এরপর নাটকের পোশাক সরবরাহকারী পার্কসন কোম্পানীর একজন কর্মচারীকে জেরা করা হল। জেরার উত্তরে লোকটা জানাল ২৯শে জুন তারিখে মিঃ লরেন্স ক্যাভেণ্ডিসের পাঠানো অনুরোধের উত্তরে ওরা একখণ্ড কালো দাড়ির গোছ ডাকে পাঠায়। সেই চিঠিটা ওরা রেখে দেয়নি।…খাতায় লেখা আছে। এল ক্যাভেণ্ডিস স্টাইলস কোর্ট এই ঠিকানাতে ওটা পাঠান হয়।
এবার ধীরে ধীরে স্যার আর্নেস্ট হেভী ওয়েদার উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন চিঠিটা কোথা থেকে লেখা হয়েছিল। ইভি জানালেন স্টাইলস কোর্ট থেকে। উকিল জিজ্ঞাসা করলেন যেখানে পার্শেল পাঠান হয় সেখান থেকে কিনা। ইভি মাথা নেড়ে সায় জানালেন। উকিল এবার জানতে চাইলেন ওখান থেকে চিঠিটা এসেছে কিনা। ইভি এবারও মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালেন।
হঠাৎ যেন মিঃ হেভীওয়েদার শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। জানতে চাইলেন ইভি এই কথাটা কি করে জানলেন। মিস হাওয়ার্ড আমতা আমতা করতে লাগলেন। হেভীওয়েদার জিজ্ঞাসা করলেন ইভি কিভাবে জানলেন যে চিঠিটা স্টাইলস কোর্ট থেকেই লেখা হয়েছিল। তিনি কি ডাকঘরের ছাপ দেখেছিলেন। ইভিলিন মাথা নেড়ে না বললেন। এবার উকিল বললেন ডাকঘরের ছাপ না দেখেই ইভিলিন বললেন ওটা স্টাইলস থেকে লেখা হয়েছিল ওটা তো যে কোনো জায়গা যেমন ওয়েলস্ থেকেও লেখা হতে পারে।
সাক্ষী শেষ পর্যন্ত কথাটা স্বীকার করতে বাধ্য হলে স্যার আর্নেস্ট হেভীওয়েদার জানালেন তার আর কিছু জিজ্ঞাস্য নেই।
এরপর পরিচারিকা এলিজাবেথ ওয়েলসকে ডাকা হল। জেরার উত্তরে সে জানাল শুতে যাওয়ার আগে ও বাইরের দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিল। মিঃ ইঙ্গলথর্প দরজাটা ভেজিয়ে রাখতে বলেছিলেন সেটা ওর একেবারেই মনে ছিল না। পরে মনে পড়লে সে নিচে নেমে আসতেই একটা শব্দ শুনে বারান্দার দিকে তাকায়। মিঃ জন ক্যাভেণ্ডিস তখন মিসেস ইঙ্গলথর্পের দরজায় টোকা দিচ্ছিলেন।
স্যার আর্নেস্টের এই জেরার মুখে অবশ্য পরিচারিকা ওয়েলস বেশ ঘাবড়ে গেল। ওর অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে স্যার আর্নেস্টের মুখে মৃদু হাসি খেলে গেল। এরপর অ্যানীর সাক্ষ্যও নেওয়া হল। ওই জনকে কফি নিয়ে যেতে দেখেছিল।
সেদিন এখানেই শুনানী মুলতুবি রাখা হল পরের দিনের জন্য।
বাড়ি ফেরার পথে মেরী ক্যাভেণ্ডিস সরকারী উকিলের সমালোচনা করতে লাগল। আমি তাকে সান্ত্বনা জানিয়ে বললাম পরদিন আবার অন্য রকম হয়ে যাবে।
আমি নিজেই ঘটনার গতি দেখে আশ্চর্য হয়ে পড়লাম। পোয়ারোর সঙ্গে দেখা হতেই তাকে জিজ্ঞাসা করলাম স্যার আর্নেস্টের উদ্দেশ্য কি, তিনি কি লরেন্সকে দোষী মনে করছেন?
পোয়ারো বলল আর্নেস্ট যে বিশেষ কিছু মনে ভেবেছেন তা নয়। আসলে উনি জুরীদের মনের মধ্যে একটা এলেমেলো ভাব আনতে চাইছেন যাতে ওরা কিছুতেই একমত হতে না পারেন। উনি বোঝাতে চাইছেন জনের চেয়ে লরেন্সের বিরুদ্ধেও প্রমাণ নেহাত কম নয়।
পরদিন শুনানী আরম্ভ হতেই ইনসপেক্টর জ্যাপকে ডাকা হল। নানা কথার পর জ্যাপ জানালেন খবর অনুযায়ী তিনি ও সুপারিনটেনডেন্ট সামারহে আসামীর ঘর থানাতল্লাশি করেন। আসামী তখন বাড়িতে অনুপস্থিত ছিলেন। একটা আলামারীর মধ্যে পোশাকের নিচে মিঃ ইঙ্গলথর্পের চশমার মত একটা সোনার ফ্রেমে আঁটা পাঁশনে খুঁজে পান। সেটা আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আর তিনি একটা শিশিও খুঁজে পান।
শিশিটা আগেই সনাক্ত করা হয়েছিল ওটার গায়ে লেবেলে লেখা ছিল স্ট্রিকনিন হাইড্রোক্লোরাইড-বিষ।
একটা নতুন প্রমাণ আদালতে উপস্থিত করা হল। পুলিশের গোয়েন্দারাই এটা আবিষ্কার করেছেন, জিনিসটা হল একখণ্ড নতুন ব্লটিং কাগজ। কাগজটা মিসেস ইঙ্গলথর্পের চেক বইয়ের মধ্যে পাওয়া গেছে। একটা আয়নার সামনে উল্টে ধরতেই লেখাগুলো পড়া গেছে…মার যা কিছু আছে সবই আমার স্বামী অ্যালফ্রেড ইঙ্গ…এই লেখাটা দেখেই বোঝা যায় মৃতা তার সব কিছু তার স্বামীকে উইল করে গেছেন।
এরপর ইনসপেক্টর জ্যাপ পোড়া উইলের টুকরোটা আর সিন্দুকে রাখা দাড়ির গোছাটা আদালতে পেশ করলেন।
এরপর স্যার আর্নেস্ট হেভীওয়েদার উঠে দাঁড়ালেন। তিনি প্রশ্ন করলেন আসামীর ঘর যেদিন থানাতল্লাশী করা হয়েছিল সেদিন কি বার ছিল। ইনসপেক্টর জানালেন দিনটা ছিল মঙ্গলবার, ২৪শে জুলাই। স্যার আর্নেস্ট বললেন তাহলে দুর্ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ পরে থানাতল্লাশী চালান হয়েছিল।
স্যার আর্নেস্ট প্রশ্ন করলেন ইনসপেক্টরের মাথায় কি এই কথাটা একবারও আসেনি যে আসামী নিশ্চয়ই এরকম একটা মারত্মক প্রমাণ সরিয়ে না ফেলে কখনও খুঁজে পাবার জন্য রাখতে পারে না, তাও আবার একটা খোলা দেরাজের মধ্যে।
ইন্সপেক্টর বললেন হয়ত আসামী তাড়াহুড়োতে এটা করেছিল।
স্যার আর্নেস্ট বললেন ইনসপেক্টরের কথানুসারে খুনের পর এক সপ্তাহ কেটে গেছে। সুতরাং আসামী ঐ প্রমাণ সরিয়ে ফেলার বা নষ্ট করার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিল।
ইনসপেক্টর মাথা নেড়ে সায় জানালেন।
এরপর স্যার আর্নেস্ট প্রশ্ন করলেন যে পোশাকের নিচে শিশিটা পাওয়া গেছিল সেগুলো ভারী পোশাক না হাল্কা। ইনসপেক্টর জানালেন সামান্য ভারী। স্যার আর্নেস্ট বললেন তাহলে পোশাকগুলো শীতকালের উপযোগী। গ্রীষ্মকালের একটা প্রচণ্ড গরমের দিনে আসামীর পক্ষে ঐ শীতের পোশাক ভর্তি দেরাজে হাত দেওয়া সম্ভব নয়। ইনসপেক্টর মাথা নাড়লেন।