বাক্সটা বন্ধ করে পকেটে রাখলেন আলডিন।
–ঘন্টা খানেক বাদেই আমি ফিরে আসছি।
.
০৪.
রুথ ক্যাথারিন
কার্জন স্ট্রীটে বড় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বাস করে রুথ। মিঃ ভ্যান আলডিন-এর একমাত্র সন্তান। লর্ড লুকোবারীর একমাত্র পুত্র ড্রেক ক্যাথারিন-এর সঙ্গে রুথ-এর বিয়ে দিয়েছেন।
ড্রেক-এর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন অনেক রঙীন আশা নিয়ে। বৃদ্ধ লর্ড-এর মৃত্যুর পরে তার জামাই হবে লর্ড লুকোনবারী এবং রুথ হবে লেডি লুকোনবারী। কিন্তু ড্রেক আজ স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে লম্পটের জীবন যাপন করছে।
মেয়েকে সুখী করতে গিয়ে আলডিন তাকে চরম অসুখী করে ফেলেছেন। এই কারণেই তিনি মেয়েকে ঐতিহাসিক হার্ট অফ ফায়ার দিয়েও খুশী রাখতে চাইছেন।
রুথ-এর বাড়িতে প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ হাজির হলেন। বাড়িতে ঢুকেই নুতন মেইড মিস ম্যাসনকে দেখে বলেন, রুথ কোথায়?
মিস ম্যাসন আলডিনকে দেখেই অভিবাদন করে বলল, তিনি এখন দোতলায় ড্রয়িং রুম-এ আছেন স্যার।
মিঃ আলডিন ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই রুথ এসে তার গলা জড়িয়ে ধরল। দুদিন তুমি হোটেলে ছিলে না। আমি দুবার ফোন করেছি। কোথায় গিয়েছিলে, বাপি?
–হ্যাঁ, বিশেষ একটা কাজের জন্য বাইরে ছিলাম দুদিন এবং বাইরে ছিলাম তোমার জন্যেই।
–আমার জন্যেই!
–হ্যাঁ, তোমারই জন্যেই। কিন্তু সে কথা পরে হবে। এবার বলো, আমার সঙ্গে তুমি দেখা করতে চাইছিলে কেন? ড্রেক কি আবার দুর্ব্যবহার করেছে।
নতুন করে ও আর কি দুর্ব্যবহার করবে। গত তিন সপ্তাহ ওর সঙ্গে দেখাই হয়নি। আগে যদিও বা মাঝে মাধ্যে বাড়িতে আসতো। ও এখন মেতে উঠেছে এক নাচনেওয়ালীকে নিয়ে।
–নাচনেওয়ালী! কে সে?
–তার নাম মিরেলী। পেশাদার নাচিয়ে।
–এ খবরটা আমার কানেও গেছে। আমি তাই গত সপ্তাহে লুকোবারীর কাছে এ ব্যাপার নিয়ে কথা বলেছি।
–তিনি কি বললেন?
–আমার সঙ্গে তিনি ভালো ব্যবহার করেছেন। কিন্তু ড্রেক সম্বন্ধে কোনো উচ্চবাচ্য করেননি। বেচারার জন্য আমার কষ্ট হয়।
-বেচারা মানে? কার সম্বন্ধে বলছ কথাটা?
–বলছি লর্ড লুকোবারীর সম্বন্ধে। আমার মনে হল ড্রেক এখন ওকে পাত্তাই দেয় না। জরাগ্রস্থ বৃদ্ধ পিতাকে সে পথের কাঁটা মনে করে।
এ ব্যাপারে তুমি কিছু করতে পার না, বাপি?
–হয়তো পারি। কিন্তু ওর সঙ্গে আমি সম্পর্কই রাখতে চাই না। তুমিও ওর সম্পর্কটা শেষ করে দাও।
–তার মানে?
–ডিভোর্স। হ্যাঁ, ডিভোর্স। যত তাড়াতাড়ি পার ততই ভাল।
–কিন্তু…..
-না রুথ, এর মধ্যে আর কিন্তু নয়। তোমার মনে এখনো ওর জন্যে কিছুটা দুর্বলতা আছে। কিন্তু সে দুর্বলতা তোমাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
কথা বলতে বলতে আলডিন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ও তোমাকে টাকার জন্যে বিয়ে করেছিল। ওর মত স্কাউনড্রেল-ব্রুট এর উপরে আর কোনো টান রাখার দরকার নেই! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে ছাঁটাই কর।
–ও যদি রাজী না হয়?
-রাজী ওকে হতেই হবে। রাজী হওয়ার ব্যবস্থা আমি করব। তুমি এতে রাজী আছ কি? তোমার মত বলল।
–ও যদি কেসটা কনটেস্ট করে?
–না, ও তা করবে না। করতে পারবে না।
–কিন্তু খবরের কাগজে ব্যাপারটা নিয়ে হৈ চৈ পড়বে। কাগজওলাদের আমি ভয় করি।
–ওদের মুখ বন্ধ করার মহৌষধ আমার জানা আছে। সেই মহৌষধটি কয়েকটা ডোজ খাওয়ালেই মুখ বন্ধ।
-বেশ, তুমি যখন বলছ….
–আমি বলছি মানে? তোমার কি সম্মতি নেই না কি?
–না, তা বলছি না। আমার সম্মতি আছে বৈকি।
–এই তো আমার মেয়ের মতো কথা! এতে তোমার ভালোই হবে। এবার দেখ তোমার জন্যে কি জিনিস এনেছি আমি।
পকেট থেকে সেই ভেলভেটের বাক্সটা বার করে রুথকে দিলেন। বাক্সটা খুলেই রুথ বিস্ময়ে আর আনন্দে আত্মহারা হলো। কি সুন্দর! অপূর্ব! এরকম সুন্দর আর এত বড় রুবী আগে কোনোদিন দেখিনি।
–ঠিক বলেছ। এ রত্ন অদ্বিতীয়, অমূল্য। এবার বল, তোমার পছন্দ হয়েছে তো?
–খু-উ-ব! কিন্তু এটা তুমি কিভাবে যোগাড় করলে বাপি?
–সে অনেক কাহিনী। এটা যোগাড় করতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে আমাকে। তাছাড়া এর জন্যে ব্যয় হয়েছে কয়েক লাখ ডলার।
–কয়েক লাখ ডলার! বলো কি!
–ঠিকই বলছি। রুবীটার সত্যিকারের দাম অনেক বেশি। পৃথিবীতে ইতিহাস প্রসিদ্ধ যে কটি মণিমাণিক্য আছে, এটি তারই একটি। এর নাম হার্ট অফ ফায়ার।
হার্ট অফ ফায়ার! রাশিয়ার জারিনা যে রুবীটা গলায় পরতেন?
–হ্যাঁ, এটা সেই রুবীই।
রুথ বাক্স থেকে সেই রুবীটা বের করে বুকের ওপর চেপে ধরল আর খুশীতে ঝলমলিয়ে উঠল ওর মুখ।
–আমাকে এত ভালোবাস, বাপি!
–তোমাকে ভালোবাসব না তো কাকে ভালোবাসব? তুমি আমার চোখের মণি একমাত্র সন্তান। তোমাকে খুশী করতে কোহিনুর পেলে তা কিনতেও রাজী আছি। তোমার মুখে যদি হাসি ফোঁটাতে না পারি তাহলে আমার ধনদৌলতের দাম কি?
এতক্ষণে রুথের মনে হলো যে, তার বাপির বোধহয় খাওয়া হয়নি। এবেলা এখানেই খেয়ে নাও, বাপি।
-না। আমাকে এখুনি যেতে হবে। অনেক জরুরী কাজ পড়ে আছে।
উঠে দাঁড়ালেন আলডিন, আমি এখন যাচ্ছি রুথ। কাল তোমাকে নিয়ে একবার সলিসিটার অফিসে যাব। তুমি তৈরি হয়ে থেকো। সাড়ে বারটায় আসব না হলে ফোন করে দেব।
–বেশ, তাই হবে। কিন্তু
–কিন্তু কি রুথ?
–আমি যে রিভিয়ারায় যাব বলে সব কিছু ঠিক করে ফেলেছি। যাওয়াটা বন্ধ হবে না। তো?