওখানে যাবার জন্য চিরকুট পাঠিয়েছিল–না গেলে কিছু গোপনীয় ব্যাপার তার স্ত্রীকে জানান হবে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। আসামী সেই অনুসারে ঐ জায়গায় উপস্থিত হয়ে আধঘণ্টা অপেক্ষা করে কিন্তু কাউকে দেখতে না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসে। দুর্ভাগ্যবশতঃ পথে কারও সঙ্গে আসামীর দেখা হয়নি। তবে চিরকুটটা আসামীর কাছে আছে যা প্রমাণ হিসাবে দাখিল করা হবে।
এরপর স্যার আর্নেস্ট বললেন উইলটা নষ্ট করার ব্যাপারে বোধ হয় এটুকু বলাই যথেষ্ট যে আসামী নিজেও এককালে আইনজ্ঞ হিসাবে কাজ করেছেন সুতরাং তিনি অবশ্যই জানেন যে তার সম্মার পুনর্বিবাহের ফলে আগের উইলটা স্বভাবতই নাকচ হয়ে গেছে। সাক্ষ্য প্রমাণের সাহায্যে এটাও প্রমাণ করা যাবে যে উইলটা নষ্ট করেছে অন্য কেউ আর এর দ্বারাই ঘটনার মোড় অন্যদিকে ফিরবে।