–কি সেটা?
–সেটা হল নিহত রুথ ক্যাথারিন–এর বিকৃত করা মুখ। শতশত বার নিজেকে প্রশ্ন করেছি স্ত্রীকে খুন করার পরও মৃত স্ত্রীর মুখ নির্মমভাবে থেতলে দেবেন, সত্যিই কি ড্রেক ক্যাথারিন সেই চরিত্রের নোক? মুখটাকে বিকৃত করায় কি স্বার্থ সিদ্ধি হতে পারে? মনের আক্রোশ মেটানো সাধারণতঃ মনস্তত্ব বলে, কাউকে আক্রোশের বসে খুন করতে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আক্রোশ মিটে যায়। মৃতের পরিচয় গোপন করার জন্যেই মাথা কেটে ফেলে। মুখ থেতলে দেয়। সেদিক থেকেও মন সায় দেয় না। একটা মাত্র জিনিসই এই সমস্যায় আমাকে সাহায্য করেছে।
পকেট থেকে নিজের নোট বইটা থেকে কয়েকটা লম্বা চুল বের করে দেখালেন, মনে পড়ে মাদমোয়াজেল?
ব্লু ট্রেনের সেই কামরায় কম্বলের সঙ্গে এগুলো জড়িয়ে ছিল? সামনে ঝুঁকে ক্যাথারিন সেই চুলগুলো দেখতে লাগল।
–কিছুই ধরতে পারছেন না? কিন্তু অনেক কিছু এর মধ্যে জানতে পারবেন মাদমোয়াজেল।
–একটা জিনিস আঁচ করছি। একটা অদ্ভুত কথা। আর সেইজন্যেই আপনাকে বলছিলাম প্যারীতে কেন গিয়েছিলেন?
–আপনাকে যখন চিঠি লিখি—
–রীজ হোটেল থেকে লেখা চিঠির কথা বলছেন তো?
–হ্যাঁ, রীজ হোটেলের কথাই বলছি। জানেন মাঝে মাঝে আমি খুব বড়লোক হয়ে যাই যখন কোনো কোটিপতি আমার হোটেলে থাকার খরচা দেন।
–কিন্তু সোভিয়েট এমব্যাসী এ ব্যাপারে জড়িত নয়।
-আমি কিছু খবর জানতে গিয়েছিলাম সেখানে। কোনো এক বিশেষ লোকের কাছেই গিয়েছিলাম এবং তাকে ভয় দেখিয়ে এসেছি।
-পুলিশের ভয়?
-না, খবরের কাগজে সেই লোকটির কীর্তির কথা ছাপিয়ে দেবার ভয় দেখিয়েছি। এসব ব্যাপারে ওরা প্রেসকে বেশি ভয় করে।
-তারপর?
-তারপর জানতে পেরেছি কোথায়, কখন, কবে এবং কাকে সেই রুবীটা বিক্রি করা হয়। লোকটাকে চাপ দিতেই সব বলেছে আমায়, এমনকি সেইদিন রুবীটা বিক্রি হবার পর রাস্তায় দেখা সেই লোকটি যে একমাথা সাদা চুল নিয়েও যুবকের মতো চলছিল। তার কথাও বলেছে। যাকে আমি নাম দিয়েছি –মঁসিয়ে লে মাকুইস।
আপনি লণ্ডনে এসেছিলেন কি মিঃ আলডিনের সঙ্গে দেখা করার জন্যে।
–শুধু সেই জন্যেই নয় আরও কাজ ছিল। একজন মঞ্চজগতের ভদ্রলোক ও হার্লে স্ট্রীটের এক ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করেছি এবং দুজনের কাছেই কিছু খবর পেয়েছি। এইসব একবার দেখুন আমি যা পাচ্ছি আপনি তা পাচ্ছেন না।
–আমি?
–হ্যাঁ, আপনি। একটা ব্যাপারে আমার খটকা লাগছিল। খুন এবং রুবী চুরি করা একই লোকর কাজ কিনা। অনেকদিন পর্যন্ত আমি কোনো সিদ্ধান্তেই আসতে পারিনি।
-এখন?
–এখন আমি জানি।
–আমি কিন্তু আপনার মতো বুদ্ধিমান নই মঁসিয়ে। আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটা দেখছিলাম।
একই কথা। একই আয়নার সামনে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকে আয়না দেখলে কি হবে? কাউকে সামনে, কাউকে পাশ থেকে দেখা যাবে। মোট কথা দেখা যাবেই। আয়নায় প্রতিফলন হবেই।
–আমি যা ভেবেছি তা হয়তো আপনার অসম্ভব মনে হতে পারে কিন্তু
–হা হা, বলুন।
-দেখুন তো এটা আপনার কোনো সাহায্যে আসে কিনা? একটা খবরের কাগজের কাটিং দিলেন। মিস ডিনার-এর পুরনো সংগ্রহ থেকে পেয়েছি।
কাটিংটা পড়ে গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়লেন পোয়ারো–যে কথা আপনাকে বলছিলাম মাদমোয়াজেল। একই আয়নায় একই জিনিস নানাভাবে রেখে দেখলেও প্রতিচ্ছবি একই দেখাবে।
–আমায় এবার ফিরতে হবে। ট্রেনের সময় হয়ে গেছে। উঠে দাঁড়ালেন ক্যাথারিন। মঁসিয়ে পোয়ারো–
-বলুন মাদমোয়জেল।
–এটা–এটা আর বেশিদূর বুঝতে পেরেছেন–আমি–আমি আর পারছি না। এভাবে।
গলাটা ধরে এলো ক্যাথারিন–এর।
ক্যাথারিন-এর হাত ধরে পোয়ারো আশ্বাস দিলেন, সাহস সঞ্চয় করুন মাদমোয়াজেল। এখন ভেঙে পড়লে কিছুতেই চলবে না। শেষ প্রায় হয়ে এসেছে।
.
৩০.
পোয়ারোর নতুন কথা
-স্যার। মঁসিয়ে পোয়ারো আপনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন।
-চুলোয় যাক। যত সব। রাগে ফেটে পড়লেন আলডিন। আলডিনের অবস্থা দেখে মায়া হলো কিংটন-এর।
–আজ সকালের পত্রিকাটা দেখেছ একবার?–অশান্তভাবে পায়চারি করতে লাগলেন আলডিন।
–একবার চোখ বুলিয়েছি স্যার।
–এখনও পর্যন্ত কাগজগুলো এটা নিয়ে কি নোংরামিই না করে চলেছে।–নিষ্ফল আক্রোশে দুহাতে মুখ ঢেকে চেয়ারে বসে পড়লেন আলডিন। ছিঃ ছিঃ, বাইরে মুখ দেখানা যাচ্ছে না কাউকে। এখন আফশোস হচ্ছে, এই অপদার্থ বেলজিয়ানটার ওপর রুথ-এর হত্যাকারীকে খুঁজে বার করার ভার দিয়েছি বলে।
–কিন্তু স্যার। আপনার সামনেই বেকসুর নিরপরাধ হয়ে থাকবে এও আপনি নিশ্চয়ই চাইতেন না?
–তার বোঝাপড়া আমিই করতাম।
–স্যার, তাতে আপনার কিছু সুবিধে হতো বলে মনে হয় না।
–এখনই বা কি সুবিধেটা হচ্ছে আমার?–দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন আলডিন। তা, ওকি সত্যিই দেখা করতে চায়?
–হ্যাঁ স্যার, বিশেষ দরকার আছে বলেছেন।
–তাহলে আজ বেলার দিকে আসতে বলো তাকে।
সকাল দশটায় পোয়ারো আলডিন-এর সঙ্গে দেখা করতে এসে দেখলেন তাকে যেমন সুন্দর আর তেমনি প্রাণবন্ত লাগছে। তিনি প্রাণ খুলে খোশ গল্প করতে শুরু করলেন। বললেন এক ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে লণ্ডনে এসেছিলেন। ডাক্তারের নামও বললেন।
-আমার পুরনো স্মৃতি জড়ানো আছে এই ডাক্তারটির সঙ্গে। তখন পুলিশে কাজ করি। কয়েকটা বদমায়েসকে ধরতে গিয়ে বুলেট লাগে এই কাঁধটায়। তারপর হঠাৎ কিংটন-এর দিকে তাকিয়ে, আচ্ছা আপনার সঙ্গে মিস গ্রে-র দেখা হয়েছে, তাই না?