–আমি একা গেলেই কাজ হবে কি?
–না, একজন সনাক্তকারীকে দরকার হবে। ও কাজটা দেখছি আমাকেই করতে হবে। চলো এখুনি ব্যাঙ্কে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে দিচ্ছি।
ব্যাঙ্ক থেকে কাজ সেরে ক্যাথারিন একটা নাম করা পোশাকের অর্ডার দিল। দোকানের মালিক একজন ফরাসী মহিলা। ক্যাথারিন তার সঙ্গে দেখা করে বলল, সবচেয়ে দামী আর মানানসই পোশাক তৈরি করাতে চাই। তাছাড়া কাটছাটও যেন আধুনিক রুচিসম্মত হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ফরাসী মহিলা হেসে বললেন, বেশ তাই হবে। আজ থেকে সাতদিন পরে পোশাকগুলো
ডেলিভারী পাবেন। হা, ভালো কথা, কাপড় পছন্দ করে দেবেন কি?
-না, ও ব্যাপারটা আপনার ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি।
–বেশ, তাই হবে। আপনি আগামী সোমবার বেলা এগারোটায় ডেলিভারী পাবেন।
একজন সহকারিণীকে ডেকে ক্যাথারিনের মাপ নিতে বলল। মাপ নেওয়া হলে ক্যাথারিন খুশী মনে দোকান থেকে চলে গেল।
পরদিন সকালের ডাকে লেডী টাম্পলিন-এর চিঠিখানা ক্যাথারিন-এর হস্তগত হলো। চিঠিখানা সেন্ট মেরী মিড থেকে রি-ডাইরেক্ট হয়ে এসেছে।
চিঠিখানা পড়ে ক্যাথারিন-এর মুখে হাসি ফুটে উঠল। এতদিন পরে মামাতো বোনের কথা মনে পড়েছে।
লেডী টাম্পলিন ক্যাথারিনকে বারবার অনুরোধ করেছে তার বাড়িতে যাবার জন্যে। ক্যাথারিনও বাইরে যাবার জন্যে ব্যস্ত হয়েছিল কিন্তু যাবার জায়গা ঠিক করতে পারছিল না। চিঠিখানা পেয়ে মনে মনে স্থির করল সে যাবে।
টমাস কুক-এর অফিসে ফোন করে ক্যাথারিন জানতে পারলো নিস-এ যাবার সবচেয়ে ভালো যানবাহন হলো ব্লু ট্রেন, ওটা ভিক্টোরিয়া স্টেশন থেকে ছাড়ে। কুক কোম্পানীর কর্মচারীরা তাকে জানালো যে ঐ ব্লু ট্রেনে কম্পার্টমেন্ট রিজার্ভ করতে হলে অন্ততঃ তিন দিন আগে করতে হবে।
টেলিফোন ছেড়ে ক্যাথারিন মনে মনে হিসাব করে দেখল যে সে তার পোষাকগুলি ডেলিভারী পাচ্ছে বারো তারিখে। তাই তাকে তেরো কিংবা চোদ্দ তারিখে রওনা হতে হবে। কিন্তু তেরো তারিখটা তার কাছে আনলাকি নাম্বার তাই সে চোদ্দ তারিখেই রওনা হবে।
১০ই জানুয়ারি বেলা এগারোটায় টমাস কুক-এর অফিসে গেল ক্যাথারিন। ওখানে। যেতেই সে দেখল কিছুদিন আগে স্যাভয় হোটেলের করিডরে যে লোকটি তার গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল সে দাঁড়িয়ে আছে কাউন্টারের সামনে। সেও লক্ষ্য করল ক্যাথারিনকে।
ক্যাথারিনের কেন যেন মনে হলো যে সে শীগগিরই কোনো বিপদের জালে জড়িয়ে পড়বে। কিন্তু কেন এরকম হচ্ছে বুঝতে পারল না।
এদিকে ক্যাথারিন যখন টিকিট কিনে কম্পার্টমেন্ট রিজার্ভ করার জন্যে কাউন্টার ক্লার্কের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে, ততক্ষণে সে কাজ শেষ করে বেরিয়ে গেছে।
.
০৮.
শ্বশুর জামাই সংবাদ
পৃথিবীতে এমন কিছু লোক আছে যারা চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেও মেজাজ ঠান্ডা রাখতে পারে।
মিঃ ক্যাথারিনও এই রকমের লোক তাই দেনায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত এবং আসন্ন ডাইভোর্সের সম্মুখীন হয়েও সে তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেননি।
মিরেলির কথা শুনে সেদিন যদিও সে সাময়িক উত্তেজিত হয়েছিল তবুও কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথা ঠান্ডা করতে সে সক্ষম হলো।
কয়েকদিন বাদে সেন্ট জেমস স্ট্রীট ধরে হেঁটে যেতে যেতে পিকাডেলি সার্কাস পেরিয়ে যাবার পর হঠাৎ তার নজরে পড়লো টমাক কুক অ্যাণ্ড কোং-এর সাইন বোর্ডের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল, সামনের চোদ্দ তারিখে তার স্ত্রী রিভিয়ারায় তার প্রেমিকের সঙ্গে মিলিত হতে যাচ্ছে। ক্যাথারিন স্থির করল, সেও ওই তারিখে রিভিয়ারা রওনা হবে এবং তার স্ত্রীর মত সেও ব্লু ট্রেনের যাত্রী হবে। ট্রেনে আত্মগোপন করে থেকে সে তার স্ত্রীর ওপরে নজর রাখবে।
সেদিন ছিল দশ তারিখ। সেদিন টিকিট না কাটলে ব্লু ট্রেনে জায়গা পাওয়া যাবে না। তাই কুক কোম্পানীর অফিসে গেল ক্যাথারিন। একজন কেরাণীকে জিজ্ঞেস করল : ভিক্টোরিয়া স্টেশন থেকে নিস পর্যন্ত একটা বার্থ রিজার্ভ টিকিট আমার চাই। চোদ্দ তারিখে ব্লু ট্রেনে রওনা হবো।
–বেশ, নাম ঠিকানা বলুন।
–লিখুন, প্যাভেট হচিনস্। ২৮ নং জারমিন স্ট্রিট।
–ঠিক আছে। একটু দাঁড়ান, আমি এখুনি সব ব্যবস্থা করছি।
–না, এখুনি দরকার নেই। আপনি সব ঠিক করে রেখে দিন। ঘণ্টাখানেক বাদে আমার চাকরের হাতে টাকা পাঠিয়ে দেব। এখন আমার সঙ্গে টাকা নেই, তাই তাকেই টিকিটখানা দিয়ে দেবেন।
–বেশ, তাই হবে। তার হাতে একখানা লেটার অব অথরিটি পাঠাবেন।
-ঠিক আছে। আমি তাহলে এখন যাচ্ছি। চলে যাবার জন্যে ফিরে দাঁড়াতেই ক্যাথারিন দেখতে পেল স্যাভয় হোটেলের করিডরে যে মেয়েটির গায়ের ওপরে গিয়ে পড়েছিল, সেই মেয়েটি ওখানে। মনে হলো মেয়েটি তাকে লক্ষ্য করেনি তাই সেও কথা বলল না। চলে গেল সেখান থেকে। বাড়িতে ফিরে এসেই প্যাভেটকে ডাকল ক্যাথারিন। প্যাভেট এসে দাঁড়াতেই বলল, শোন প্যাভেট–তুমি এখুনি একবার টমাস কুক-এর অফিসে যাও। সেখানে তোমার নামে নিস-এর একখানা টিকিট বুক করে এসেছি। একটা বার্থ রিজার্ভ করতে বলেছি। তুমি সেই টিকিটখানা আর বার্থ রিজার্ভেশন-এর স্লিপটা নিয়ে এসো।
একখানা একশো পাউণ্ডের নোট বের করে সে প্যাভেট-এর হাতে দিল। এই চিঠিখানা আর নোটখানা কাউন্টার ক্লার্ককে দিলেই টিকিট তার স্লিপখানা পেয়ে যাবে, ফেরত টাকা হিসেব করে গুণে দেখে নিও।