-বলুন, বলুন,–আলডিন তাড়া দেয়।
ট্রেন নয়েনস্-এ আসার আগেই অ্যাজ ম্যাসন মৃতদেহটাকে আবার আগের কামরায় নিয়ে আসে। নিজে মিসেস ক্যাথারিন-এর ছদ্মবেশ বদলে ফেলে পুরুষ মানুষের ছদ্মবেশ ধরে ও ট্রেন থেকে নামার জন্য প্রস্তুত হয়। ড্রেক যখন তার স্ত্রীর কামরায় ঢোকে তখন সে দেখে তার স্ত্রী ঘুমোচ্ছে। মিঃ ক্যাথারিন আসার আগেই সবকিছু নিখুঁতভাবে সাজানো হয়ে গিয়েছিল। এবং অ্যাজ ম্যাসন তখন তার নিজের কামরাতেই লুকিয়েছিল। তারপর নয়েনস্-এ ট্রেন থামলে কণ্ডাক্টর যেই ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নামে সেই সুযোগে পুরুষবেশী অ্যাজ ম্যাসনও প্ল্যাটফর্মে নেমে পায়চারী করতে থাকে। তারপর একসময় সকলের অলক্ষ্যে ঘুরতে ঘুরতে পরের প্ল্যাটফর্মে গিয়ে প্রথম ট্রেনটা ধরে প্যারীতে গিয়ে পৌঁছয় এবং সেখান থেকে রীজ হোটেলে গিয়ে ওঠে। সেখানে কিংটন-এর অপরাধী জীবনের একমহিলা সহকারিণী আগের রাত থেকেই হোটেলের একটা ঘর বুক করে রাখে। সে শুধু চুপচাপ সেখানে আপনার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে। রুবীগুলো এখন তার কাছে নেই এবং কখন ছিলও না। এদিকে আপনার সেক্রেটারীর ওপর কারোর নজরই পড়েনি তাই সে নির্ভাবনায় রুবীগুলো নিয়ে নিস্-এ চলে আসে। সেখানে মঁসিয়ে পপপুলাস-এর কাছে ওগুলো বিক্রির ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছে। শুধু ব্যবস্থা অনুযায়ী রুবীগুলো পপোপুলাস-এর কাছে পৌঁছে দেয় অ্যাজ ম্যাসন। মার্কুইস-এর মতো দুর্ধর্ষ ও তীক্ষ্ণবুদ্ধি সম্পন্ন অপরাধীরও এক যোগ্য প্ল্যান বটে। তার স্বভাবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হলো তার সুন্দর ব্যবহার মানুষকে আকৃষ্ট করে। এবং আপনিও তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে অতি অল্প সময়ের আলাপেই তাঁকে সেক্রেটারী নিযুক্ত করেন।
–কিন্তু কিংটন আমার সেক্রেটারী হবার জন্যে কোনো ব্যগ্রতা দেখায়নি। একথা আমি হলফ করতে বলতে পারি।
-সেক্রেটারী হবার জন্য সে ব্যগ্রতা দেখায়নি ঠিকই কিন্তু, সে আপানকে ব্যর্থ করে তুলেছিল। হা হা, এটাই তো তার অপরকে আকর্ষণ করার অদ্ভুত ক্ষমতা। আপনার সেক্রেটারী হবার জন্য কোনো ছলচাতুরী না করে শুধু মন ভোলানো ব্যবহারেই আপনাকে তার শিকার করে ফেলল। রিচার্ড কিংটনের কোনোরকম অসামাজিক বা অপরাধমূলক কাজের নজির নেই। বরং বড় ঘরের ছেলে, শিক্ষিত, সমাজের নামী লোকদের সঙ্গে কারবার এবং গত বিশ্বযুদ্ধে পদাতিক বাহিনীতে মেজর ছিলেন। আমি যখন একটু একটু করে মাকুইস-এর খোঁজ খবর নিতে থাকি তখন অনেক জায়গায় দুজনের মিল খুঁজে পাই। কিংটন অনর্গল ফরাসী ভাষায় কথা বলতে পারে। মাকুইসও পারে। কিংটন যে সময় ইংল্যাণ্ডে, আমেরিকা ও ফ্রান্সে ছিল মাকুইস-এর অপরাধগুলোও ঠিক একই সময় সংঘটিত হয়। মার্কুইস-এর শেষ অপরাধ সুইজারল্যাণ্ডে এবং সেই সময় সেইখানেই আপনার সঙ্গে কিংটনের পরিচয় হয়। সুইজারল্যাণ্ডে আপনার আগমন যে হার্ট অব ফায়ার সংগ্রহ করতে সে কথাও আপনি কথায় কথায় কিংটনকে বলেন।
কিন্তু সে খুন করতে গেল কেন?–করুণ একটা ভাব ফুটে উঠল আলডিন-এর মুখে এতই ধূর্ত যখন সে। শুধু রুবীগুলো চুরি করলেই তো পারত।
-না মঁসিয়ে আলডিন।–মাথা নাড়লেন পোয়ারো। মার্কুইস-এর এটাই প্রথম খুন নয়। অপরাধের সঙ্গে হত্যা করাটাও ওর একটা প্রধান চারিত্রিক বিশেষত্ব। আর অপরাধের কোনো প্রমাণই রাখে না মাকুইস সামান্য হলেও তাকে নিঃশেষে মুছে দেয়। সুতরাং খুন তাকে করতেই হয়। সিগারেটে একটা টান দিয়ে কাত হয়ে বললেন পোয়ারো, রত্ন চুরি করাই মার্কুইস-এর একটা বিশেষত্ব। বিশেষ করে যে সব রত্ন দুষ্প্রাপ্য। আপনার হার্ট অব ফায়ার সংগ্রহের কথা জেনে নেওয়ার পরই সে তার মতলব ঠিক করে ফেলে। প্যারীতে যেদিন আপনি রুবীটা কেনেন সেদিন দুজন গুণ্ডাকে আপনার পেছনে লাগিয়েছিল সেটা নেহাতই একটা মামুলী চেষ্টা। অবশ্য মার্কুইস পরের মতলবটা এতই মারাত্মক ভাবে করেছিল যে সেবার অকৃতকার্যতা তাকে বিন্দুমাত্র ঘাবড়ায়নি।
কিন্তু মার্কুইস রক্তমাংসের মানুষ। আরও সকলের মতো মার্কুইস-এর দুর্বলতা এসেছিল। হ্যাঁ, সে ভালোবেসে ফেলেছিল মিস ক্যাথারিন গ্রেকে। এখানে তার কোনো ছলচাতুরী ছিল না। মনে প্রাণে সে মিস গ্রেকে ভালোবেসেছিল! কিন্তু মার্কুইস-এর ধারণা ছিল মিস গ্রে মিঃ ক্যাথারিনকে ভালোবাসে। তাই ঘটনাক্রমে মিঃ ক্যাথারিন যখন এই খুনের ব্যাপারে জড়িয়ে গেল, মাকুইস-এর সামনে তখন সুবর্ণ সুযোগ মিঃ ক্যাথারিনকে ফাঁসিয়ে দেবার। বেচারা ড্রেক ক্যাথারিনকে হাজতে যেতে হলো। পায়ের উপর পা দিয়ে বসলেন পোয়ারো, এদিকে একদিন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। মন্টিকার্লোর বাগানে বসে মিস গ্রেকে প্রেম নিবেদন করল কিংটন। কিংটন চলে যাবার ঠিক পরেই মিস গ্রে হঠাৎ অদ্ভুত ভাবে আপনার মৃত কন্যার উপস্থিতি অনুভব করল। এবং এই উপস্থিতি সম্পর্কে মিস গ্রে দৃঢ় নিশ্চিত। আর আমি ভালোভাবে জানি মিস গ্রে কোনো রকম কল্পনা প্রবণতাকে মনে স্থান দেন না। উনি শুধু আপনার মেয়ের উপস্থিতিই অনুভব করেননি উপরন্তু আপনার মেয়ে যে তাকে একান্তভাবে কিছু একটা বলতে চেষ্টা করেছিলেন সে সম্বন্ধেও তিনি স্থির নিশ্চিত।
প্রথমে মিস গ্রে আপনার মেয়ের ইঙ্গিতটা বুঝতে পারেনি কিন্তু অনেক চিন্তার পর তার মনে হয় আপনার মৃত কন্যা কিংটনকেই খুনী বলে দেখিয়ে দিতে এসেছিলেন। এইভাবে একটা আজব ঘটনার মধ্যে দিয়ে উনি কিন্তু ইঙ্গিতটাকে বিশ্বাস করেছিলেন সেই বিশ্বাসে তিনি তার কাজ করে যেতে লাগলেন। তিনি কিংটনকে প্রত্যাখ্যান না করে বরং এমন ভাব দেখালেন যেন তিনিও বিশ্বাস করেন যে ড্রেক ক্যাথারিনই দোষী।