–বন্ধ হবে কেন? কালই তো আর মামলা দায়ের করা হচ্ছে না। কালকে শুধু আলোচনা হবে সলিসিটারের সঙ্গে। তুমি ফিরে এলেই হবে। হ্যাঁ, কবে রওনা হচ্ছ?
–আগামী ১৪ই, ব্লু ট্রেনে।
–ঠিক আছে। তাতে কোনো অসুবিধা হবে না। তবে যাবার আগে রুবীটাকে ব্যাঙ্কের সেফ ডিপোজিট ভল্ট-এ রেখে যেও।
–কেন বাপী? এটা সঙ্গে থাকলে অসুবিধা কি?
–অসুবিধে বিশেষ কিছু নেই, তবে….
–তবে কি বাপি?
–এ ধরনের দুর্লভ-রত্নের জন্য বিপদ ঘটা বিচিত্র নয়। রত্নচোরেরা খবর পেয়ে আমাকে আক্রমণ করেছিল।
-তাই নাকি?
–হ্যাঁ, রুবীটা কিনে যখন ফিরছিলাম দুজন আমাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিলো তার আগেই আমার রিভলবারটা গর্জে উঠে, ওরা দ্রুত পালায়।
–অসাধারণ তোমার সাহস বাপি।
আলডিন বললেন, এই জন্যে রুবীটা ব্যাঙ্কে রাখতে বললাম!
–বেশ, আমি দু-একদিনের মধ্যেই রুবীটা ব্যাঙ্কে রাখব।
মিঃ আলডিন তখন মেয়ের কপালে স্নেহচুম্বন দিয়ে বিদায় নিলেন। হোটেলে ফিরে তিনি সেক্রেটারীকে বললেন, এখুনি মিঃ গোবির কাছে যাও তো। তাকে বলবে সে যেন আমার সঙ্গে আগামীকাল সকাল নটায় দেখা করেন।
.
০৫.
গোপন সংবাদের সন্ধানে
গোবি পরদিন সকালেই হাজির হলো ঠিক নটায়। তার সময়ানুবর্তিতার জন্যে খুশী হলেন আলডিন।
–বসুন মিঃ গোবি, আপনার সঙ্গে কিছু কাজের কথা আছে।
-বলুন।
–একটা লোকের সম্বন্ধে কিছু গোপন খবর দিতে হবে?
–গোপন সংবাদ বিক্রি করাই তো আমার পেশা।
–আপনি নিশ্চয়ই জানেন, লর্ড লুকোনবারীর ছেলে ড্রেক ক্যাথারিন আমার জামাই।
–তা জানি।
-আমার মেয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করবে। মামলা দায়ের করাটা সলিসিটার-এর কাজ কিন্তু যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয় সেই জন্যেই আমি ড্রেক সম্বন্ধে সব কিছু গোপন খবর জানতে চাই।
-অর্থাৎ, আপনি তার ব্যক্তিগত চরিত্র এবং আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান, এই
-হ্যাঁ, খবরগুলো কখন পেতে পারি?
–আপনার কি খুব তাড়া আছে।
–হ্যাঁ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানতে চাই।
-ঠিক আছে, আজ দুটোর সময় আমি আসছি। আশা করি সব খবর জানতে পারবেন। এবার তাহলে আমি আসি, গুড মর্নিং।
–আসুন মিঃ গোবি, গুড মর্নিং। মিঃ গোবি চলে যেতেই আলডিন সেক্রেটারীকে ডেকে বললেন, এবার আমি অফিসের কাজ করব। আজকের করনীয় কাজ সব ঠিক আছে তো?
–হ্যাঁ, স্যার, সবই ঠিক করে রেখেছি। আপনি আসুন।
সাড়ে নটা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত অফিসের কাজ করলেন আলডিন। তারপর স্নান-খাওয়া সেরে বিশ্রাম করলেন।
একটু পরেই হোটেলের রিসেপশন ক্লার্ক টেলিফোন করে জানালেন মাননীয় ড্রেক ক্যাথারিন তার সঙ্গে দেখা করতে চান। তাকে কি আপনার কাছে পাঠিয়ে দেব স্যার?
–হ্যাঁ, দিন। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই ক্যাথারিন এসে হাজির হল।
–আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন?
–হ্যাঁ, বসো।
–গতকাল আমি রুথের কাছে গিয়েছিলাম। আমার উপদেশমত সে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা করছে।
–আর কিছু বলবার আছে কি?
-না, আর বিশেষ কিছু বলবার নেই। রুথ-এর সঙ্গে তুমি যে ব্যবহার করেছ–তারপরে এখন নাকি এক নাচনেওয়ালীর পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছ।
–ব্যক্তিগত কথা যখন তুললেন তাহলে আমার কথাটাও শুনে নিন। আমি ঘরছাড়া হয়েছি আপানার মেয়ের জন্যেই। নিজের স্ত্রী, কোনো পরপুরুষের সঙ্গে প্রেম করবে সেটা কোনো পুরুষই সহ্য করবে না।
-তুমি জানো তুমি কি বলছ?
–ঠিকই বলছি। একটু খোঁজ নিলেই সত্যাসত্য জানতে পারবেন। আপনার মেয়ে আমাকে বিয়ে করেছিল বংশ মর্যাদার জন্যে আর ভবিষ্যতে লেডী লুকোনবারী হবে সেই আশায়।
আলডিন বেশ একটু ঝঝের সুরেই বললেন, উপাধির এখন কোনো মূল্য নেই, এখন কোনো সম্মান যে কোনো উপাধিকারী অপেক্ষা কম নয়। আমার সংকল্প সফল হবেই। আমি তাই আশা করি যে, মামলা আদালতে উঠলে তুমি কনটেস্ট করবে না।
–আপনি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?
–তা যদি মনে হয় তবে তাই।
–আমি যদি কনটেস্ট করি তাহলে আপনি কি করবেন?
কনটেস্ট করবে! বেশ, তাহলে সেই চেষ্টাই করো?
-আমি কি করবো না করবো সেটা আমার ব্যাপার। ও ব্যাপারে আমি কোনো উপদেশ শুনতে চাই না।
উপদেশ দেওয়া আমার স্বভাব নয়।
–কিন্তু আপনি তো সেটাই করছেন। আপনার মেয়েকে উপদেশ দিয়েছেন মামলা করতে, আমাকে উপদেশ দিচ্ছেন মামলায় কনটেস্ট না করতে।
–হ্যাঁ, এ ব্যাপারে আমার একমাত্র সন্তানের ভালোমন্দ জড়িত বলেই আমি রুথকে উপদেশ দিতে বাধ্য হয়েছি।
-বেশ, আপনি ভালোমন্দ দেখতে থাকুন, আমি বিদায় হচ্ছি। তবে এটুকু বলে যাচ্ছি যে পরের ছিদ্র দেখার আগে নিজেদের ছিদ্র সম্বন্ধেও কিছু খোঁজ খবর নেবেন।
–কে সে লোক?
–আপনি তাকে চেনেন। তিনি হলেন মহামাননীয় কাউন্ট দ্য লা রোচি। আচ্ছা চললাম।
ক্যাথরিন চলে যেতেই মেয়ের কাছে টেলিফোন করেন। কিন্তু ম্যাসন জানায় যে মিসেস ক্যাথারিন কিছুক্ষণ আগে বেরিয়েছেন।
সঙ্গে সঙ্গে মিঃ আলডিন-এর মনে হলো যে তিনি বেলা সাড়ে বারটায় সলিসিটারের কাছে যাবেন বলেছিলেন রুথকে। তাই বোধ হয়…. তিনিও বেরিয়ে পড়লেন।
সলিসিটার-এর অফিস থেকে দুটো বেজে পাঁচ মিনিটে ফিরে এলেন আলডিন। এসে দেখেন মি গোবি বসে আছেন।
তাকে দেখে বললেন, কি! যোগাড় হয়েছে?
–এ শর্মা যে কাজের ভার নেয় তা অসম্পূর্ণ থাকে না স্যার। এই নিন।
পকেট থেকে একটা নোট বের করে দিলেন, সব খবর এতে লেখা আছে স্যার।