–আমার সঙ্গে-হ্যাঁ, দু একবার দেখা হয়েছে।
–তাই নাকি! কই আমাকে তো বলেননি কিছু?
–আজ এটা মামুলী কথা বলেই আপনাকে বলিনি।
-না না। মেয়েটিকে আমার ভারী ভালো লাগে। ওই মেয়ে কোথাকার সেন্টমেরি মিড়-এ পড়ে আছে। ভাবলে খুব খারাপ লাগে।
-সত্যিই ভালো মেয়ে। নয়তো অমন একজন খিটখিটে মেজাজের অনাত্মীয়া বৃদ্ধাকে দেখাশোনা করার জন্যে কে অত মাথা ঘামাতো? কিংটন বললেন।
-তা যাই বলুন, ক্যাথারিন-এর মতো মেয়ের এ এক অপমৃত্যুই বলা যায়। বললেন পোয়ারো। আচ্ছা, এবার কিছু কাজের কথা বলব আপনাদের। ধরুন ড্রেক ক্যাথারিন তার স্ত্রীকে খুন করেননি।
-মানে?
দুজনেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে চেয়ে রইলেন পোয়ারোর দিকে।
–ধরুণ আমি বলছি, মিঃ ড্রেক ক্যাথারিন তার স্ত্রীকে খুন করেননি।
–আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি মঁসিয়ে?
-না মঁসিয়ে আলডিন, পাগল আমি নই। তবে লোকে বলে আমি না কি অদ্ভুত স্বভাবের লোক, খামখেয়ালী। যাকগে, যা বললাম তা যদি সত্যি হয়, আপনি তাহলে আনন্দিত না দুঃখিত হবেন?
–নিশ্চয়ই আনন্দিত হব। কিন্তু একি আপনার নেহাতই কল্পনা না এর পেছনে কোনো বাস্তবতা আছে?
-একটা ঝুঁকি নিয়ে দেখব ঠিক করেছি। কারণ আমার মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত কাউন্টই হবেন বোধহয়। অন্তত ওর পক্ষে যে অসম্ভব ছিল না সেটাই খুঁজে বের করেছি।
পোয়ারো কড়িকাঠের দিকে দেখতে লাগলেন।
-কি করে বের করলেন?
–আমার কতগুলো নিজস্ব পদ্ধতি আছে। আর আছে কৌশল ও বুদ্ধি। তাই দিয়েই বের করতে হয়েছে।
–কিন্তু রুবীর ব্যাপারটা; কাউন্ট-এর কাছ থেকে যে রুবী পাওয়া গেছে সেগুলো তো নকল?
–একমাত্র রুবীগুলোর জন্যেই কাউন্টের পক্ষে এই অপরাধ করা সম্ভব বলে মনে হয়। কিন্তু একটা জিনিষ আপনারা লক্ষ্য করছেন না; সেটা হলো, শুধু যদি রুবীর ব্যাপারটা ধরেন তাহলে এও সম্ভব যে কাউন্ট-এর আগে আর কেউ হয়তো সেখানে গিয়েছিল, যার পক্ষে রুবীগুলো নিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। আর যার ফলে কাউন্ট হত্যা করার পরও রুবীগুলো পায়নি।
এতো সম্পূর্ণ নতুন কথা বলছেন মঁসিয়ে উত্তেজিত হলো কিংটন। এভাবে কেউই তো চিন্তা করিনি।
আপনি কি এই অদ্ভুত সম্ভাবনার কথা বিশ্বাস করেন মঁসিয়ে পোয়ারো?–আলডিন জানতে চাইলেন।
-দেখুন মিঃ আলডিন, এটা আমার অনুমান মাত্র, এখনও কিছু প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু আমার এই অনুমানের প্রতিটি সূত্রই খুব মূল্যবান। সেইজন্যেই আপনাকে আমার সঙ্গে ফ্রান্সের দক্ষিণে একবার যেতে হবে এবং ঘটনাস্থানে থেকে আমাদের কাজ করে দেখতে হবে।
-আপনি কি বাস্তবিকই আমার যাওয়া প্রয়োজন মনে করেন মঁসিয়ে।
–সেই প্রয়োজনটা আপনি নিজে ভেবে দেখুন মিঃ আলডিন।
–নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। তা কবে যাবেন ঠিক করেছেন? আপনার কিন্তু এখন পরপর অনেকগুলো বোর্ড মিটিং আছে স্যার। –কিংটন মনে করিয়ে দিলেন।
-কিন্তু এটাই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় আমার কাছে। ঠিক আছে মঁসিয়ে পোয়ারো, কালই যাবো। বলুন কোনো ট্রেনে যাবেন?
–আমি ঠিক করেছি, ব্লু ট্রেনেই যাবো আমরা। হাসলেন পোয়ারো।