মিসেস ইঙ্গলথর্প অর্থাৎ জনের মা সমানে কথা বলে চলেছেন। তিনি একেবারে আগের মতই আছেন। আমার কাছে জানতে চাইলেন আমি প্রথম থেকেই সৈন্যদলে আছি কিনা। আমি বললাম, যুদ্ধের আগে লয়েড়সে কাজ করতাম। তিনি এবার জিজ্ঞাসা করলেন পরে আবার সেখানেই ফিরে যাব কিনা। আমি বললাম দেখা যাক, যদি অন্য কোথাও কিছু জুটে যায়।
এবার মেরী ক্যাভেণ্ডিস আমার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন কি রকম কাজ আমার পছন্দ। আমি বললাম সে কথা শুনলে উনি হাসবেন। মেরী হাসিমুখে তবুও জানতে চাইলেন। আমি জানালাম আমার ইচ্ছে গোয়েন্দাগিরি করা। মেরী জিজ্ঞাসা করলেন স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড শার্লক হোমস–কার মত আমি হতে চাই। আমি বললাম অবশ্যই শার্লক হোমস।
মিস হাওয়ার্ড জানালেন তারও গোয়েন্দাকাহিনী পড়তে মজা লাগে। কিন্তু আবার একথাও বললেন যে সেগুলি একেবারে গাঁজাখুরি ব্যাপার। গল্প শেষ হলে অপরাধীকে চেনাই যায় না। তবে এ ব্যাপারে তার মত হল সত্যি যদি কেউ অপরাধ করে তাহলে অপরাধীকে চিনে নেওয়া খুবই সহজ। কোনো পরিবারে এ রকম ঘটলে তা চেপে রাখা যায় না, কে দোষী তা সহজেই বোঝা যায়।
কথাগুলো শুনে আমার খুব মজা লাগল। বললাম তাহলে খুনের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়লে মিস হাওয়ার্ড খুনীকে চিনে ফেলতে পারবেন। ইভি দৃঢ়স্বরে জানালেন নিশ্চয়ই পারবেন। প্রমাণ করতে না পারলেও খুনী লোকটা যদি তার কাছাকাছি থাকে তাহলে নিশ্চয়ই চিনতে পারবেন।
মেরী ক্যাভেণ্ডিস হঠাৎ বলে উঠলেন বিষ প্রয়োগে মৃত্যু ঘটলে কি করে বোঝা যাবে কে খুনী। মেরীর মুখে এই কথাগুলো শুনে চমকে উঠলাম।
মিসেস ইঙ্গলথর্প আমাদের আলোচনায় বাধা দিলেন, জানালেন এরকম আলোচনা তার মোটেই পছন্দ নয়।
এমন সময় হাসপাতালের পোশাক পরিহিতা এক তরুণীকে ঘাসের ওপর দিয়ে এদিকে আসতে দেখলাম। মিসেস ইঙ্গলথর্প জানতে চাইলেন যে আসতে এত দেরি করল কেন। তারপর আমার সঙ্গে তরুণীটির আলাপ করিয়ে দিলেন, জানালেন মেয়েটির নাম মিস সিনথিয়া মারডক।
সিনথিয়াকে দেখে আমার বেশ ভালো লাগল। মেয়েটি প্রাণপ্রাচুর্যে পূর্ণ। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে ওকে দেখতে থাকলাম। মনে হল ওর চোখ দুটো কালো হলে ওকে নিখুঁত সুন্দরী বলা যেত।
একটা চায়ের কাপ নিয়ে সিনথিয়া জনের পাশে মাটিতে বসল। আমি এক প্লেট স্যাণ্ডউইচ ওর সামনে ধরলাম। সিনথিয়া হেসে আমাকে ঘাসের ওপর বসার আমন্ত্রণ জানাল। ওর পাশে বসে পড়লাম। এবার জানতে চাইলাম সে ট্যাডমিনস্টারের কাজ করে কি না। সিনথিয়া মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। আমি বললাম যে আমার এক আত্মীয়া নার্সিং শেখে অথচ নার্সিং-এর নামে তার ভীষণ ভয়। সিনথিয়া বলল ভয় পাবারই কথা। কারণ নার্সরা একেবারে যাচ্ছেতাই। তবে সে নার্স নয় বলে ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ। সে জানাল তার কাজ ডাক্তারখানায়। আমি হেসে বললাম রোজ কত লোককে তাহলে সে বিষ খাওয়ায়। সিনথিয়াও হাসতে হাসতে বলল প্রায় কয়েকশো হবে।
কিন্তু বেশিক্ষণ সিনথিয়ার সঙ্গে কথা বলা হল না। মিসেস ইঙ্গলথর্প কতকগুলো চিঠি লিখতে বললেন ওকে। সিনথিয়াও সঙ্গে সঙ্গে উঠে বাড়িতে চলে গেল।
মিসেস ইঙ্গলথর্প এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন জন আমার ঘরটা আমাকে দেখিয়ে দেবে। রাত্রে খাওয়ার সময়টা যে সাতটা তাও বলে দিলেন।
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। জনের সঙ্গে এবার বাড়ির মধ্যে গেলাম। চওড়া সিঁড়ি বেয়ে বাড়ির বাঁ দিকে আমার জন্য নির্দিষ্ট ঘরটাতে এলাম। জানলা দিয়ে সবুজ মাঠের দিকে তাকালাম।
হঠাৎ দেখতে পেলাম একটা গাছের আড়াল থেকে কে একজন বেরিয়ে এসে বাড়ির দিকে হাঁটতে। লোকটার দাড়ি গোঁফ নিখুঁতভাবে কামানো। চোখেমুখে কেমন উদভ্রান্তের মত ভাব। লোকটা এদিকে তাকাতেই চিনতে পারলাম এ হল জনের ভাই লরেন্স। পনের বছর পরে দেখেও চিনতে কোনো অসুবিধা হল না।
রাত্রে ভালোই ঘুম হল। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে চারদিকে তাকাতেই মনটা আনন্দে ভরে উঠল। সুন্দর রোদে চারদিক ঝলমল করছে।
দুপুরবেলা খাওয়ার আগে মেরী ক্যাভেণ্ডিসের সঙ্গে আমার দেখা হল না। খাওয়ার পর ওর অনুরোধে একটু ঘুরে আসার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ওর সাথে ঘুরতে লাগলাম, সত্যি বলতে ওর সঙ্গে আমার বেশ ভালোই লাগছিল।
বাড়িতে ফিরে এসে বড় হলঘরটাতে ঢুকতেই জনের সঙ্গে দেখা হল। বেশ বুঝতে পারলাম কিছু একটা ঘটেছে। জন বলল একটা বাজে ব্যাপার ঘটেছে। ইভি অ্যালফ্রেড ইঙ্গলথর্পের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করেছেন।
এই সময় ইভি ঘরে এসে ঢুকলেন। মুখ দেখেই বোঝা যায় যে মনের মধ্যে একটা ঝড় চলছে। জন জানতে চাইল ইভি কি বলছেন। ইভি জানালেন জনের মা অর্থাৎ এমিলিকে তিনি বলেছেন যে তার ভীমরতি ধরেছে বলেই তার চেয়ে বয়সে ছোট একটা লোককে তিনি বিয়ে করেছেন। আর লোকটারও একমাত্র মতলব হচ্ছে এমিলির সম্পত্তি হাতানো। এমনকি একথাও জানিয়েছেন যে, চাষী রেইকসের সুন্দরী বউ-এর সঙ্গে আলফ্রেড কতক্ষণ সময় কাটায় তা যেন নিজের চোখে দেখেন। ইভি বললেন আলফ্রেড যে কোনদিন এমিলি অর্থাৎ জনের মাকে খুন করতে পারে। একথাও তিনি জানিয়েছেন।
এসব শুনে এমিলির প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল তা জানতে চাইল জন। ইভি জানালেন তিনি একেবারে রেগে আগুন হয়ে গেছেন। তাকে হিংসুটে বলে গালাগাল দিয়েছেন। এমন কি বিদায় হতেও বলে দিয়েছেন।