সে কি। আমি কিভাবে জড়িত হচ্ছি?–আপনি বলেছেন, ড্রেক ক্যাথারিন যে তার স্ত্রীকে হত্যা করবে সেকথা আগেই আপনাকে বলেছিল। এই রকম একটা গুরুতর কথা শুনেও আপনি পুলিশকে জানাননি কেন?
-আমার মনে হয়েছিল যে কথাটা তামাশাছলে বলছে।
–তাই যদি হয় আপনিও তার সঙ্গে একই ট্রেনের যাত্রী হলেন কেন?
এই প্রশ্নে মিরেলি যেন বিচলিত হলো কিছুটা; সে বলল, এটা নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবুও আমি বলছি, আমি ড্রেককে ভালোবাসতাম। মানে খুবই। আমি তাই ওর সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম।
এই সময় পোয়ারো চোখ তুললেন, আপনি মিঃ ক্যাথারিন-এর ইচ্ছে অনুসারেই তার সঙ্গিনী হয়েছিলেন?
একটু ইতস্তত করে বলল, এধরণের কাজে আমি আমার ইচ্ছামতই চলি।
যদিও মিরেলির উত্তরটা সন্তোষজনক নয় তবুও পোয়ারো অন্য প্রশ্ন করলেন। মিঃ ক্যাথারিন যে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন, এটা আপনি কখন বুঝতে পারেন?
–নয়েন স্টেশনে পৌঁছবার একটু আগে। ও যখন রুথ ক্যাথারিন-এর কামরা থেকে বেরিয়ে আসছিল, সেইসময় ওর মুখটা কেমন যেন ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল। ওর চোখের চাউনিও ছিল অস্বাভাবিক। ওর সেই সময়কার চেহারা কোনোদিন ভুলতে পারব না।
-তারপর?
–তারপর ট্রেনটা ছেড়ে যেতেই আমি বুঝতে পারি যে, মাদাম ক্যাথারিন মারা গেছে। মানে, হত্যা করা হয়েছে।
কমিশনার বললেন, একথা জেনেও আপনি পুলিশকে বলেননি কেন?
–যাকে আমি এত ভালোবাসি তাকে কিনা বিপদে ফেলব? না না, এ আপনি কি বলছেন?
–কিন্তু এখন তো তাই চাইছেন?
–এখনকার কথা আলাদা।–মিরেলির দুচোখ রাগে জ্বলে উঠলো। ড্রেক আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমাকে অপমান করেছে। এখন আর তার ওপরে আমার কোনো মায়াদয়া নেই।
পোয়ারো বললেন, আর একটা কথা মাদমোয়াজেল। মাদাম ক্যাথারিন যে নিহত হয়েছেন একথা আপনি জানলেন কি করে?
এবার কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, কথাটা যাত্রীদের কাছ থেকে শুনেছিলাম। অনেকেই তখন ঐ কথা নিয়ে আলোচনা করছিল। তবে, কার কাছে শুনেছিলাম ঠিক স্মরণ করতে পারছি না।
পোয়ালরা বুঝতে পারলেন মিরেলি মিথ্যে কথা বলছে কিন্তু তিনি বললেন, তা না পারাটা স্বাভাবিক। আচ্ছা, হার্ট অব ফায়ার সম্বন্ধে কিছু জানেন কি?
–হার্ট অব ফায়ার?
–হ্যাঁ, ইতিহাস প্রসিদ্ধ রুবী হার্ট অব ফায়ার। ওটা তখন মাদাম ক্যাথারিন-এর কাছেই ছিল।
না। ও সম্বন্ধে আমি কিছু জানি না। যাক এবার আমি চলি কি বলেন?–ম্যাজিস্ট্রেটের দিকে তাকিয়ে। ম্যাজিস্ট্রেট পোয়ারোকে বললেন, আপনার কিছু জিজ্ঞাসা আছে কি?
-না। আমারও কিছু জিজ্ঞাসা নেই।
এরপর কমিশনারকে বললেন ম্যাজিস্ট্রেট, আপনার? মঁসিয়ে কক্স?
-না। আমারও কিছু জিজ্ঞাসা নেই।
–হ্যাঁ, এবার আপনি যেতে পারেন।
–ম্যাজিস্ট্রেট মিরেলিকে যাবার অনুমতি দিলেন। পোয়ারো বলেলেন, আপনাকে হোটেলে পৌঁছে দিতে হবে কি?
না তার দরকার হবে না।
অফিস থেকে মিরেলি বেরিয়ে গেল।
-আমার সন্দেহ ও আদৌ সত্যি কথা বলল কিনা।–সন্দেহে ভুরু কোচকালেন কমিশনার।
–পুরোপুরি না হলেও বেশির ভাগই সত্যি।
পোয়ারো বললেন, ওর বক্তব্যের সমর্থনে অন্য প্রমাণও আছে। মাদমোয়াজেল ক্যাথারিনও আমকে বলেছেন। মিঃ ক্যাথারিনকে তিনি তার স্ত্রীর কামরায় দেখেছেন।
-কখন।
–নয়েন স্টেশনে পৌঁছবার একটু আগে।
–তাহলে তো দেখছি ঘটনার গতি অন্যদিকে মোড় নিল।-কমিশনার বললেন, আমি ভেবেছিলাম কাউন্টকে এবার হাতে পেয়েছি। কিন্তু পিছলে গেল সে।
ম্যাজিস্ট্রেট বেশ চিন্তিত হলেন। আমাদের এবার খুব সাবধানে এগোতে হবে। মঁসিয়ে ক্যাথারিন অভিজাত বংশের ছেলে। স্ত্রী হত্যার অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করলে লণ্ডনের খবরের কাগজে হৈ চৈ পড়ে যাবে। তাই তাকে গ্রেপ্তার করার আগে আমাদের খুব ভালো করে বিচার বিবেচনা করে চিন্তা করতে হবে। কারণ আমাদের ভুল হলে খুবই অপদস্থ হতে হবে সকলের কাছে।
–তা ঠিক। কমিশনার কক্স বললেন, কারণ আমরা এখনও রুবীগুলো সম্বন্ধে কিছুই জানতে পারিনি। ও ব্যাপারে মিরেলি একেবারে মুখ খোলেনি।
–আর মিঃ ক্যাথারিন যদি রুবীগুলো নিয়েই থাকেন তো নিশ্চয়ই সেগুলোকে বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।চশমাটা খুলে ম্যাজিস্ট্রেট টেবিলের ওপর রাখলেন। কিন্তু ওরকম ইতিহাসখ্যাত রুবী খুব সহজে বিক্রি করাও সম্ভব নয়।
–এ সম্বন্ধে আমার একটা নিজস্ব অনুমান আছে। হাসলেন পোয়ারো, তার আগে বলতে পারেন মার্কুইস বলে কোনো লোককে চেনেন কিনা?
–মার্কুইস?–উত্তেজিত হলেন কমিশনার; মার্কুইস-এর কথা জিজ্ঞেস কছেন কেন? আপনার কি মনে হয় সে এর সঙ্গে জড়িত আছে?
-আমি শুধু জানতে চাই আপনি মার্কুইস সম্বন্ধে জানেন কি?
–বিশেষ কিছু জানি না। যতটুকু জানি সে নিজে একজন রীতিমত অভিজাত শ্রেণীর মানুষ। নিজে হাতে বড় একটা কাজ করে না। তার আজ্ঞাবহদের দিয়েই কাজ সারে সে। এবং যথার্থই সৎ বংশজাত এইটুকুই জানি।
-সে কি একজন ফরাসী?
-হ্যাঁ, সেই রকমই মনে হয়। কিন্তু নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না? কারণ মার্কুইস ফরাসী ইংরেজী এবং আরও কয়েকটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে, আর কখনও একজায়গায় থাকে না সে। এই তো গত বছরই সুইজারল্যাণ্ডে একটা মস্তবড় ডাকাতি মার্কুইস-এর কাজ বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। কিন্তু আপনি এসব জানতে চাইছেন কেন?