-না।
–চলুন, মাঠে ঢোকা যাক।
মাঠে ঢুকে সবাই আসন গ্রহণ করল। মিঃ ক্যাথারিন আর মিস গ্রে পাশাপাশি বসল। তার পাশেই পোয়ারো এবং পোয়ারোর পাশে কিংটন বসল।
আসন গ্রহণ করবার পর মাঠের অপরদিকে মিঃ আলডিনকে দেখে কিংটন দেখা করতে চলে গেল।
মিঃ ক্যাথারিন-এর দিকে তাকিয়ে মিঃ পোয়ারো বললেন, লোকটা বেশ চৌকস, তাই না মঁসিয়ে?
–হ্যাঁ, সেই রকমই মনে হয়।
— পোয়ারো পকেট থেকে একটা সিগারেট কেস বার করে ক্যাথারিন-এর সামনে ধরলেন, দেখুন তো মাদমোয়াজেল, এটা আপনার সিগারেট কেস কিনা?
ক্যাথারিন দেখল কৌটোর ঢাকনির ওপরে Kঅক্ষরটি এমব্রস করা আছে।-না মঁসিয়ে, ওটা আমার জিনিস নয়।
–আমার কিন্তু মনে হয়েছিল আপনার নামের আদ্যক্ষর K বলেই এটা আপনার আর আপনি এটা ভুলে মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরায় ফেলে এসেছিলেন।
পোয়ারো এবার মিঃ ক্যাথারিনকে বললেন, দেখুন তো মঁসিয়ে এটাকে আপনি চিনতে পারেন কিনা? হয়তো এটা মাদাম ক্যাথারিন-এর সিগারেট কেস।
মিঃ ক্যাথারিন ভালো করে দেখে বললেন, না মঁসিয়ে, এরকম কোনো সিগারেট কেস আমার স্ত্রীর ছিল না। তবে হয়তো তিনি সম্প্রতি কিনেছেন এটা।
–আপনার নয় তো?
–আমার নিশ্চয়ই না।
মিঃ ক্যাথারিন-এর কথার স্বরে বোঝা গেল সত্যিই। তবু আবার সন্দেহটা নিরসন করবার জন্য বললেন, ক্ষমা করবেন মঁসিয়ে। আমি ভেবেছিলাম এটা তাহলে আপনার হতেও পারে। কারণ সে রাত্রে আপনি তো মাদামের কামরায় গিয়েছিলেন।
–আমি গিয়েছিলাম, কে আপনাকে বলেছে? না, আমি কখনও সেখানে যাইনি।
–ক্ষমা করবেন মঁসিয়ে, আমি কথাটা মিস গ্রের কাছে শুনেছি।
কথাটা শুনে ক্যাথারিন বেশ বিব্রত বোধ করল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে ক্যাথারিন-এর দিকে তাকিয়ে, ভুল করেছেন মিস গ্রে। হয়তো আমি রুথের পোষাকে কামরায় থাকায় আপনি ভুল দেখেছেন।
ইতিমধ্যেই মিঃ আলডিনকে আসতে দেখে মিঃ ক্যাথারিন বললেন, আমি এবার আপনাদের কাছে বিদায় নিতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ আমার শ্বশুরমশায়টিকে আমি একেবারেই সহ্য করতে পারি না।
মিঃ আলডিন এসে ক্যাথারিনকে দেখে বললেন, তুমি এসেছ দেখে আমি খুব খুশী হয়েছি। আরে মিঃ পোয়ারো যে, আপনি টেনিস খেলা দেখতে আসবেন আমি ভাবতেও পারিনি।
মিঃ আলডিনের খোঁচাটা বুঝতে পেরে পোয়ারো বললেন, ভাবতে না পারাটাই স্বাভাবিক, কারণ আমি ডিটেকটিভদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়েছি। খেলাধূলা-আমোদ-প্রমোেদ সব কিছু ছেড়ে দিনরাত কেবল মক্কেলদের কাজ করাই ডিটেকটিভদের ধর্ম। তাই না? উল্টো খোঁচা খেয়ে মিঃ আলডিন চুপ করলেন।
পোয়ারো কিন্তু তখনও বলে চলেছেন, আপনার কোনো চিন্তার কারণ নেই মিঃ আলডিন। আমি নিতান্ত অকারণে খেলা দেখতে আসিনি। আমাদের বিপরীত দিকে যে দাড়িওয়ালা ভদ্রলোকটি বসে আছেন, তার সঙ্গে দেখা করতেই আমাকে এখানে আসতে হয়েছে।
লোকটিকে একবার চকিতে দেখে নিয়ে মিঃ আলডিন বললেন, লোকটি কে?
–উনি হলে বিখ্যাত রত্ন ব্যবসায়ী মিঃ পপোপুলাস। ভদ্রলোক হঠাৎ প্যারী থেকে এখানে ছুটে এসেছেন দেখে মনে হচ্ছে উনি অকারণে আসেননি।
পোয়ারের কথায় মিঃ আলডিন খুব খুশী হলেন। তিনি এবার বেশ কুণ্ঠিত হয়ে বললেন, আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন মিঃ পোয়ারো। আপনার সম্বন্ধে আমি যে মন্তব্য করেছিলাম তার জন্যে আমি খুবই দুঃখিত।
দুঃখিত হবার কিছু নেই, কিন্তু এবার আরও কিছু নতুন সংবাদ শুনুন। ইতিমধ্যে কাউন্টের বাড়িটা সার্চ করেছে পুলিশ।
-সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেছে কি?
–না।
–কিছুই পাওয়া যায়নি?
–না। এ ছাড়াও কিছু আছে। কাউন্টের অনুসন্ধান করে একটা জিনিস পাওয়া গেছে।
পোয়ারো একবার চারিদিক দেখে নিলেন কেউ কিছু লক্ষ্য করছে কিনা। তারপরে তিনি পকেট থেকে একটা ভেলভেটের বাক্স বের করে আলডিন-এর হাতে দিলেন।
বললেন, এই জিনিসটা পাওয়া গেছে কাউন্টকে ফলো করে। দেখুন মঁসিয়ে।
বাক্সটার ভেতরের জিনিস সব ঠিক আছে দেখে অবাক হয়ে আলডিন বললেন, আশ্চর্য! এ যে হার্ট অফ ফায়ার, কিভাবে উদ্ধার করলেন।
-একটা লেটার বক্সের ভেতর থেকে। কাউন্ট মহোদয় এই প্যাকেটের উপরে যথারীতি প্রাপকের ঠিকানা লিখে পোস্টঅফিসের বক্সে ফেলে দিলেন।
কিন্তু প্রাপকের হাতে পৌঁছানোর আগেই আমার হাতে এলো। কাল দুপুরের পরে কাউন্টকে দুজন পুলিশ অফিসারকে নিয়ে আমি অনুসরণ করি। বলাবাহুল্য আমরা সবাই ছদ্মবেশে ছিলাম। আমাদের গাড়িটাকে পেছনে দেখে কাউন্ট তার টু-সীটারের স্পীড বাড়িয়ে দিলেন। আমরাও ইচ্ছে করে স্পীড কমিয়ে বিশেষ শক্তিশালী লেন্স-এর দূরবীনের সাহায্যে আমি বহুদূর থেকে তাকে লক্ষ্য করি। আমি স্পষ্ট দেখলাম একটা প্যাকেট পোস্টঅফিসের লেটার বক্সে ফেললেন। এরপর গাড়িতে উঠে মেন্টন-এর দিকে চলে গেলেন।
-তারপর?
-তারপর আমরা সদলবলে পোস্টঅফিসে গিয়ে পোস্টমাস্টারকে বলে লেটার বক্স খুলে এই প্যাকেটটা উদ্ধার করি।
প্যাকেটের ওপর প্রাপক হিসাবে যার নাম ঠিকানা ছিল তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। কি?
-না, কারণ প্রাক ছিল এমন একটা প্রতিষ্ঠান যাদের কাজ হলো চিঠিপত্র এবং পার্শেল নিজেদের কাছে রেখে পরবর্তী কালে কিছু কমিশন আদায় করে প্রেরকের কাছে চিঠি নিয়ে কোনো লোক এলে তাকে নির্দিষ্ট বস্তুটি দেওয়া। চিঠি বা পার্শেলের ভেতরে কি থাকে তা তারা জানতে চেষ্টা করে না। এই কারণেই সেখানে খোঁজখবর করিনি। এবার আমার কাজে যাচ্ছি মঁসিয়ে।