প্রীতিমুগ্ধ
এরকুল পোয়ারো।
চিঠিখানা হাতে নিয়ে ক্যাথারিন কখন একসময় ভাবের রাজ্যে চলে গেছে, চমক ভাঙল বৃদ্ধা ডিনার-এর তীক্ষ্ণ গলার আওয়াজে।
–আমি তখনই বলেছি ওদের, এ তোমরা নও, বুঝলে? ক্যাথারিন, লেডী টাম্পলিন-এর বোন। কি ভাবো তোমরা?
–তুমি কি আমার হয়ে সকলের সঙ্গে ঝগড়া করবে নাকি?
তোমার সম্বন্ধে বাজে কথা বললে আমি কি চুপ করে থাকতে পারি বল? আধুনিক সমাজের ঠুনকো আদবকায়দা শেখার জন্যে তুমি নাকি বড়লোকদের সঙ্গে মিশতে শুরু করেছ
–এ কথা তো সত্যিও হতে পারে মিস ডিনার। আমি যে সে চেষ্টা করছি না, তা কেমন করে জানলে?–কই, আধুনিক সমাজের বেলেল্লাপনা তো দেখছি না। কই, তোমার স্কার্ট তো হাঁটুর ওপরে ওঠেনি আর অসভ্যের মতো জুতোও তো পরোনি।
–একটা কথা বলতে ভুলে গেছি তোমায়। ক্যাথারিন বলল, আমার এক রিভিয়ারার বন্ধু এখানে একদিন আসতে চায়।
বন্ধু মানে পুরুষ মানুষ?
-হ্যাঁ।
–কে সে?
–এক কোটিপতি মার্কিন ভদ্রলোকের প্রাইভেট সেক্রেটারী।
–কি নাম?
–কিংটন। মেজর রিচার্ড কিংটন।
-হুম! কোটিপতির সেক্রেটারী এখানে আসতে চায়। ক্যাথারিন, তোমার ভালোর জন্যে একটা কথা বলি। যদিও তুমি বিচক্ষণ মেয়ে তবুও জেনে রাখ, প্রতি মেয়েই জীবনে একবার না একবার ঠকে। তোমায় যেন একবারও ঠকতে না হয়।
-তাহলে বন্ধুকে আসতে বারণ করে দেব?
-না না, বারণ করবে কেন? তাকে নিশ্চয়ই আসতে বলবে। তোমার বন্ধুকে একদিন লাঞ্চ খেতে বল এখানে। অবশ্য এলেন-এর যা রান্না।
তারপর একদিন যথাসময়ে কিংটন নেমন্তন্ন রাখতে সেন্ট মেরী মিড-এ এলো। বৃদ্ধা ডিনার খুশি হলেন কিংটন-এর সঙ্গে আলাপ করে। অনেক গল্প করে তারপর বিকেলে চা খেয়ে কিংটন বিদায় নিল সেন্ট মেরী মিড থেকে।
ক্যাথারিনকে ডাকলেন ডিনার। না, তোমার লোক চিনতে ভুল হয়নি। পুরুষ মানুষ যতই মেজর কর্নেল হোক না কেন, গভীর ভালোবাসার জালে জড়িয়ে না পড়লে এমন অসহায়ের মতো চেহারা কখনও হয় না।
–তুমি বড় ভালো।–বৃদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল ক্যাথারিন।
.
২৮.
ইম্পেসারি ও মিঃ অ্যারন
মদের গ্লাসে একটা লম্বা চুমুক দিলেন মিঃ জোসেফ অ্যারন্।
আঃ, খুব উৎকৃষ্ট জিনিসই অর্ডার দিয়েছেন মঁসিয়ে পোয়ারো।-মুখে লেগে থাকা ফেনাটুকু বাঁ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিতে নিতে জড়ানো চোখে চাইলেন পোয়ারোর দিকে। হ্যাঁ, এমন জিনিস খেয়েও আরাম, খাইয়েও আরাম। দিন-দিন, ঢালুন–বেশি করেই ঢালুন।
–চিকেন মেয়নিজ?
-হা হা, নিশ্চয়ই দেবেন। কিডনি পুডিং অবশ্যই আমার অত্যন্ত প্রিয় খাবার। অবশ্য অ্যাপ টার্ট দিয়েই আমি খাওয়া শেষ করি।
কোনো কথা না বলে নিঃশব্দে একের পর এক অর্ডার দিয়ে চললেন পোয়ারো। কিছুক্ষণের জন্যে খাবারের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেললেন মিঃ অ্যার। তারপর একসময় খাওয়া শেষ হলে নেশাগ্রস্ত চোখ তুললেন। কি যেন একটা দরকারী কথা আছে বলছিলেন মিঃ পোয়ারো? যদি আপনার কোনো সাহায্যে আসতে পারি তো বলবেন, আমার যথাসাধ্য করব।
অনেক ধন্যবাদ। মঞ্চ জগৎ সম্বন্ধে কিছু জানতে হলে একমাত্র আপনি ছাড়া তো দ্বিতীয় কেউ নেই, তাই আপনার কথাই মনে হয়েছে সর্বপ্রথম।
নেহাত ভুল বলেননি। বেশ আত্মতৃপ্তির মুখভঙ্গি করলেন অ্যারন্। –মঞ্চ জগতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সম্বন্ধে কিছু জানতে হলে এই ইম্পেসারি ও জোসেফ অ্যার-এর কাছে আসতে হবে।
–আচ্ছা মিঃ অ্যারন্, কি নামে কোনো যুবতাঁকে এ লাইনে চিনতেন কি?
–কি? কি টি কিড।
–সম্ভবতঃ কি টি কিড।
-খুব চালাক চতুর ছিল মেয়েটা। আর ছেলের ভূমিকায় ভালো করত। গান আর নাচ জানত ভাল। ছেলে সাজলে কেউ ধরতেই পারত না। এর কথাই বলছেন কি?
-হ্যাঁ এরই কথা জানতে চাইছিলাম।
-ওঃ। খুব ভালো রোজগার করত মেয়েটা। ওর বেশির ভাগ কনট্রাক্টই ছিল পরুষ ভূমিকায়। একটা দিন কামাই করত না। কিন্তু স্ত্রী ভূমিকায় অভিনয় করার সময় ও নিজেকে ছুঁতে দিত না কাউকে।
-আমিও তাই শুনেছি। কিন্তু তাকে অনেকদিন ধরে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে না। জানেন কি?
হ্যাঁ। এক প্রচুর বড়লোক মক্কেল পাকড়ে মঞ্চকে চিরবিদায় জানিয়ে ফ্রান্সে গিয়ে আস্তানা গেড়েছে।
-কতদিন আগে সেটা?
–দাঁড়ান, ভেবে দেখি। তা বছর তিনেক আগে তো নিশ্চয়ই।
–যার সঙ্গে কিটি গিয়েছিল সেই লোকটি সম্বন্ধে কিছু জানেন কি?
–তিনি তখন পুরোদমে টাকার সমুদ্রে ভাসছেন। কি যেন নাম। কাউন্ট অথবা মাকুইস। এ ধরনের কিছু একটা হবে। সম্ভবতঃ মার্কুইসই।
–আর কিছু জানেন?
-না, আর কিছুই জানি না। এমনি যে কিটির সঙ্গে আমার দ্বিতীয়বার দেখাও হয়নি। আপনাকে আরও কিছু খবর দিতে পারলে খুশী হতাম। কোনো একসময় আপনিও যে আমার যথেষ্ট উপকার করেছিলেন সে কথা জোসেফ অ্যারন্ কোনোদিনই ভুলে যাবে না।
–সে ঋণ তো শোধ হয়ে গেল আপনার।
-উপকারীর উপকারের চেষ্টা সবসময়ই করা উচিত।
–তারপর আপনার কাজকর্ম কেমন চলছে?
-ভালো-মন্দয় চলে যাচ্ছে। দর্শকদের ভোয়ালে কখন কোনোটা ভালো লাগে কখন লাগে না- সবসময় দুচোখ খুলে কাজ করতে হয়।
-আচ্ছা এখন নাচের কদর বেড়েছে বোধহয়, তাই না?
–হ্যাঁ, দর্শকরা নাচটা পছন্দ করে দেখছি।
–মিরেলি নামে এক নাচিয়ের সঙ্গে আলাপ হল রিভিয়ারায়।
–মিরেলি? ওর এখন বাজার গরম। ও না চাইলেও অর্থ যেচে আসে ওর কাছে। তবে আমার এখনও প্রয়োজন হয়নি ওর কাছে যাবার। শুনেছি ভীষণ মেজাজী আর দেমাকী। ব্যবহারও খুব ভালো নয়।