-আরে একি, কোথায় যাচ্ছেন? কি আপদ!–হিপোলাইটও ছুটল ভেতরে।
–আমি এরকুল পোয়ারো।-রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে হতভম্ব মেরীকে বললেন।
ততক্ষণে হাঁপতে হাঁপাতে হিপোলাইটও এসে গেছে সেখানে, কি ব্যাপার দেখছ মেরী! কোথাকার,
–এরকুল পোয়ারোর নাম নিশ্চয়ই শুনেছ তোমরা?
–জীবনে কোনোদিন শুনিনি।–সবেগে মাথা নাড়ল হিপোলাইট।
–না, তোমাদের নিয়ে পারা গেল না।–অশান্ত ছোট ছেলের ভঙ্গি করলেন পোয়ারো, কোনো পাঠশালায় পড়েছিলে। এমন একজন নামকরা লোক। সাধারণ জ্ঞানের বই ছিল না তোমাদের ক্লাস-রুটিনে?
দুজনেই বিস্ময়ে ঢোক গিলে বলল, আজ্ঞে মশায়ের আসার কারণটা যদি
-হ্যাঁ বলছি। পুলিশের কাছে সাতটা মিথ্যে কথা কেন বলেছো সেটাই আমার জানা দরকার।
–মিথ্যে কথা। কখনও নয়।রেগে গেল হিপোলাইট।
–কিন্তু ও নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।–পাশেই রাখা একটা টুলে বসে পোয়ারো বললেন, আমি জানতে চাই, কাউন্ট দ্য লা রোচি চোদ্দই জানুয়ারি সকালে এখানে এসেছেন বলে পুলিশের কাছে তুমি জবানবন্দি দিয়েছ কিনা?
কিন্তু সেটা মিথ্যে নয় মঁসিয়ে। উনি চোদ্দই মানে মঙ্গলবার সকালে ফিরে আসেন। কি, তাই না মেরী?
–হ্যাঁ, আমার পরিষ্কার মনে আছে।
–আচ্ছা, সেদিন কি ডিনার দিয়েছিলে মনিবকে।
–ডিনার।….ঠিক মনে করতে পারছি না।
–একই দিনের ঘটনা পরিষ্কার মনে আছে আরেকটা পারছে না। সেদিন তোমার মনিব বাইরে ডিনার খেয়েছেন।-বাঁ হাতের চেটোয় সজোরে ডান হাতে আঘাত করলেন।
-হা হা।
–ওহো মিথ্যে বলছো, ভাবছো কেউ ধরতে পারবে না। কিন্তু দুজনকে ফাঁকি দিতে পারোনি। এক ওঁকে….একটা হাত ওপরে অনন্ত আকাশের দিকে তুলে ধরলেন, আর একজন এই এরকুল পোয়ারো।
-কিন্তু আপনি ভুল করছেন মঁসিয়ে। কাউন্ট সোমবার রাতে প্যারিস ছেড়েছেন।
-হ্যাঁ, তা জানি। কিন্তু তারপর তিনি বেঙ্গনায় আর একদিন কাটিয়েছেন সেটা তুমি, আমি কেউ জানি না। শুধু জানি বুধবার তিনি বাড়ি ফিরেছেন।
উঠে দাঁড়ালেন পোয়ারো; ঠিক আছে বিপদ যখন তোমরা চাইছ; বিপদে পড়।
তার মানে কি বলতে চাইছেন আপনি? –মেরী বলল।
-মাদাম ক্যাথারিন-এর খুনের ব্যাপারে জড়িত আছে সন্দেহে পুলিশ তোমাদের গ্রেপ্তার করবে।
-খুন! কি বলছেন মঁসিয়ে! আমরা খুনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছি।–ঠক ঠক করে দুজনের পা কাঁপতে লাগল।
–হ্যাঁ, প্রস্তুত থেকো তোমরা।–পোয়ারো যাবার জন্যে পা বাড়ালেন।
শুনুন, শুনুন সিয়ে, ব্যাপারটা যে এতদূর গুরুতর সে সম্বন্ধে….
–থামো–এক ধমক দিলেন পোয়ারো, নিজের ভালমন্দ বোঝে না এমন দুটো বোকার সঙ্গে বাজে সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই। শেষবারের মতো বলছি, কবে আর কখন কাউন্ট এই ভিলাতে ফিরে আসেন, মঙ্গলবার না বুধবার?
বুধবার–হিপোলাইট বলল।
–তবু ভালো, সুবুদ্ধি হলো শেষ পর্যন্ত। ভয়ানক বিপদে ফেলতে যাচ্ছিলে নিজেদের তোমরা।
কাউন্ট-এর মারিনা ভিলা থেকে বেরিয়ে পোয়ারো মিরেলির হোটেলের দিকে গেলেন।
কাঁটায় কাঁটায় ছটা। পোয়ারো হোটেলে মিরেলির কাজের ঘরে ঢুকলেন। পোয়ারোকে দেখে মিরেলি জ্বলে উঠল।
কি ভেবেছেন আপনারা? অনেক যন্ত্রণা তো দিয়েছেন এখনও সাধ মেটেনি! আমাকে দিয়ে যা নয় তাই বলিয়ে বেচারা ড্রেককে জেলে দিয়েছেন। আরও চান?
–শুধু ছোট একটা প্রশ্নের জবাব চাই মাদমোয়াজেল। পোয়ারো মিরেলির চোখে চোখ রাখলেন। সেদিন নয়েন স্টেশন ছাড়ার পর কখন আপনি মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরায় ঢুকেছিলেন?
-মানে?
–আমি বলছি কখন আপনি মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরায় ঢুকেছিলেন?
–কখনোই যাইনি।
-মিথ্যে কথা। গর্জে উঠলেন পোয়ারো। কি হয়েছিল সেদিন, আমি বলছি। আপনি মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরায় ঢুকে তাঁকে মৃত দেখেছিলেন। কারণ আমিও কাছাকাছি ওখানেই কোথাও ছিলাম সেদিন। এখনও বলছি আপনাকে, এরকুল পোয়ারোকে মিথ্যে কথা বলার পরিণাম বড় সাংঘাতিক।
–আমি আমি কিছু করিনি…।হঠাৎ থেমে গেল মিরেলি।
–একটা কথাই ভাবি শুধু মাদমোয়াজেল। যার জন্যে আপনি গিয়েছিলেন তা কি পেয়েছিলেন, না আপনার আগেই কেউ সেখানে ঢুকেছিল?
-আর কিছুই বলতে পারব না। দোহাই আপনার। মিরেলি পাশের ঘরে চলে গেল। পোয়ারো বেরিয়ে এলেন হোটেল থেকে, মুখে তার তৃপ্তির হাসি।
.
২৭.
ডিনার–এর রায়
মিস ডিনার-এর শোবার ঘরের জানালা দিয়ে ক্যাথারিন বাইরে তাকিয়েছিল। অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে। জানালা দিয়ে সামনের বাগানটা দেখা যায়। বাগানের একপাশ দিয়ে লাল ছোট ছোট নুড়ি পাথরের রাস্তা গেট পর্যন্ত চলে গেছে।
মিস ডিনার একটা পুরানো আমলের খাটে আধ শোয়া অবস্থায় আছেন। পাশেই একটা ট্রেতে প্রাতঃরাশের সামান্য ভুক্তাবশেষ কিছু পড়ে আছে। বৃদ্ধা একমনে সেদিনের চিঠিপত্র পড়ে চলেছেন আর তীক্ষ্ণ ভাষায় নিজের মতামত দিয়ে চলেছেন।
একটা খোলা চিঠি হাতে ক্যাথারিন বসেছিল। ইতিমধ্যে চিঠিখানা ক্যাথারিন দুবার পড়েছে। চিঠির ওপরে লেখা–রীজ হোটেল প্যারিস।
প্রিয় মাদমোয়াজেল ক্যাথারিন,
নিশ্চয়ই ভাল আছেন। শীতের ইংল্যাণ্ড আশা করি আপনার খারাপ লাগছে না। আমার কাজ আমি যথাসাধ্য আন্তরিকভাবে করে চলেছি। ভাববেন না যেন ছুটি কাটাতে এখানে রয়েছি। খুব শীগগিরই আমাকে ইংল্যাণ্ডে যেতে হবে। তখন আবার আপনার সঙ্গে দেখা হবে। লণ্ডনে পৌঁছেই আপনার কাছে চিঠি লিখব। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।