-আপনি আসায় আমি খুশী হয়েছি। এবার জনির খবর বলুন। কি করছে সে?
জনি এখন নেভীতে চাকরি করছে। ভালোই আছে সে। শুনলাম আপনি নাকি বাইরে বেড়াতে যাচ্ছেন?
-হ্যাঁ কিছুদিনের জন্য ঘুরে আসি।
–কোথায় যাবেন তা ঠিক করেছেন কি?
–না; তা এখনও ঠিক করিনি। তবে যেখানেই যাইনা কেন বেশিদিন থাকবো না, জোর মাস দুয়েক। আজ পর্যন্ত ইংল্যাণ্ডের বাইরে যাবার সুযোগ হয়নি আমার। এখন যখন সুযোগ এসেছে দু-চারটে দেশ দেখে আসব মনে করেছি।
-তা ভালো। দেশভ্রমণে একদিকে যেমন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয় অন্যদিকে মনের প্রসারতাও বাড়ে। আমারও বাইরে যেতে খুব ইচ্ছে হয় কিন্তু সংসারের চাপে এমন জড়িয়ে গেছি যে সম্ভব হয় না।
–একদিক দিয়ে সংসারটা যেমন ঝামেলা ঠিক, কিন্তু তবুও তো সবাই সংসার করছে।
— হ্যাঁ, তা করছে। এবং ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু একটা কথা দিল্লী কা লাড়ু যো খায়া উয়ো ভি পস্তায়া। ঔর যো নেহি খায়া উয়ো ভি পস্তায়া। সংসার জিনিসটা প্রায় সেই দিল্লীর লাড়ুর মতো।
–আপনি বুঝি খুব বই পড়েন?
-হ্যাঁ, তা পড়ি। ওটা আমার একটা নেশা। নানা আলাপ আলোচনার পর বেলা চারটের সময় মিসেস্ হ্যারিসন বিদায় নিলেন।
পরদিন ক্যাথারিন সেন্ট মেরী সিড-এর বর্ষীয়ান মহিলা ডিনার সঙ্গে দেখা করতে গেল।
ক্যাথারিনকে দেখে খুশী হয়ে ডিনার বললেন, শুনলাম তুমি নাকি বিদেশ যাচ্ছ?
-হ্যাঁ, কিছুদিনের জন্য এখান থেকে চলে যাচ্ছি, তাই আপনার সঙ্গে দেখা করতে এলাম।
–বেশ করেছ। তা, কোথায় কোথায়, যাচ্ছ?
–তা এখনো ঠিক করিনি। তবে বেশিদিন থাকব না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরব।
–বাড়ি ঘরের কি ব্যবস্থা করে যাচ্ছ?
–সেই জন্যেই তো আপনার কাছে এলাম। আমার অনুপস্থিতিতে আপনাকেই সব কিছু দেখাশুনা করতে অনুরোধ করছি।
–সেজন্য তোমাকে ভাবতে হবে না। তবে, একা বাইরে যাচ্ছ, একটু সাবধানে থেকো।
.
সেদিন সকালে লেডী টাম্পলিন তার বাড়ির প্রশস্ত দোতলার বারান্দার ওপর একখানা গদি মোড়া চেয়ারে বসে চা পান করতে করতে সেদিনের খবরের কাগজখানা দেখছিলেন।
তার পাশেই ছিল তার মেয়ে মাদামোয়জেল লেন। সে তখন উত্তাল তরঙ্গ-সঙ্কুল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছিল। হঠাৎ মায়ের কথায় চমক ভাঙল। খবরের কাগজ বাঁ হাত দিয়ে তুলে ধরে বলল এই খবরটা পড়ে দেখ লিনা।
-কি খবর, মা?
–পড়েই দেখ না।
–কোনো খবরটার কথা বলছ, মা?
মিসেস হারফিল্ডের মৃত্যুর সংবাদটার কথা বলছি। সংবাদটা পড়ে লেন বলল, এ-রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কে এক প্রৌঢ়া বিধবা অনেক টাকার সম্পত্তি রেখে মারা গেছেন। এতে আর নতুনত্ব কি আছে?
নতুনত্ব আছে বৈকি! দেখছ না, মৃত্যুর পূর্বে সে তার সেবিকা ক্যাথারিন গ্রেকে উইল করে দিয়ে গেছেন।
–তাতে আমাদের কি আসে যায়?
–কিছুটা আসে যায় বৈকি! যে মেয়েটি ঐ বিশাল সম্পত্তির অধিকারিণী হয়েছে সে আমার নিকট আত্মীয়া।
-তাই নাকি! কে হয় সে তোমার?
ও আমার মামাতো বোন। একসময় ওর সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমি ওর চেয়ে বয়সে বড় হলেও আমরা একসঙ্গে বন্ধুর মতো খেলাধূলা করতাম। আমি ভাবছি, আজই ওকে একটা চিঠি লিখব। ওকে এখানে আসার জন্যে অনুরোধ করবো।
–তাতে তোমার কিছু লাভ হবে কি?
–আমি কি সবকাজ লাভের জন্য করি নাকি।
তাছাড়া আবার কি?
–দেখো লিনা, দিন দিন তুমি বড় ভেঁপো হচ্ছ। দিদি হয়ে ছোট বোনকে আসতে লিখব। তাতে তুমি ছিদ্র বের করার চেষ্টা করছ। তোমার স্বভাবটা বদলাতে চেষ্টা কর।
এবার বুঝতে পেরে সে লজ্জিত হলো। সে তখন মাকে খুশী করার জন্যে বলল, বেশ, তাহলে আজই চিঠি লিখে দাও, মা। কিন্তু আমাদের সমাজে সে খাপ খাবে তো?
-আমিও তাই ভাবছি। এতদিন সে মিসেস হারফিল্ডের সেবিকা হয়ে কাজ করেছে। অভিজাত সমাজে মেলামেশা করার সুযোগ পায়নি। তার চালচলন যদি ছোটলোকের মত হয় তাহলে…..
–অত যখন চিন্তা, তাহলে দরকার নেই তাকে লিখে।
-না, মিসেস হারফিল্ডকে আমি চিনতাম। তার বাড়িতেও অনেক বিখ্যাত লোক আসতেন। অতএব ক্যাথারিনকে সমাজে মেশবার পক্ষে অযোগ্য হবে মনে হয় না। বহুদিন দেখিনি আজ কাগজে নামটা দেখেই তাকে দেখতে ইচ্ছে করল।
–বেশ তাহলে আসতেই লিখে দাও।
–হ্যাঁ, তাই ভালো। আমি চিঠিখানা এখুনি লিখছি। তোমার কাজ থাকলে সেরে নাও।
.
মিস ডিনা-এর সঙ্গে দেখা করার পরদিনই ক্যাথারিন লণ্ডনে রওনা হল। এর আগে লণ্ডনে গিয়ে সে স্যাভয় হোটেলে উঠেছে। তাই এবারও সে স্যাভয় হোটেলেই উঠল।
হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সে গেল সলিসিটারের অফিসে। সলিসিটার তাকে দেখেই খুশী হয়ে বললেন, তোমার চিঠি আমি আজই পেলাম। এবার বলো তুমি কি বিষয়ে জানতে চাও?
ক্যাথারিন তার হ্যাণ্ডব্যাগ থেকে মিসেস হারফিল্ডের চিঠিখানা দিলেন। এই চিঠিটা পড়ে দেখুন।
চিঠিখানা মনোযোগ সহকারে পড়ে তিনি বললেন, আইনের চোখে এই চিঠির কোনো মূল্য নেই। মিসেস এম্মা হারফিল্ড সুস্থ শরীরে, স্বেচ্ছায় এই উইল সম্পাদন করেছেন। তাছাড়া উইলের প্রোবেটও নেওয়া হয়ে গেছে। এখন থেকে তুমিই মিসেস হারফিল্ডের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী।
–আমি তাহলে খুশিমত ব্যয় করতে পারি?
–নিশ্চয়ই পার। তবে হ্যাঁ ব্যাঙ্কে একবার তোমাকে যেতে হবে। আমি অবশ্যই আগেই জানিয়েছি। তুমি ব্যাঙ্কে গিয়ে তোমার স্পেসিমেন সিগনেচার রেকর্ড করিয়ে নিলেই কাজ হবে।