নোটবই পড়া শেষ হলে আলডিন খুব খুশী হয়ে বললেন, ধন্যবাদ মিঃ গোবি। আমি যা জানতে চেয়েছিলাম সবই আছে এতে।
নোটবইটা সযত্নে ড্রয়ারে রেখে দিলেন। তারপর আলডিন একতাড়া ব্যাঙ্ক নোট মিঃ গোবির হাতে দিলেন, এই নিন আপনার পারিশ্রমিক। নোটগুলো পকেটে রেখে গোবি উঠে দাঁড়ালেন, এবার তাহলে আসি স্যার। দরকার হলে আবার ডাকবেন।
নিশ্চয়ই ডাকব। আপনার কাজে আমি খুব খুশী।
গোবি চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মিঃ আলডিন নোট বইখানা সঙ্গে নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুথের বাড়িতে পৌঁছলেন। রুথ বিস্মিত হলেন, কি হয়েছে বাপি?
–তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে এলাম। সলিসিটারের সামনে সে কথা বলা ঠিক হতো না।
–কি কথা, বাপি?
-ক্যাথারিন আমাকে বলেছে, তুমি এখনও সেই হতভাগাটার সঙ্গে মেলামেশা করো। একথা কি সত্যি?
–কার কথা বলছ, বাপি?
-বলছি সেই লম্পট কাউন্ট দ্য লা রোচির কথা। আমি জানতে চাই, তার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক আছে কিনা?
-ও তোমার কাছে মিথ্যে কথা বলেছে। কাউন্টের সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই, বাপি। ও নিজের দোষ ঢাকবার জন্যেই আমার ঘাড়ে দোষ চাপাবার চেষ্টা করছে।
মেয়ের কথায় নিশ্চিন্ত হয়ে তিনি গোবির দেওয়া নোটবইখানা মেয়েকে দিলেন। ড্রেক-এর যাবতীয় গোপন খবর পড়ে দেখো।
রুথ নোটবইখানা শেষ করে বাপিকে ফেরৎ দিয়ে বলল, ও যে এত নিচে নেমে গেছে তা আমি জানতাম না বাপি।
-এবার তাহলে বুঝতে পারছ, যে এই অস্ত্রেই আমি ওকে ঘায়েল করতে পারব। ও যাতে মামলাটা কনটেস্ট করতে না পারে তার জন্যেই এটা আমি সংগ্রহ করেছি। এবার তুমি নিশ্চিন্তে মামলা রুজু করতে পার।
এরপর আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর মিঃ আলডিন মেয়ের কাছে বিদায় নিলেন।
২. মিরেলি
০৬. মিরেলি
শ্বশুরের ঘর থেকে ফিরে এসে ড্রেক ক্যাথারিন-এর মনে ভেতরে ঝড় বইছে। মিঃ আলডিন-এর কথাগুলো তার মনটাকে একেবারে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। রাগে অপমানে তার মনটা একেবারে অস্থির হয়ে উঠেছিল। উনি কোটি কোটি পাউণ্ডের মালিক, আমার তাতে কি! আমি কি ওকে তোয়াক্কা করি নাকি! বাবাকেই পাত্তা দিলাম না আর উনি তো শ্বশুর।
ভাবতে ভাবতে মাতালের মত চলতে চলতে একটা মেয়ের গায়ের ওপর গিয়ে পড়ে। মেয়েটি বিরক্ত হয়ে বলল, আপনি কি অন্ধ নাকি?
খুব লজ্জিত হলো ক্যাথারিন, ক্ষমা করবেন। অন্যমনস্ক ছিলাম তাই আপনাকে দেখতে পাইনি। ভারি অন্যায় হয়ে গেছে। কিছু মনে করবেন না।
ক্যাথারিন-এর বিনীত ব্যবহারে মেয়েটি নরম হলো। না না, আমি কিছু মনে করিনি, আচ্ছা চলি।
মেয়েটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আপন মনেই বলল–কে গো তুমি সুন্দরী। ক্যাথারিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিফট-এর দিকে এগিয়ে গেল।
রাস্তায় নেমে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা মিরেলির হোটেলের দরজায় গেল। মিরেলির ঘরে গিয়ে দেখে সে চোখ বুজে গা এলিয়ে বিশ্রাম করছে।
ক্যাথারিন তার পাশে বসে আলতো ভাবে একটা চুমু খেল, কিগো আরামে ঘুমিয়ে পড়লে?
ক্যাথারিন-এর প্রশ্নে সে চোখ খুলল, না ঘুমোইনি। এতক্ষণ চোখ বুজে একটা নতুন নাচের মহলা দিচ্ছিলাম। অ্যাসব্রোচ এসেছিল। তার পরবর্তী অপেরার যে নাচটি হবে আমাকে বোঝাচ্ছিল। নাচটা দেখে দর্শকদের মাথা ঘুরে যাবে।
-তোমার নাচের কথা রেখে এবার আমার কথাটা শোনো।
–তোমার কথা মানে? কি হয়েছে তোমার?
–আমার মাননীয় শ্বশুর মহাশয় তার মেয়েকে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
–কি গেরো! কিন্তু তোমার শ্বশুর বা তার মেয়ের এত রাগ কেন তোমার ওপরে? কি তোমার অপরাধ?
–অপরাধ অনেক। প্রথম অপরাধ তোমার সঙ্গে মেলামেশা।
–তুমি তাহলে কি করবে ঠিক করেছ?
–কি আর করবো? আমি ভাবছি অন্য কথা।
–কি?
–ভাবছি, মামলাটা দায়ের হওয়ার সঙ্গেই সঙ্গেই পাওনাদারের দল আমাকে ঘিরে ধরবে। আর তুমি তখন আমাকে বিদায় করবে।
একথা তুমি ভাবলে কি করে? তোমার সঙ্গে কি আমার টাকার সম্পর্ক? টাকাই আমার কাম্য হলে টাকা দেবার লোকের অভাব হতো না আমার। তোমার কাছে টাকার প্রত্যাশা আগেও করিনি আর করব না। তোমার বিপদে-আপদে সব সময়েই আমি তোমার পাশে থাকবো।
-তোমার কথা শুনে আমার মনের বল বাড়লো।
আজ আমি নতুন করে বুঝলাম যে সত্যিই তুমি আমাকে ভালোবাস। কিন্তু এবার কি করা যায় বলতো?
আমি বলি কি, তুমি তোমার বউ-এর সঙ্গে একটা মিটমাট করে নাও সে যাতে মামলার পথে না যায় তার জন্যে তাকে খুশী রাখতে চেষ্টা করো।
-না, তা হবার নয়। আমার শ্বশুরের জেদ তুমি জান না। আর তাছাড়া বর্তমান সভ্য জগতে টাকার জোরে অনেক কিছু করা যায়।
তা হয়তো যায়, কিন্তু ডিভোর্সের মামলাটা আর তিনি রুজু করলে চলবে না। এটা করতে হবে তোমার বউকে দিয়ে। সে নারাজ থাকলে শ্বশুর কিছুই করতে পারবে না। তাই তোমার বউয়ের সঙ্গে মিটমাট কর।
-না, তা আমি পারব না। সে চায় আমাকে তার ভেড়ুয়া করে রাখতে সে আমি পারব না। তাছাড়া আমার স্ত্রী বাবার বিরুদ্ধে যেতে পারবে না। ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় তাকে শুনতেই হবে। ওর বাবার মতো ধনকুবের খুব কমই আছে। এই তো তিনি ইতিহাসের প্রসিদ্ধ হার্ট অফ ফায়ার কিনে ফেলেছেন।
-বলো কি?
–হ্যাঁ তাই-ই। লক্ষাধিক পাউণ্ড ব্যয় করে ওই অমূল্য-রত্নটি কিনেছেন। আমার ধারণা এটা উনি ওর মেয়ের জন্যেই কিনেছেন।