–কি বলছেন স্যার? আমি ঠিকমত শুনতে পাইনি।
–তুমি কি জেগে স্বপ্ন দেখছ? তোমার এরকম অন্যমনস্কতা তো আগে দেখিনি। ও, তুমি এতক্ষণ ঐ মেয়েটির কথা চিন্তা করছিলে!
লজ্জায় মাথা নত করল কিংটন। তা দেখেই বোঝা গেল যে, ক্যাথারিনকে দেখে সে মজেছে।
.
১৯.
টেনিস কোর্টে
কয়েকদিন পরের কথা।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ক্যাথারিন প্রাতঃভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরতেই লেনক্স বলল, তোমার নতুন বন্ধুটি ফোন করেছিল মাসী।
নতুন বন্ধু আবার কে?
–মিঃ আলডিন-এর সেক্রেটারী মিঃ কিংটনের কথা বলছি। বারো বছর আগে যুদ্ধক্ষেত্রে রাইফেলের বুলেটে একবার ঠ্যাং ভেঙেছিল, এবার দেখছি হৃদয় ভেঙেছে অন্য একটি বুলেটে।
-ঠ্যাং ভেঙেছিল মানে?
–উনি তখন সেনাবাহিনীতে চাকরী করতেন, সম্ভবতঃ মেজর ছিলেন। সেই সময় একবার গুরুতর আহত অবস্থায় মায়ের হাসপাতালে ছিলেন বেশ কিছুদিন।
-তোমার মা বুঝি হাসপাতাল খুলেছিলেন?
-হ্যাঁ। আহত সৈনিকদের জন্য একটা একজিলিয়ারী হাসপাতাল খুলেছিলেন মা। আমার তখন আট-নয় বছর হবে।
লেডী টাম্পলিন সেই সময় সেখানে এলেন, তাকে দেখে ক্যাথারিন বলল, মিঃ কিংটন ফোন করেছিলেন শুনলাম। কি বলছিলেন?
-বলছিলেন আজ বিকেলে তুমি টেনিস খেলতে রাজী আছ কি না। রাজী থাকলে তিনি তোমাকে নিয়ে যাবেন।
একথাও বললেন যে, মিঃ আলডিনের নির্দেশেই তিনি ফোন করেছেন।
মায়ের কথার জের টেনে লেনক্স বলল, তোমার তরফ থেকে আমরা কিন্তু আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি। তাকে যথাসময়ে আসতে বলে দিয়েছি।
–সে কি! আমি যাব কিনা, তা না জেনেই বলে দিলে?
–হ্যাঁ, দিলাম। এটা যদি মিঃ কিংটন-এর ব্যক্তিগত নিমন্ত্রণ হতো তাহলে স্বতন্ত্র। নিমন্ত্রণটা মিঃ আলডিন-এর বলে না বলতে পারলাম না। বুড়োর সঙ্গে পরিচয় থাকাটা বিশেষ দরকার।
–আমার, না তোমার?
–উভয়েরই বলতে পার। তার সঙ্গে পরিচিত হতে আমি নিশ্চয়ই চাই।
এই প্রসঙ্গে লেডী টাম্পলিন বললেন, আমিও তো পরিচিত হতে চাই তার সঙ্গে। শুনেছি তিনি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনকুবের। এ রকম লোকের সঙ্গে পরিচয় থাকলে সম্মান বাড়ে।
–এমনিতেই কি তোমার সম্মান কম দিদি?
বলেই সে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে গিয়ে একটা মন্তব্য কানে গেল–”কিংটন-এর সঙ্গে ওকে সুন্দর মানাবে কিন্তু।
লাঞ্চের একটু পরেই কিংটন এসে গেল। গাড়ি থেকে নামতেই লেডী টাম্পলিন তাকে মৃদু হেসে অভ্যর্থনা করল। আসুন মিঃ কিংটন। ক্যাথারিন আপনার জন্যেই অপেক্ষা করছে।
-কোথায়?
–নিচের ড্রয়িংরুমে। আপনি আসুন।
ড্রয়িংরুমে ঢুকে কিংটন দেখল ক্যাথারিন ও লেনক্স গল্প করছে।
লেনক্স বলল, আসুন মঁসিয়ে, এই নিন আপনাদের শিকার।
তার মানে?–কিংটন-এর চোখে বিস্ময়।
–না না। আমি আপনাকে মিন করছি না। আপনাদের কথাটা কিন্তু বহুবচন। কথাটা আমি মিঃ আলডিনকে মিন করেছি।
–আপনি কিন্তু মিঃ আলডিনের ওপর অবিচার করেছেন। তিনি এখন ষাটের কাছাকাছি।
–তাতে কি হয়েছে? টাকার জোর থাকলে বুড়োও যুবক হয়ে যাবে।
-তা যা বলেছেন। মিঃ আলডিনকে দেখলে কেউ বলতে পারবে না যে, তার অত বয়স হয়েছে। দেখলে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশের বেশি মনে হয় না।
–তাহলে তো বিপদের কথা।
–কি রকম?
–ধেড়ে রোগের লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে। বুড়ো বয়সে ধেড়ে রোগ হয় জানেন তো?
-লেনা কি যা তা বলছ। এরকম একজন মানী লোকের সম্বন্ধে সমীহ করে কথা বলতে হয়।–বললেন টাম্পলিন।
-সমীহ করেই তো বলছি। তবে মাসীর ওপরে তার যে রকম টান দেখছি তাতে মনে হচ্ছে …..
-মিঃ আলডিন আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন তাই তো? হ্যাঁ, তিনি আমাকে ভালোবাসেন তার মেয়ের মতো। তাই না মিঃ কিংটন?
-ঠিক বলেছেন। এবার কিন্তু আমাদের বেরিয়ে পড়া দরকার। আর দেরি না করাই উচিত।
ক্যাথারিন বলল, আমি তৈরি হয়েই আছি, চলুন। গাড়িতে দুজনে পাশাপাশি বসল। কিংটন গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, মিঃ পোয়ারোও আসছেন টেনিস লনে।
-তাই নাকি! তাহলে তো মনে হচ্ছে ওখানে টেনিস খেলা ছাড়া অন্য খেলাও চলবে।
-আমারও সেইরকম ধারণা। কারণ মিঃ পোয়ারো কখনও বাজে সময় নষ্ট করে না।
–উনি কি হত্যাকারীকে ধরতে পারবেন বলে মনে হয় আপনার?
–নিশ্চয়ই পারবেন। ওর কর্মদক্ষতার ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। আমার তো মনে হয় উনি কাউন্টের জন্যেই টেনিস লনে আসছেন। কাউন্ট বুদ্ধিমান স্বীকার করলেন না। কিন্তু এবারে ওনার হাত থেকে পিছলে বার হওয়া কঠিন ব্যাপার।
–আপনার তাহলে ধারণা কাউন্টই মাদাম ক্যাথারিন-এর হত্যাকারী?
ধারণা নয় মিস গ্রে–আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, কাউন্টই মাদাম ক্যাথারিনকে হত্যা করেছেন। এবারে ওর হাতে কয়েকদিনের মধ্যেই হাতকড়া পড়বে।
তারা টেনিস লনে এসে পৌঁছল। গাড়ি থেকে নামতেই মিঃ পোয়ারোর সঙ্গে দেখা। তার বেশবাসের ঘটা দেখে ক্যাথারিন বলল, আপনাকে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে এই পোশাকে।
-তাই নাকি! কিন্তু সুন্দর দেখাবার বয়স তো অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছি।-হেসে বললেন পোয়ারো।
–মিঃ আলডিন কোথায় মঁসিয়ে?–কিংটন বলল।
–তিনি তার সীটেই আছেন। লনে ঢুকলেই দেখবে। এই সময় ড্রেক ক্যাথারিনকে আসতে দেখা গেল।
পোয়ারো বললেন, কি আশ্চর্য! মিঃ ক্যাথারিনও এসেছেন।
কিংটন এগিয়ে সাদর সম্ভাষণ জানাল তাকে। প্রতি সম্ভাষণ জানাল ক্যাথারিনও। মিঃ ক্যাথারিন বলল, মিস গ্রেও এসেছেন দেখছি। আপনার দিদিও এসেছেন নাকি?