আমি সেটা কি জানতে চাইলাম। পোয়ারো বলল ঐ উইলটা জন ক্যাভেণ্ডিস নষ্ট করেনি।
পুলিশ আদালতের দৈনিক শুনানির বিরক্তিকরণ বিবরণ শুনতে শুনতে পাগল হওয়ার উপক্রম হল। যাই হোক শেষ পর্যন্ত জন আত্মসমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ বলল। শেষে ওকে বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে পাঠান হল।
সেপ্টেম্বর মাস এগিয়ে এল। আমরা সবাই মিলে লণ্ডনে চলে এলাম–মেরী কেনসিংটনে বাড়ি ভাড়া করলেন। পোয়ারোও আমাদের সঙ্গে রইল। আমার একটা চাকরি জুটে গেল যুদ্ধসংক্রান্ত অফিসে-সময় কেটে যেতে লাগল।
কিন্তু পোয়ারো অস্থির হয়ে পড়ল। শেষ সূত্রটা মনে হয় ও এখনও খুঁজে পায়নি।
১৫ই সেপ্টেম্বর জন ক্যাভেণ্ডিস ওল্ড বেইলীর আদালতের কাঠগড়ার এসে দাঁড়াল। জন নিজেকে নির্দোষ বলে জানাল।
জনের পক্ষ সমর্থন করতে লাগলেন বিখ্যাত আইনজ্ঞ স্যার আর্নেস্ট হেভীওয়েদার কে, সি.। সরকার পক্ষে রইলেন মিঃ ফিলিপস।
সরকার পক্ষের অভিযোগে জানান হল হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ও পৈশাচিক। এক মাতৃসমা স্নেহশীলা সৎমাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করার ঘটনা এটা। শৈশব থেকেই ভদ্রমহিলা যাকে মানুষ করেছিলেন সেই-ই হত্যা করেছে। হত্যাকারী আর তার স্ত্রী স্টাইলসে দারুণ বিলাস ব্যাসনে বাস করছে–আর এসবই হয়েছে মৃতার দয়ায় আর সাহচর্যে।
এরপর সরকারী উকিল বললেন আসামী একজন দুশ্চরিত্র এবং অমিতব্যয়ী। বর্তমানে চূড়ান্ত অর্থকষ্টের মধ্যে সে পড়েছিল। গ্রামের একজন চাষীর স্ত্রী রেইকসের সঙ্গে তার গোপন অভিসারও চলছিল। কথাটা তার সম্মার কানে যেতেই তিনি তাকে চেপে ধরলে ঝগড়ার সূত্রপাত হয় মিসেস ইঙ্গলথর্প মারা যাওয়ার দিন বিকেলবেলা। ঐ ঝগড়ায় কিছু কিছু জানাও গেছে। এর আগের দিন আসামী গ্রামের এক ওষুধের দোকান থেকে ছদ্মবেশে স্ত্রিকনিন কেনে, সে মিঃ ইঙ্গলথর্পের ছদ্মবেশ নিয়েছিল। কারণ তার প্রতি আসামী খুবই ঈর্ষাপরায়ণ ছিল। মিঃ ইঙ্গলথর্প সৌভাগ্যবশতঃ কিছু অভেদ্য অজুহাত দেখাতে পেরেছেন।
সরকারী উকিল আরও জানালেন ১৭ই জুলাই ঝগড়ার পরেই মিসেস ইঙ্গলথর্প একটি নতুন উইল করেন। উইলটা পরদিন তাপচুল্লীর মধ্যে পোড়া অবস্থায় পাওয়া যায়। উইলটা পোড়ানো হলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ঐ উইলটা মৃতা তার স্বামীর অনুকূলেই করেছিলেন। মিসেস ইঙ্গলথর্প বছর খানেক আগে আসামীর পক্ষেও একটা উইল করেছিলেন। সরকারী উকিল বললেন তিনি উপযুক্ত সাক্ষ্যের সাহায্যে প্রমাণ করবেন ঐ রাত্রে আসামীই তার সত্মাকে কফির কাপটা পৌঁছে দেয়, সেই সময় তার যথেষ্ট সুযোগ ছিল নতুন উইলটা নষ্ট করে ফেলার, কারণ তাহলে ওর পক্ষে করা পুরনো উইলটাই আইনসিদ্ধ থাকতে পারে। এই কথা বলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সরকারী উকিল মিঃ ফিলিপস আসন গ্রহণ করলেন।
করোনারের তদন্তের সময় যাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল এখনও তাদেরই ডাকা হল। ডঃ বরস্টিনও সাক্ষ্য দিলেন।
এবার স্যার আর্নেস্ট হেভীওয়েদার উঠে দাঁড়ালেন। ইনি আসামী পক্ষের উকিল। সারা ইংল্যাণ্ডেই ওঁর খুব সুনাম। তিনি মাত্র দুটি প্রশ্ন করলেন। বললেন, তিনি শুনেছেন স্ট্রিকনিন ওষুধ হিসাবে খুব দ্রুত কাজ করে। ডঃ বরস্টিন মাথা নেড়ে সায় দিলেন। এবার উকিল জানতে চাইলেন তাহলে এক্ষেত্রে এত দেরি হওয়ার কারণ কি হতে পারে। ডাঃ বরস্টিন বললেন তিনি জানেন না। এখানেই তাদের প্রশ্নোত্তরের পালা শেষ হল।
এরপর মিঃ মেস স্ট্রিকনিনের শিশিটা দেখে সনাক্ত করলেন। ঐ শিশিই মিঃ ইঙ্গলথর্পের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। মিঃ মেস একথাও জানালেন মিঃ ইঙ্গলথর্পপকে তিনি দূর থেকেই দেখেছিলেন। কোনোদিন কথা বলেননি।
অ্যালফ্রেড ইঙ্গলথর্পপকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্ট্রিকনিন কেনার কথা দৃঢ় স্বরে অস্বীকার করলেন। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার কথাও অস্বীকার করলেন। কয়েকজনের সাক্ষ্যে এটা সত্যি বলে জানা গেল। বাগানের মালীদেরও সাক্ষ্য নেওয়া হল। শেষ পর্যন্ত ডরকাসের ডাক পড়ল।
ডরকাস জেরার মুখে জানাল ঘরে যে কথাবার্তা সে শুনেছিল তা মিঃ ইসলথর্পেরই। কখনও সেটা জন বলেননি। কথাটা শুনে জনের মুখে যেন একটু দুঃখের হাসিই খেলে গেল।
আরও নানা প্রশ্নের পর মিঃ ফিলিপস ডরকাসকে জিজ্ঞাসা করলেন গত জুন মাসে পার্কসনের কাছ থেকে মিঃ লরেন্স ক্যাভেণ্ডিসের নামে কোনো পার্শেল এসেছিল কিনা।
ডরকাস মাথা নেড়ে বলল তার ঠিক মনে পড়ছে না। তবে জুন মাসে মিঃ লরেন্স বাইরে ছিলেন। এরকম ক্ষেত্রে কোনো পার্শেল এলে কি করা হয় জানতে চাইলে ডরকাস বলল মিঃ লরেন্সের ঘরে কোনো সময় রাখা হয় আবার কখনও ডাকে ওঁর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
উকিল জিজ্ঞাসা করলেন ডরকাসই পার্শেলগুলো পাঠায় কিনা। ডরকাস জানাল তার কাজ শুধুমাত্র পার্শেলগুলো টেবিলের ওপর রেখে দেওয়া। মিস হাওয়ার্ডই ওগুলো দেখেন।
এবার ইভিলিন হাওয়ার্ডের ডাক পড়ল। পার্শেলের ব্যাপারে জেরা করা হলে উনি জানালেন এত পার্শেল আসে যে কোনো বিশেষ পার্শেলের কথা বলা কঠিন।
এবার সরকারী উকিল একখণ্ড বাদামী কাগজ বের করলেন। কাগজটা সেদিন পোয়ারোর কাছে মিস হাওয়ার্ড দিয়েছিলেন। উকিল জিজ্ঞাসা করলেন মিস ওয়ার্ড কেন এটার খোঁজ করছিলেন। হাওয়ার্ড জানালেন বেলজিয়ান গোয়েন্দা মশাই অর্থাৎ পোয়ারো তাকে এটা খুঁজতে অনুরোধ করেছিলেন। উকিল এবার প্রশ্ন করলেন এটা কোথা থেকে তিনি খুঁজে পেয়েছেন। ইভি জানালেন একটা কাপড়ের আলমারীর মাথায় কাগজটা ছিল। আসামীর আলমারীর মাথায় সেটা পাওয়া গেছিল কিনা উকিল প্রশ্ন করলেন। ইভি মাথা নেড়ে সায় জানালেন।