–কিন্তু কি মাদমোয়াজেল?
-কিন্তু তিনি যদি মাদাম ক্যাথারিন কে হত্যা করে তাহলে হার্ট অব ফায়ার রুবীটাও তিনি অপহরণ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো খবর সংগ্রহ করতে পেরেছেন কি?
লেনক্স-এর এই রকম বিশ্লেষণী ক্ষমতা দেখে পোয়ারো খুশী হলেন, কথাগুলো ঠিক বলেছেন মাদমোয়াজেল, কিন্তু মিঃ ক্যাথারিন-এর নির্দোষিতা প্রমাণ হাতে না আসা পর্যন্ত কিছুই করণীয় নেই। ঘটনা পরম্পরা তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
-হা স্থূলভাবে বিচার করলে সেই রকমই মনে হয় বটে। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে, তিনি মাদামের কামরা থেকে বেরিয়ে এলে অন্য কেউ মাদামের কামরায় ঢুকে তাকে হত্যা করেছে এবং রুবীটা নিয়ে চম্পট দিয়েছে।
-আপনি তাহলে বলতে চাইছেন ট্রেনের অন্য যাত্রী মাদামকে খুন করেছে?
-না। আমি বলতে চাইছি ট্রেনটা যখন নয়েন স্টেশনে এসে থেমেছিল, সেই সময় বাইরে থেকে কোনো লোক ট্রেনে উঠে মাদামের কামরায় ঢুকে তাকে হত্যা করেছে এবং রুবীটা নিয়ে সরে পড়েছে। আমার বিশ্বাস কয়েক মিনিটের মধ্যেই অর্থাৎ ট্রেনটা যখন নয়েন স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল সেই সময়েই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
আশ্চর্য আপনার বিশ্লেষণ ক্ষমতা মাদমোয়াজেল। ঠিকই অন্ধকারে আমি হাতড়াচ্ছিলাম, আপনি আলো দেখালেন।–মাথা নাড়তে লাগলেন পোয়ারো, ইস, এই ব্যাপারটি আমি একদম লক্ষ্য করিনি আগে। আচ্ছা, চলি এখন।
লেনক্স-এর কাছে বিদায় নিয়ে পোয়ারো চলে গেলেন।
মন্টিকালোতে পৌঁছতে পোয়ারোর সামান্য দেরি হয়ে গেল। মঁসিয়ে পপোপুলাস ও তার মেয়ে জিয়া আগেই এসে গেছেন। পোয়ারো আসতেই তারা হাসি ঠাট্টা শুরু করলেন। পোয়ারোও তাদের রসিকতায় যোগ দিলেন।
ডিনার খেতে খেতে পপোপুলাস বললেন, আমি যে টিপষ্টা দিয়েছিলাম সেটা কাজে লাগিয়েছেন কি?
–না। এখনও ঠিকমত কাজে লাগাতে পারিনি। এ ব্যাপারে বুকির কাছে আরও কিছু খবর আশা করছি।
–ঘোড়াটা ভালো বলেই শুনেছি। বেশ নাম আছে ওর।
–দুর্নামও বলতে পারেন। অনেকে ওকে ব্ল্যাক হর্স বলে থাকেন।
ডিনার শেষ হলে তিনজনেই গেলেন জুয়ার ঘরে। সেখানে পোয়ারো জুয়া খেলায় মেতে উঠেছেন এই সুযোগে পপোপুলাস সরে পড়লেন। পোয়ারো যে লক্ষ্য করেছেন এটা তিনি বুঝতেই দিলেন না।
কিন্তু খেলার দিকে তার মন ছিল না। তার কেবলই মনে হতে লাগলো নিশ্চয়ই পপোপুলাস কারো সঙ্গে দেখা করতে গেলেন।
এদিকে কয়েকটা দান খেলেই জিয়া দুহাজার ঐ জিতে ফেলল। সে বলল, আমি আর খেলব না।
–চমৎকার! পোয়ারো হেসে বললেন, একেই বলে বাপ কি বেটি। কখন শুরু করতে হয় আর কখন শেষ করতে হয় ভালোই জানেন দেখছি। কিন্তু মিঃ পপোপুলাস কোথায় গেলেন, তাকে দেখছি না তো।
হয়তো বাগানে গেছেন।
–তাহলে চলুন। আমরা বরং সেখানেই যাই, কেমন?
—তা মন্দ না। তাই চলুন।
–আচ্ছা, আপনি একটু দাঁড়ান। আমি ক্লোকরুম থেকে ওভার কোট আর টুপিটা নিয়ে আসি।
–চলুন, আমাকেও সেখানে যেতে হবে ওভারকোট নিতে।
–আপনি বরং বাগানেতেই যান। আমি যাবার সময় আপনার ওভারকোটটা নিয়ে যাব। পোয়ারো এগিয়ে গেলেন।
পোয়ারো কিন্তু এগিয়ে গেলেন হলঘরে যেখানে অনেক নরনারীর ভীড়। সেই ভীড়ের মধ্যে মিশে পপোপুলাসকে খুঁজতেই দেখতে পেলেন যে কোণের দিকে একটা নিরিবিলি জায়গায় দাঁড়িয়ে মিরেলির সঙ্গে কথা বলছেন তিনি।
পোয়ারো একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে তাদের কথাবার্তা শুনলেন। মিরেলি বলছিল, আমাকে আরও কিছুদিন সময় দিতে হবে। কয়েকটা দিন সময় পেলেই আমি টাকা যোগাড় করতে পারব। পপোপুলাস বললেন, না, আর আমি অপেক্ষা করব না।
–আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতেই হবে আপনাকে, আমি কথা দিচ্ছি, দশদিনের মধ্যেই কাজ শেষ করব।
পপোপুলাস কি যেন বলতে যাচ্ছিল তখনই পোয়ারো এসে হাজির হলেন সেখানে। তার সরল মুখ দেখে কেউ বুঝতেই পারল না যে উনি এতক্ষণ তাদের লক্ষ্য করেছেন।
–এই যে মিঃ পপোপুলাস। আপনাকেই খুঁজছিলাম। আমরা মানে আমি আর মিস জিয়া বাগানে গিয়ে বসি। ওখানেই আমাদের পাবেন।
তারপর পাশে মিরেলির দিকে নজর ফেরালেন, কি আশ্চর্য! আপনি এখানে? এতক্ষণ আপনাকে লক্ষ্যই করিনি। মনে কিছু করবেন না আমার এই অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য। চলি।
ওঁদের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে পোয়ারো ক্লোক রুম থেকে দুটো ওভারকোট নিয়ে জিয়ার কাছে চলে এলেন।
–এই জন্যেই পুরুষগুলো মরে! হেসে চোখ তুলল জিয়া; মিছিমিছি কত খাটাতে গেলেন বলুন তো?
-লোকে তো তাই বলে। দেখুন মাদমোয়াজেল, ভালো খাওয়া ভালো থাকা আর মনের মতো সঙ্গী পাওয়া ভাগ্যের কথা। যারা পয়সা না থাকার অজুহাত দেখিয়ে এসব আনন্দ থেকে নিজেদের বঞ্চিত রাখে, হয় তারা নেহাতই হতভাগ্য, আর নয়ত হৃদয়ের দহন সহ্য করবার মতো ক্ষমতা তাদের নেই।
পোয়ারোর রসিকতায় হেসে উঠল জিয়া।
-না না, কারো রোমান্স আপনি হেসে উড়িয়ে দেবেন না মাদমোয়াজেল।–একটু ঝুঁকে এলেন; আপনি যে রীতিমতো সুন্দরী।
সুন্দরী না ছাই! তেত্রিশ বছর চলছে জানেন? নেহাতই ছেলেমানুষ সেজে থাকি তাই বোঝা যায় না। বরং সেই সতেরো বছর আগে যখন দেখেছিলেন তখন আপনার কথা খাটতো।
-কিন্তু সত্যি আপনাকে দেখলে আরও কম মনে হয়। আমার তো মনে হয় আপনি একই রকম আছেন, শুধু একটু শুকনো। সামান্য নিষ্প্রভ আর গম্ভীর হয়েছেন।