ক্যাথারিন বুঝি বিরক্ত হলো। কি বিশ্রী? স্ত্রীর মৃত্যুতে কেউ উন্মাদের মতো হো হো করে হেসে স্ফুর্তি দেখায়। অদ্ভুত!
তা লক্ষ্য করেই ড্রেক বলল, বুঝতে পারছি আমার হাসাটা উচিত হয়নি। এবার বলি আমার মনের কথা। সেই যে স্যাভয় হোটেলের বারান্দায় তোমার সঙ্গে ধাক্কা লাগল আমার; সেই ধাক্কার দোলায় এখনও পর্যন্ত হৃদয় দুলছে। বিশ্বাস কর আমার মনে হলো, তোমার মতো মেয়েকেই আমি খুঁজছি। লোকে দুর্নাম দেবে আমার নামে, হা, সত্যি অনেক কথাই তোমাকে হয়তো কোনোদিনই বলা সম্ভব হবে না এমন কুকাজও আমি করেছি। তোমার ভালোবাসা পেলে আমি আবার ভাল হবার চেষ্টা করব। নতুন করে মানুষের মত মানুষ হতে চেষ্টা করব। সে সুযোগ কি আমায় দেবে না ক্যাথারিন? বলতে বলতে ক্যাথারিনের কাঁধে একটা হাত দিয়ে নিজের দিকে আকর্ষণ করল ড্রেক।
ক্যাথারিন খুব ঘাবড়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। তবুও অদ্ভুত ব্যাপার ড্রেক-এর আকর্ষণ সে উপেক্ষা করে চলে যেতে পারল না।
–আমার কথার উত্তর পেলাম না কিন্তু।
–আমি আমি জানি না।
ঠিক এমন সময় দূর থেকে কিংটন আর লেডি টাম্পলিনকে দেখে ক্যাথারিন প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?
-উনি এতক্ষণ লেডি টাম্পলিনের সঙ্গে প্রেম করছিলেন। কথাটা বলেই ড্রেক সোজা বেরিয়ে গেল।
-মাঝপথ থেকে লেডি টাম্পলিনকে ছেড়ে দিয়ে কিংটন এলো ক্যাথারিনের কাছে। দুজনেই আবার বসল।
কিছুদিন ধরেই আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্যে সুযোগ খুঁজছিলাম মিস গ্রে। ভালোই হল আপনাকে পেয়ে।
কিংটনও শুরু করল প্রেম নিবেদন, তবে খুব ভদ্র ও বিনয়ের সঙ্গে বলল, আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে অবশ্য একটা কথা বলি।
-বলুন।
–কি বলতে চাইছি আশাকরি আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আপনাকে যেদিন প্রথম দেখি আমি মানে–ইতস্ততঃ করতে লাগল কিংটন। আবার অবশ্য এত তাড়াতাড়ি একথা আপনাকে বলা উচিত হচ্ছে না। কিন্তু কি জানেন, মিঃ আলডিন হয়তো যে কোনোদিন ফিরে যেতে পারেন। তাই বলছি। আমার এই চাকরী ছাড়া ব্যক্তিগত কিছু সম্মতি আছে বটে, অবশ্য খুব বেশি নয়। এই মুহূর্তে আপনার উত্তর না দিলেও হবে। হঠাৎ যদি আমাকে চলে যেতে হয় তাই আপনার মতামতের একটু আভাস পেলে ভালো হয়। আমার কথায় আপনার সম্মানহানি হলে আমায় ক্ষমা করবেন।
কিংটন-এর নম্র ও ভদ্র কথাবার্তা ক্যাথারিনকে আকৃষ্ট করল। তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলেন ক্যাথারিন। লজ্জা নম্র দৃষ্টি একবার কিংটনের মুখের ওপর বুলিয়েই মুখ নিচু করল সে।
কিংটন আলতো করে ক্যাথারিনের একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিল।
–আর একটা কথা। কোনোদিন কোনো প্রয়োজন হলে বলবেন। যদি কিছু করতে পারি।
সামান্য একটু চাপ দিয়ে একটা ঘামে ভেজা হাতের উত্তাপ নেবার চেষ্টা করল। পর মুহূর্তে হাতটাকে ক্যাথারিন-এর কোলের ওপর নামিয়ে দিয়ে পাশ থেকে উঠে চলে গেল। একবারও পেছনে তাকাল না।
ক্যাথারিন স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। ভাবতে লাগল ড্রেক আর কিংটন-এর মধ্যে কত তফাত। ভাবতে ভাবতে তন্ময় হয়ে গেছল ক্যাথারিন। কিসের একটা অদ্ভুত অনুভূতি তাকে সজাগ করে দিল। ক্যাথারিন-এর মনে হলো, সে যেন একা বসে নেই। হঠাৎ তার মনে হলো পাশেই যেন রুথ এসে দাঁড়িয়েছে। রুথ ক্যাথারিন কি যেন বলতে চাইছে তাকে। রুথ-এর এক ঢাল সোনালী চুলের ভেতর দিয়ে তার করুণ চোখ যেন কিসের এক আকুতিতে ভরে উঠেছে। এক নির্বাক ভাষা যেন ফুটে বেরোতে চাইল রুথ-এর ঠোঁটে।
ক্যাথারিন-এর এতে স্পষ্ট মনে হলো রুথ-এর উপস্থিতি যে সে স্তব্ধ হয়ে রইল। তারপর ধীরে ধীরে আবছা হয়ে মিলিয়ে গেল রুথ শূন্যে। ঘামে ভিজে উঠছে ক্যাথারিন। কিসের আকুতি রুথ-এর চোখে ঠোঁটে ক্যাথারিন দেখল? রুথ কি বলতে চাইছিল তাকে! কি!
.
২৪.
নারীর প্রতিহিংসা ক্যাথারিন-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কিংটন পোয়ারোর খোঁজ করতে লাগল। নানান জায়গায় ঘুরে অবশেষে তাকে পাওয়া গেল জুয়ার ঘরে। পোয়ারো তখন মেতে উঠেছে জুয়া খেলায়। একটা জোড় সংখ্যার ওপর অল্প টাকার বাজি ধরে কাটা ঘোরালেন পোয়ারো। কাটা থামল বিজোড় সংখ্যায় এসে।
-ইস! নেহাতই বরাত খারাপ। পাশ থেকে কিংটন আপশোষ জানাল, আবার খেলবেন নাকি?
-না, এখন আর নয়।
–আপনার জুয়া খেলতে ভালো লাগে মঁসিয়ে পোয়ারো? পোয়ারো চোখ তুললেন।
–টেবিলে জুয়া খেলায় ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। ও আমার ভালো লাগে না। আমি জুয়া খেলি বুদ্ধিকে বাজি ধরে।
–আপনি কি এখন ব্যস্ত? আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।
–স্বচ্ছন্দে বলতে পারেন। বলেন তো আমরা বাগানে গিয়ে বসি।
–তাই চলুন।
পোয়ারোকে নিয়ে কিংটন বাইরে বেরিয়ে এলো।
-জানেন রিভিয়ারা আমার খুব ভালো লাগে। যেতে যেতে কিংটন বলল, বার বছর আগে একবার এসেছিলাম, অবশ্য আহত সৈনিক হয়ে, আর ভর্তি ছিলাম লেডি টাম্পলিনের সৈনিক হাসপাতালে। সদ্য যুদ্ধক্ষেত্রের পরই রিভিয়ারাকে স্বর্গ বলে মনে হয়েছিল সেদিন।
-মনে হওয়াই স্বাভাবিক।–পোয়ারো সায় দিলেন।
–সে যেন কতদিন আগেকার কথা।–কিংটন যেন স্মৃতিচারণ করতে করতে হাঁটতে লাগলেন।
–আপনার বেশ কিছু কথা বলার আছে আমাকে বুঝতে পারছি।
–ঠিক বলেছেন তো! কেমন করে বুঝলেন?
–আপনার মুখই বলে দিচ্ছে সেকথা।