–এখন নয়।–গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়লেন পোয়ারো। হয়তো কোনো খবর ইতিমধ্যেই আমার হোটেলে এসে থাকতে পারে।
–কিন্তু মার্কুইস যদি এ ব্যাপারে জড়িত থাকে….ম্যাজিস্ট্রেট বেশ নিরাশই হলেন।
–সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।-কমিশনার মাথা চুলকোতে লাগলেন।
–আমার কিন্তু বেশ সহজ বলেই মনে হচ্ছে।–পোয়ারো দৃষ্টি উজ্জ্বল করলেন। যদি কোনো দরকারী খবর পাই সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের জানিয়ে দেব। চলি।
পোয়ারো খুব চিন্তিত মুখে হোটেলে ফিরলেন। ভৃত্য জর্জ এসে তার হাতে একটা টেলিগ্রাম দিল। টেলিগ্রামখানা দুবার পড়ে সেটাকে পকেটে রেখে আরামকেদারায় বসতে বসতে বললেন, জর্জ, এক কাপ চকোলেট খাওয়াতে পার? বড় ক্লান্ত লাগছে।
যথা সময়ে জর্জ এক কাপ গরম চকোলেট নিয়ে এসে পোয়ারোর সামনে ধরল।
–আচ্ছা জর্জ, আমার এখানে কাজ করার আগে তুমি তো অনেক অভিজাত বংশে কাজ করেছ।-কাপটা হাতে নিতে নিতে বললেন পোয়ারো, মনে হয় ইংরেজদের আচার-ব্যবহার সম্বন্ধে তোমার বেশ ভাল ধারণাই আছে। তাই না?
–আজ্ঞে হ্যাঁ, তা বলতে পারেন।
–আচ্ছা, অপরাধী কি শুধু ছোটোজাত থেকেই আসে বলে তোমার ধারণা?
–আজ্ঞে না। অনেক বড় ঘরেও অপরাধ প্রবণতা দেখা যায়। একটা ঘটনা বলি। এখন যিনি ডেভিজের ডিউক, তোর ছোট ছেলে নানা ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ করেছিল। পুলিশকে পর্যন্ত ভাবিয়ে তুলেছিল। শেষে ডিউক তাকে অষ্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেন আর সেখানেও আরেক নামে অপরাধ করে ধরা পড়ে সে। অথচ এমনিতে ছেলেটি কিন্তু অত্যন্ত চালাক এবং মিষ্টভাষী।
–হুঁম্।–বিড় বিড় করলে পোয়ারো। অপরাধের উত্তেজনাটিকে ভালোবাসে বোধ হয়। আবার ভাবতে অবাক লাগছে।
–কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠল তার। পকেট থেকে টেলিগ্রামখানা বের করে আবার পড়তে লাগলেন।
–আপনি ঠিকই বলেছেন স্যার, অপরাধ করার মধ্যে সবসময়ই একটা উত্তেজনা থাকে। সহজ সরল জীবনের চেয়ে অন্ধকারের জটিলতাই ওদের বেশি পছন্দ। এতেই ওদের উত্তেজনা।
কিছুক্ষণ চুপ করে কি ভেবে পোয়ারো বললেন, জর্জ মঁসিয়ে পপোপুলাস-এর মেয়ে জিয়াকে ফোন করেছিলে।
-আজ্ঞে হ্যাঁ। আজ রাতে ওদের সঙ্গে আপনার নৈশভোজের নেমন্তন্ন।
-আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে তোমার কথা ভাবি।–স্নেহের চোখে তাকালেন পোয়ারো, ইচ্ছে করলেই তুমি কোনো লর্ড বা ডিউকের কাছে ভালো মাইনের কাজ করতে পারতে। কিন্তু সামান্য ডিটেকটিভের কাছে পড়ে আছ কেন?
–আপনাকে আমি সামান্য লোক মনে করি না স্যার। সারা ইউরোপে আপনার নাম কে জানে। আমি একথাও শুনেছি ইংলণ্ডের রাজাও আপনার প্রশংসা করে থাকেন। আপনি আশ্চর্য তদন্ত ধারায় জটিল কেসগুলো ফয়সালা করেন। জানতে ইচ্ছে হতো আপনার কর্মধারা তাই আপনার কাছে চাকরী করার লোভ সামলাতে পারিনি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনও আমি আপনাকে কোনো-রকম সাহায্য করতে পারছি না।
–এজন্য তোমার সংকোচ বোধ করবার কারণ নেই। তুমি শুধু আমার কাজকর্ম লক্ষ্য করে যেও তাহলেই ধীরে ধীরে তদন্তের কাজ শিখে একজন পাকা ডিটেকটিভ হয়ে উঠবে। কাঠবিড়াল যেমন একটা একটা করে বাদাম সংগ্রহ করে ভবিষ্যতে কাজে লাগায়। আমিও তেমনি টুকরো টুকরো খবর সংগ্রহ করে জমা করি এবং পরে সেগুলোকে একত্রে কাজে লাগাই। এ ব্যাপারে পশুজগতের কাজকর্ম আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সময় সময় আমি বিড়ালের মত ইঁদুরের গর্তের দিকে লক্ষ্য রাখি। আবার কখনও বা কুকুরের মতো গন্ধ খুঁকে এগিয়ে যাই শিকারের সন্ধানে। তবে আমি এই কেসে কাঠবিড়ালের পদ্ধতিই অনুসরণ করছি। এবং আমার আশা শীগগিরই আমি কৃতকার্য হব।
.
২৫.
কাঠবিড়ালের স্বভাব
সন্ধ্যার পরে বের হলেন পোয়ারো। মঁসিয়ে পপোপুলাস-এর সঙ্গে তার ডিনার খাওয়ার কথা রাত আটটার সময়, মণ্টিকালোতে। তিনি একখানা ট্যাক্সি ভাড়া করে সোজা চলে গেলেন মার্গারেট ভিলায়, ক্যাথারিন-এর সঙ্গে একবার দেখা করতে চান তিনি। মার্গারেট ভিলায় হাজির হতেই লেনক্স-এর সঙ্গে দেখা হলো তার।
-মাদমোয়াজেল ক্যাথারিন বাড়িতে আছেন কি?–জিজ্ঞেস করলেন পোয়ারো।
–হ্যাঁ আছে। আপনি বসুন, উনি এখন নিচে নামবেন।
–না, এখন আর বসব না। আমি এসেছিলাম তাকে একটা খবর জানাবার জন্যে।
–খবরটা আমাকে বলতে আপত্তি আছে কি?
–না, আপত্তি থাকবে কেন। মিঃ ক্যাথারিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
–বলেন কি!
–ঠিকই বলছি। মাদাম ক্যাথারিন-এর হত্যাকারী সন্দেহে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। আচ্ছা, আমি চলি। খবরটা মিস গ্রেকে জানিয়ে দেবেন।
ওদের কথা হচ্ছিল বাড়ির বাগানে দাঁড়িয়ে। পোয়ারো ফিরে যাবার জন্যে পা বাড়াতেই লেনক্স বলল, কিছু যদি মনে না করেন, আমি আপনার সঙ্গে দু চারটে কথা বলতে চাই।
তাহলে আসুন ঐ বেঞ্চটাতে বসা যাক।
–সেই ভালো। ওখানেই বসা যাক।
–কি বলতে চাইছি, আপনি কি ড্রেককে হত্যাকারী বলে মনে করেন?
–এ কথা জিজ্ঞেস করবার কোনো কারণ আছে কি?
–কারণ আছে বৈকি, মঁসিয়ে পোয়ারো। মাদাম ক্যাথারিন আর মঁসিয়ে ক্যাথারিন একই ট্রেনে সেদিন এসেছিলেন। ক্যাথারিন তাকে মাদামের কামরায় দেখতে পেয়েছিল। দেনায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন মিঃ ক্যাথারিন এবং মাদামের মৃত্যুতে তিনি আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়েছেন–এই সব মিলিয়ে যে কোনো লোকেরই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তিনিই হত্যাকারী কিন্তু….