পরদিন সকালের ডাকেই চিঠিখানা ক্যাথারিন-এর হস্তগত হলো। চিঠিখানা পড়ে নিজের মনেই একটু হাসল-এখন দেখছি দরদ উথলে পড়েছে। এম্মা বেঁচে থাকতে তো একদিনও বাড়ির খোঁজ নাওনি!
কিন্তু ওরা যে লিখছে তা কি ঠিক। না, আমাকে কালই লণ্ডনে সলিসিটার-এর সঙ্গে দেখা করে সব কিছু জানতেই হবে।
তখুনি ডক্টর হ্যারিসন এসে হাজির। ক্যাথারিনকে খুবই স্নেহ করেন তিনি। সময় পেলে এসে খোঁজ খবর নিয়ে যান।
–তোমাকে খুব চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে যেন!
–হ্যাঁ–মিসেস স্যামুয়েল হারফিল্ড আমাকে একটা চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠির কথাই ভাবছিলাম।
-কি লিখেছেন তিনি? কথাটা বলেই উনি লজ্জিত সুরে আবার বললেন। মানে, তোমার যদি আপত্তি থাকে তাহলে দরকার নেই।
-না আপত্তি থাকবে কেন? আপনি পড়ুন। তিনি চিঠিটা পড়ে ক্যাথারিনকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, রাবিশ!
ওরা হয়তো ভেবেছে যে এই চিঠি পেলেই তুমি ওদের কাছে ছুটে যাবে।
–কিন্তু ওরা যা লিখেছে তা কি ঠিক?
-কখনও নয়। ওরা বলতে চায় মিসেস হারফিল্ড অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় উইলটি করেছেন। একথা যে কত বড় মিথ্যে তা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। আমি জানি তিনি সম্পূর্ণ সজ্ঞানে, সুস্থ শরীর এবং স্বেচ্ছায় ওই উইলটি করেছেন তাছাড়া আমি আর মিসেস হারফিল্ডের সলিসিটার ছাড়া আর কেউ জানত না।
–আপনি তো উইলের সাক্ষী ছিলেন। সম্পত্তির মূল্য সম্বন্ধে আপনার একটা ধারণা নিশ্চয়ই আছে, তাই না?
–তা আছে বৈকি, আমার ধারণা ওর সম্পত্তির মূল্য এক লক্ষ পাউণ্ডের কাছাকাছি।
–না, আপনার ধারণা ঠিক নয়। ওঁর সম্পত্তির মূল্য আরও অনেক অনেক বেশি।
এই বলে ক্যাথারিন তার হ্যাণ্ডব্যাগ থেকে একখানা বড় আকারের খাম বের করে ডক্টর হ্যারিসন-এর হাতে দিয়ে বলল, এর ভেতরে একটা স্টেটমেন্ট আছে। ওটা একবার পড়ে দেখুন আপনি।
স্টেটমেন্ট পড়ে একেবারে অবাক ডক্টর হ্যারিসন। বিস্মিত কণ্ঠে বললেন, এ যে দেখছি উপন্যাসের মত ঘটনা। মিসেস হারফিল্ড যে এত বড় প্রতিষ্ঠানের পার্টনার ছিলেন তা আমরা কোনো দিনই জানি না।
–স্টেটমেন্টের তলায় টাকাকড়ির হিসেবটা দেখেছেন কি!
-হ্যাঁ। প্রতি বছর আট হাজার থেকে দশ হাজার পাউণ্ড-এর হিসেবে জমা হয়েছে এবং দীর্ঘ ত্রিশ বছর যাবৎ এই লভ্যাংশ জমা হতে হতে ওটা এখন ত্রিশ লাখ পাউণ্ডের কাছাকাছি এসে গেছে।
-হ্যাঁ, ঠিক তাই। কিন্তু এছাড়াও ব্যাঙ্কে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং ফিক্সড় ডিপোজিটে ওর নামে যে টাকা জমা আছে তার পরিমাণও এক লাখ পাউণ্ডেরও বেশি। এছাড়া স্থাবর সম্পত্তি এবং জুয়েলারী যা আছে তার মূল্যও প্রায় দশ লাখ পাউণ্ড।
-অর্থাৎ, ওর মোট সম্পত্তির মূল্য প্রায় চল্লিশ লাখ পাউণ্ড। অথচ উনি এমন সাধারণভাবে থাকতেন যে, আমরা কোনোদিন ভাবতেই পারিনি উনি অত টাকার মালিক।
–ঠিকই বলছেন ডক্টর। আমি নিজের চোখেই দেখেছি যে, ওনার বার্ষিক আয় দশহাজার পাউণ্ড থাকা সত্ত্বেও উনি চার হাজার পাউণ্ডের বেশি খরচ করতেন না।
তার মানে, এদিক থেকেও তবে বেশ কিছু জমেছে।
–হ্যাঁ, তাই-ই। এই বাড়তি টাকা দিয়ে উনি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনতেন। আমার মনে হয়, ওঁর নামে যে শেয়ারগুলো আছে তার মূল্য কয়েক লাখ পাউণ্ড।
-মনে হয় বলছ কেন?
-বলছি, তার কারণ হলো ওগুলো এখনও ব্যাঙ্কের সেফ ডিপোজিট ভল্ট-এ আছে। ভল্ট-এর চাবিটাও আমার কাছেই আছে। তাই আমি লণ্ডনে গিয়ে শিগগিরই ব্যাঙ্কের হিসেবগুলো দেখে নেব।
ক্যাথারিন-এর কথা শুনে ডক্টর হ্যারিসন মৃদু হাসলেন। আজ বুঝতে পারছি, মিসেস হারফিল্ড তোমাকে তেমনি ভালোবাসতেন।
–তিনি আগাগোড়াই আমাকে ভালোবাসতেন। তবে, তিনি তার যাবতীয় বিষয়-সম্পত্তি আমাকে দেবেন সেটা কিন্তু ভাবিনি। বার বছর আগে ওর কাছে আমি এসেছিলাম সামান্য একজন সেবিকা হয়ে আর আমি তার সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী। কিন্তু একি। আপনি এখুনি চলে যাবেন না কি।
–হ্যাঁ ক্যাথারিন। এখুনি একটা কলে-এ যেতে হবে। যাবার আগে আবার বলছি মিসেস স্যামুয়েল-এর চিঠি সম্বন্ধে চিন্তার কিছু নেই। এ চিঠির কোনো মূল্য নেই।
–সত্যিই কি কোনো মূল্য নেই? আমার মনে হয় ওরা ও ব্যাপারে হেস্তনেস্ত না করে ছাড়বে না। তাছাড়া…..
তাছাড়া কি?
–বলছিলাম আমি যদি উড়ে এসে জুড়ে না বসতাম তাহলে ওরাই তো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতেন। আমি তাই ভাবছি সম্পত্তির একটা অংশ ওদের দিয়ে দেব। ওদের দীর্ঘনিশ্বাস পড়বে সেটা চাই না, ডক্টর।
–তার মানে, তুমি মনে করছ যে সম্পত্তিটা তুমি বৈধ ভাবে পাওনি, মিসেস হারফিল্ডকে যে লোক ভুলেও একবার দেখতে আসেনি, আগেই পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ করে নিয়ে আলাদা বাস করছে, সেই-ই হবে বৈধ দাবিদার আর তুমি মেয়ের মত হারফিল্ডকে সেবা যত্ন করেছ আর তুমিই যদি ওনার মেয়ে হতে তাহলে কি তোমার একথা মনে হতো?
-না তা হোত না কিন্তু……
-না ক্যাথারিন, এর মধ্যে কোনো কিন্তু নয়। তুমি ওর মেয়ের চেয়েও বেশি ছিলে। আজ তুমি যদি সম্পত্তির অংশ অন্য লোককে দান করো তবে ওর মৃত আত্মাকে অসম্মান করা হবে।
ডক্টর হ্যারিসন খুশী মনে বিদায় নিলেন।
সেইদিন বিকেলে মিসেস হ্যারিসন এলেন। ক্যাথারিনের সঙ্গে করমর্দন করে বললেন– কয়েকদিন থেকেই আসব ভাবছি কিন্তু আর হচ্ছে না। আজ তাই তাড়াতাড়ি কাজকর্ম ছেড়ে চলে এসেছি।