–তোমার বউ কি তার একমাত্র সন্তান?
–হ্যাঁ।
–তাহলে বাবার মৃত্যুর পর সেই-ই হবে তার সমস্ত সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারিণী?
–হ্যাঁ তাই হবে।
–তোমার বউ-এর নিজস্ব টাকাকড়ি এখন কি আছে?
–তা ধর ত্রিশ লক্ষ পাউণ্ড। ব্যাঙ্কেই তো আছে কুড়ি লক্ষ পাউণ্ডেরও বেশি।
–এত টাকার মালিক তোমার বউ!
–হ্যাঁ, তাই।
–আচ্ছা হঠাৎ যদি কোনো কারণে তার মৃত্যু হয় তাহলে তার ওয়ারিশ কে হবে?
-তোমার কথা আমি বুঝতে পেরেছি, কিন্তু ওর মৃত্যুর কোনো সম্ভাবনা নেই, কারণ ও রীতিমত স্বাস্থ্যবতী।
-স্বাস্থ্যবতী মেয়েরা কি মরে না? কোনোরকম আকস্মিক দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণেও তো মৃত্যু হতে পারে।
মিরেলির দিকে বিস্মৃত দৃষ্টিতে তাকাল ড্রেক। মিরেলি বলল, তাই বলে ভেবো না আমি তোমার বউ-এর মৃত্যু কামনা করছি। যাক গে, তুমি বরং তার সঙ্গে একটা বোঝাঁপড়া করে নাও যাতে ও মামলায় সাক্ষী না হয়, সে ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে।
–সে যদি আমার কথা না শোনে?
–আমার মনে হয় সে শুনবে। খবরের কাগজে তার চরিত্র নিয়ে আলোচনা সে নিশ্চয়ই চাইবে না।
তার মানে?
–তোমার বউ সম্পর্কে অনেক কথাই জানি সে সব তোমার না শোনাই ভালো।
–কি জানো তুমি ওর সম্বন্ধে?
–বললাম তো, অনেক কিছুই জানি।
–তোমাকে বলতে হবে সে কথা।
–নিতান্তই শুনবে? তোমার বউ কাউন্ট দ্য লা রোচীর উপপত্নী; বিয়ের আগে থেকেই তার সঙ্গে নয় ছয় ছিল। এখন তোমার বউ প্যারীতে গিয়ে ওর সঙ্গে রাত কাটায়।
–একথা আমি বিশ্বাস করি না।
–বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার। আমার কথার সত্যতা তুমি যাচাই করে দেখতে পারো। তোমাকে আর একটা খবর দিতে পারি।
–কি খবর?
–সামনের চোদ্দ তারিখে তোমার বউ রিভিয়ারয়ে কাউন্টের সঙ্গে কটা দিন স্ফুর্তি করার জন্যে যাচ্ছে।
–এসব কথা তুমি কেমন করে জানলে?
-আমি প্যারীর মেয়ে সে কথা ভুলে গেলে। প্যারীতে আমার এমন অনেক বন্ধু আছে যারা কাউন্টের বিশেষ বন্ধু।
যাকগে ওসব কথা নিয়ে তুমি মন খারাপ করো না। মনে রেখো অপরিমিত অর্থ বলে বলীয়ান লোকের সঙ্গে তোমার মোকাবিলা করতে হবে। অতএব, তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হলে তার মেয়েকে কজা করতে হবে।
–থাম। আর কিছু শুনতে চাই না। আমার মাথার ভেতরে তুমি আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছ?
একবার মিরেলির দিকে তাকিয়ে দ্রুত পদে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ক্যাথারিন।
ক্যাথারিন চলে যেতেই মিরেলির ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল।
.
০৭.
মিসেস স্যামুয়েল হারফিল্ড–এর চিঠি
মিসেস ক্যাথারিন গ্রে বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হয়েছে। সম্পত্তিটা এম্মা হারফিল্ডের। দীর্ঘ বার বছর ধরে এই নিঃসন্তান ধনবতাঁকে সেবা করেছে ক্যাথারিন। তাই মৃত্যুর পূর্বে উইল করে তিনি তার সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি এবং সেন্ট মেরী মিড়-এর বিশাল বাড়িটি ক্যাথারিনকে দিয়ে গেছেন।
সেন্ট মেরী মিড পল্লীর সবাই এতে খুশী হয়েছে। দীর্ঘ বার বছর তারা ক্যাথারিনের ব্যবহারে এবং সুসংযত চালচলনে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই মুগ্ধ।
কিন্তু স্থানীয় নরনারী খুশী হলেও মিসেস হারফিল্ডের দেওর মিঃ স্যামুয়েল হারফিল্ড এতে খুশী নন। তার ধারণা ছিল যে এম্মা হারফিল্ড-এর মৃত্যুর পর সেই হবে তার বিষয় সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। তাই মনে হয় সে একেবারে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাথারিন-এর ওপর।
এ ব্যাপারে তার স্ত্রী স্বামীর চেয়ে বেশি রেগে যায়। ভদ্রমহিলা রীতিমত কুটবুদ্ধি সম্পন্না। তার এই কুটবুদ্ধির জন্য তার স্বামীও তাকে রীতিমত সমীহ করে চলে এবং সব ব্যাপারেই তার পরামর্শ নেয়।
কয়েকদিন ধরে দুজনে পরামর্শ করে ঠিক হল স্যামুয়েল-এর বউ একখানা চিঠি দেবে ক্যাথারিনকে এবং চিঠিতে তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে যে আইন অনুসারে এম্মা হারফিল্ড-এর উইলের কোনো মূল্যই নেই। আদালতে ওই উইল সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য হবে।
অনেকবার কাটাকাটির পর চিঠির বয়ানটা স্বামী স্ত্রীর মন মতো তৈরি হলো। তারা মনে করলো যে, চিঠিটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাথারিন ছুটে আসবে। চিঠিটা লেখা শেষ করে আবার পড়ে দেখল দুজনে।
কল্যাণীয়া ক্যাথারিন,
আমার স্বামীর ভ্রাতৃবধূকে তুমি এতদিন যেভাবে সেবা-যত্ন করেছ তার জন্য আমি এবং আমার স্বামী তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু কৃতজ্ঞতা জানিয়েই আমরা আমাদের কর্তব্য শেষ করবো না। তোমার ভবিষ্যৎ জীবন যাতে সুখে কাটে সে ব্যবস্থাও আমরা নিশ্চয়ই করব।
এম্মার মৃত্যুতে আমরা শোকে একেবারে মুহ্যমান হয়ে পড়েছি। আমরা জানি যে মৃত্যুর পূর্বে তার মাথাটা একটু গোলমাল হয়ে গিয়েছিল। অতএব বিকৃত মস্তিষ্কে তিনি যে উইল করেছেন তা আইন সম্মত হয়নি। আদালতে গেলে সে উইল অগ্রাহ্য হবে।
তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে। হারফিল্ড-এর উইলের ব্যাপারে যাতে আমাদের আদালতে যেতে হয় সে ব্যবস্থা তুমি নিশ্চয়ই করবে। আমাদের মনে হয় আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই এটা সবচেয়ে ভালো হবে।
তোমার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধেও আমরা চিন্তা করেছি। তোমাকে একটা ভালো চাকরি যোগাড় করে দেব তাছাড়া এম্মা হারফিল্ডকে যেভাবে যত্ন করেছ তার পুরস্কার হিসাবে তোমাকে মোটা টাকা দেব স্থির করেছি। আশা করি আমাদের স্নেহের দান তুমি গ্রহণ করবে।
শুভাকাক্ষিণী অ্যা
নি হারফিল্ড।